প্রধান মুরুব্বিকে উপেক্ষা করে বিভক্ত ইলিয়াসি তাবলীগ

    0
    472
    ডেস্ক নিউজঃ  শেষ পর্যন্ত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে গেলো তাবলিগ জামাত। এতদিন তাবলিগের ভারতীয় মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভী গ্রুপ ও হেফাজতপন্থী কওমী আলেমদের মধ্যে বিরোধ, বিক্ষোভ, কাকরাইল মসজিদ দখল-পাল্টা দখল ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে আসছিলো।
    শেষ পর্যন্ত গতকাল তাবলিগ জামায়াতের এক জোড় (সম্মেলন) থেকে কওমী মাদ্রাসার উলামা মাশায়েখরা মাওলানা সা’দকে নিষিদ্ধ করলো। একই সাথে নতুন ধারার কোনো তাবলিগ না আসতে দেওয়াসহ ছয়টি সিদ্ধান্ত ঘোষণা করলেন তারা। বাংলাদেশের কোনো জামাত বা ব্যক্তিকে দিল্লির নেযামুদ্দিনে পাঠানো বা যাওয়ারও বিরোধিতা করেন তারা।
    হেফাজত ইসলামীর আমির মাওলানা শাহ আহমদ শফীর নেতৃত্বে তাবলিগ জামাত নিয়ে সারাদেশের কওমি আলেমদের পরামর্শ সম্মেলন (ওয়াজাহাতি জোড়) অনুষ্ঠিত হয় রাজধানীর মোহাম্মদপুরের কবরস্থান মাঠে। বৃষ্টি উপেক্ষা করে মাঠের চারপাশে প্রায় ১ কিলোমিটার ব্যাপী ধর্মপ্রাণ মানুষের উপস্থিতি দেখা গেছে। এই সম্মেলন থেকে তাবলিগের বিশ্ব মারকাজ দিল্লির নেজামুদ্দিনের মুরব্বি মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বিরুদ্ধে সম্মিলিতভাবে অবস্থান ঘোষণা করা হয়। এই সম্মেলন বয়কট করেন তাবলিগের মাওলানা সা’দ কান্ধলভিপন্থি বাংলাদেশে কাকরাইল মারকাজের শুরা সদস্যরা। এমনকি কওমীপন্থি সুরা সদস্যরাও হাজির হননি সম্মেলনে।
    জানা যায়,কাকরাইল মারকাজে শুরা সদস্য রয়েছেন ১১ জন। এর মধ্যে সা’দ কান্ধলভির পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন মাওলানা মোজাম্মেল হক, প্রকৌশলী সৈয়দ ওয়াসিফুল ইসলাম, খান সাহাবুদ্দিন নাসিম, মাওলানা মোশাররফ হোসেন, ইউনুস শিকদার ও  শেখ নুর মোহাম্মদ। অন্যদিকে মাওলানা সা’দ কান্ধলভির বিরোধী অবস্থানে রয়েছেন মাওলানা যোবায়ের, মাওলানা রবিউল হক, মাওলানা মোহাম্মদ হোসেন ও মাওলানা ওমর ফারুক। তবে এই দু’পক্ষের বিরোধের মধ্যে নেই মাওলানা মোহাম্মদ ফারুক।
    এদিকে সাদ পন্থিরা আল্লামা শফির নেতৃত্বে সম্মেলনের সিদ্ধান্ত নিয়ে কোন মন্তব্য করা থেকে বিরত রয়েছেন। তারা বলছেন, মাওলানা সাদ এর সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত জানান হবে।
    জানা গেছে, ইতোমধ্যে দারুল উলুম দেওবন্দ থেকে ফতোয়া দেওয়া হয়েছে মাওলানা সা’দ এর বিরুদ্ধে। তার আকিদার ভ্রান্তি ও ত্রুটির কথা তুলে ধরা হয়েছে। এদিকে তাবলিগের এই বিভক্তির বিবাদে দিল্লী-লাহোর-ঢাকা জড়িয়ে পড়ার কারণে বিশ্বজুড়েই এর প্রভাব পড়বে বলে জানিয়েছেন তাবলিগ জামায়াতের সাথিরা।
    গতকালের সম্মেলনে সারাদেশ থেকে তাবলিগ কর্মী ও কওমি মাদ্রাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। উপস্থিত ছিলেন তাবলিগের দ্বিতীয় সারির মুরব্বিরা। আল্লামা শফির সভাপতিত্বে সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন জামিয়া শরইয়্যাহ মালিবাগ মাদ্রাসার প্রিন্সিপাল আল্লামা আশরাফ আলী, জামিয়া বারিধারার মুহতামিম আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী, মারকাজুদ দাওয়ার আমিনুত তালিম মুফতি আবদুল মালেক, কিশোরগঞ্জ জামিয়া ইমদাদিয়ার মুহাতামিম আল্লামা আজহার আলী আনোয়ার শাহ, ফরিদাবাদ মাদ্রাসার মুহতামিম মাওলানা আবদুল কুদ্দুস, লালবাগ জামিয়ার মুহাদ্দিস মুফতি ফয়জুল্লাহ, বসুন্ধরা ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের প্রধান মুফতি এনামুল হক, শাহ আহমদ শফী ছেলে মাওলানা আনাস মাদানী প্রমুখ।
    গতকাল সম্মেলনে ছয়টি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। জোড় শেষে উলামায়ে কেরামের সম্মিলিত সিদ্ধান্তে সবাই একমত পোষণ করেন। আল্লামা শাহ আহমদ শফীর বয়ান ও দোয়ার মাধ্যমে দুপুর ১টায় জোড় শেষ হয়।
    নতুন তাবলিগ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর মতো : আল্লামা শফি
    সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে হাটহাজারী মাদ্রাসার মহাপরিচালক ও হেফাজত আমির শাইখুল হাদিস আল্লামা শাহ আহমদ শফী বলেন, তাবলিগ কার কথা মোতাবেক চলবে, কারা চালাবে? তিনজন মুরুব্বি মাওলানা ইলিয়াস, মাওলানা এনামুল হাসান ও মাওলানা ইউসফ যে উসুলে শরিয়াহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন ঠিক কেয়ামত পর্যন্ত ওই উসুলই চলবে। আর কেউ যদি এখানে নাক গলাইতে আসে তাদের মানবেন না। তিনি বলেন, রাসূলের সুন্নত মোতাবেক আমল করবেন। নতুন মাযহাব যারা বানাচ্ছে তাদের কথা মানবেন না। এখন সালাফি, গায়রে মুকাল্লিদ কত রকমের ফেরকা বের হচ্ছে দিনদিন। এরকম তাবলিগের মধ্যেও একটা নতুন তাবলিগ হচ্ছে জামায়াতে ইসলামীর মতো। কোনও বেশ-কম নাই। জামায়াতে ইসলামীর এখন নামগন্ধও নাই।সুত্রঃইত্তেফাক