প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ নজরে চা-বাগানে জ্বলে উঠেছে শিক্ষার আলো

    0
    222

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪মার্চ,শিমুল তরফদারঃ একজন চা শ্রমিকের স্বপ্নের মধ্যেও ছিলো না তার ছেলে-মেয়ে স্কুলে পড়বে শিক্ষার আলোয় শিক্ষিত হয়ে দেশ সেবায় নিয়োজিত হবে। আর হাওর পাড়ের একটি জেলে পরিবারের কর্তা ব্যাক্তির ধারণা ছিলো আমার ছেলে আমার চেয়ে আরও বেশি মাছ ধরায় পটু হবে। এ দুই শ্রেণীর  ছেলে মেয়েরা শৈশব থেকেই বিদ্যালয়ের পরিবর্তে শিক্ষা নিতো চা বাগানের কাজ ও মাছ ধরার কাজে। এই অবস্থায় ওই এলাকায় শিক্ষার হার বাড়বে ভাবাই যেতো না, এটাকে অসম্ভব বলেই ধরে নিয়েছিলেন সেখানকার মানুষ। কিন্তু এই অসম্ভবকেই সম্ভব করে এখন চা বাগান গুলোতে জ্বলে উঠছে শিক্ষার আলো। দুর হচ্ছে অন্ধকার।

    কয়েক বছর আগে যখন এ উপজেলায় স্কুলগামী শিক্ষাথীর সংখ্যা ছিলো প্রায় ৬০ ভাগ তা এখন বেড়ে দাড়িয়েছে প্রায় শতভাগ। আর এই বিশাল পরিবর্তন এসেছে বিগত ৫/৬ বছরে। অবিশ্বাস্যভাবে পরিবর্তন এর জন্য বর্তমান শিক্ষা বান্ধব সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের কারণে  হয়েছে। আর তা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিশেষ নজরে এ এলাকার চা বাগান গুলোতে ৩৮টি নতুন বিদ্যালয় স্থাপনের মাধ্যমে। কয়েক বছর আগেও যে ছেলে মেয়েরা স্কুলের পরিবর্তে সময় কাটতো গো-চারণে কিংবা হাইল হাওরে খাল-বিলে আজ তারা বিদ্যাপিঠে।

    কয়দিন আগেও যখন এক শ্রেণীর নতুন প্রজন্মের ভবিষ্যত ছিলো অনিশ্চিত আজ তারা স্বপ্ন দেখছে দেশ গড়ার কারিগর হওয়ার। তিন দিকে পাহাড় আর একদিকে হাওর বেষ্টিত শ্রীমঙ্গল উপজেলার শিক্ষার হার ছিলো অনেক নিচে। স্কুলগামী ছাত্রের চেয়ে ঝরে পড়ার হারই ছিলো বেশি। এর প্রধান কারণ ছিলো শ্রীমঙ্গলের ভু-খন্ডের ৫৫ ভাগই চা বাগান অধ্যুষিত অন্যদিকে হাওর পাড়ে বিশাল এক জনগোষ্ঠি বরাবরই ছিলো অবহেলিত। তাদের প্রধান অন্তরায় ছিল বিদ্যালয় সংকট, অনুন্নত রাস্তাঘাট। জেনারেশন বাই জেনারেশেনই ছিলো শিক্ষার আলো বি ত।

    অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০১০ সালে শ্রীমঙ্গলে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ছিলো ৬৬টি। আর ২০১৩- সালে এর সংখ্যা দাড়িয়েছে ১৩৮টি। কিছু বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় জাতীয় করণের পাশাপাশি শ্রীমঙ্গলের প্রত্যেকটি চা বাগানে একটি করে ও স্কুল বিহিন গ্রামে একটি করে সম্পুর্ণ নতুন স্কুল স্থাপন করে তা জাতীয়করণ করা হয়। আর সে সময় সরকারী শিক্ষকের সংখ্যা প্রায় সাড়ে ৩শ থেকে বেড়ে বর্তমানে সরকারী শিক্ষকের সংখ্যা ৭০৪ জন। এর ফলে শিক্ষার আওতায় এসেছে প্রায় ১০ হাজার ঝরে পড়া শিক্ষার্থী।

    উপজেলা শিক্ষা অফিস ও প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির এক জরিপে উঠে আসে ২০১০ সালে শ্রীমঙ্গলে ঝরে পড়া শিশুর সংখ্যা ছিলো ৮ হাজার ১৩ জন। যা প্রতিবছরই বৃদ্ধি পেতো। ২০১০ সালে প্রাথমিক বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩০ হাজারের নিচে আর বর্তমানে বিদ্যালয়গামী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৫ হাজারের উপরে।

    শ্রীমঙ্গল উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো: মোশারফ হোসেন এর পরিবর্তনের মুল কারন হিসেবে জানান, বর্তমান সকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিক্ষা নীতি এবং শিক্ষা ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া। বাংলাদেশের ইতিহাসে একসাথে এতো বিদ্যালয় কোন সরকার জাতীয়করণ করতে পারেনি। আর ভবিষ্যতেও পারবেনা। জাতীয়করণকৃত ও রেজিষ্টার্ড বে-সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শতভাগ ছাত্র ছাত্রীকে দেয়া হচ্ছে উপবৃত্তি। বছরের প্রথম দিনেই তাদের হাতে দেয়া হয় নতুন বই। প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষার জন্য আলাদা কক্ষ, আলদা শিক্ষক, শিশুতোষ শিক্ষা উপকরণ দেয়া হয় প্রতিবছর।

    প্রতিটি বিদ্যালয়কে দৃষ্টি নন্দন করে রাখার জন্য প্রত্যেক বছরই ৪০ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। যার মাধ্যমে বিদ্যালয় রঙ্গিন করা, ফুল বাগান সৃষ্টি, শহীদ মিনার তৈরী ও পরিচর্যা করা হয়। । প্রতি ৩ বছরে প্রত্যেক বিদ্যালয়ে মেরামতের জন্য একটি বরাদ্ধ দেয়া হয় ৫০ হাজার থেকে দেড় লক্ষ টাকা। এছাড়াও পরিচ্ছন্নতার জন্য গতবছর  প্রত্যেক বিদ্যালয়ে দেয়া হয়েছে ৫ হাজার টাকা। প্রত্যেক বিদ্যালয়েই সরকার নিয়োগ দিয়েছে একজন নৈশ প্রহরী। শিক্ষা অফিসে দেয়া হয়েছে কয়েকটি মটর সাইকেল।

    এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মোবাশশেরুল ইসলাম জানান, শ্রীমঙ্গলের প্রাথমিক শিক্ষার অবস্থা খুবই ভালো। ঝরে পড়ার সংখ্যা নেই বললেই চলে। শিক্ষকরাও খুব আন্তরিকতার সহিত ছাত্রদের পাঠদান করান। এর ফলাফল হিসেবে তিনি বলেন, শ্রীমঙ্গলের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্টান থেকে এসেছে জাতীয় পর্যায়ের কৃতিত্ব।

    শ্রীমঙ্গল প্রাথমিক স্কুলগুলোতে সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্কুলগুলোতে লেগেছে বাহারী রং এর ছোঁয়া। পুরো বিদ্যালয়ে ভিতর বাহিরে দেয়ালে বিভিন্ন রং দিয়ে পেইন্ট করা হয়েছে। এর উপর অঙ্কন করা হয়েছে বিভিন্ন আল্পনা, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ বিভিন্ন মুনি ঋষিদের বাণী। স্কুলের সামনে রয়েছে মনোরম ফুলের বাগান ও শহীদদের শ্রদ্ধা জানানোর জন্য একটি শহীদ মিনার।

    উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মোশারফ হোসেন আরো জানান, দেশের অন্য যে কোন উপজেলার চেয়ে শ্রীমঙ্গল উপজেলার শিক্ষার চিত্র অনেক ভালো। ২০১৬ সালে শ্রীমঙ্গলে প্রাথমিক সমাপনি পরীক্ষায় পাসের হার ছিলো ৯৯.২৯%। তবে তিনি এর জন্য প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর পাশাপাশি শ্রীমঙ্গল-কমলগঞ্জ নির্বাচনী এলাকার সংসদ সদস্য উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদকে ধন্যবাদ জানান। তিনি জানান তাঁর ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বিদ্যালয় স্থাপন, ভুমি জটিলতা ও নতুন ভবন পাওয়া গেছেএবং খুব শীঘ্রই বিদ্যালয়গুলোতে মিডডে মিল এর ব্যবস্থা করবেন।

    এ ব্যাপারে জাতীয় সংসদের সাবেক চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আব্দুস শহীদ এমপি জানান, তার এলাকা শিক্ষা ক্ষেত্রে অনেকটা পিছিয়ে ছিল। তিনিও মনে প্রাণে শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নতি হোক তা চান। এ জন্য তিনি প্রত্যেকটি চা বাগানে একটি করে সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য সংসদে প্রস্তাব উত্থাপন করেছেন।