প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাব ধরেই সমাধানের সূত্রঃ এমপি মেনন

    0
    224

    আমার সিলেট  24 ডটকম,২০অক্টোবরওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি কমরেড রাশেদ খান মেনন এমপি বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক বক্তৃতায় নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা সম্পর্কে যে প্রস্তাব দিয়েছেন, তা সমঝোতার পথকেই প্রশস্ত করবে। এই প্রস্তাব ধরেই সমাধানের সূত্র বের হতে পারে। ঐ প্রস্তাবে যা কিছু অস্পষ্টতা আছে, রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাকে আরো সুনির্দিষ্টভাবে স্পষ্ট করা যেতে পারে। সেই লক্ষ্যে সরকার, প্রধান বিরোধী দলসহ সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপ আয়োজন গুরুত্বপূর্ণ। একটি শান্তিপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরি এবং তা এখনও সম্ভব।

    আজ ২০ অক্টোবর সকাল ১১টায় বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয় সংলগ্ন শহীদ আসাদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে কমরেড মেনন একথা বলেন।সংবাদ সম্মেলনে কমরেড রাশেদ খান মেনন লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন পার্টির পলিটব্যুরো সদস্য কমরেড বিমল বিশ্বাস, নুরুল হাসান, শফিউদ্দিন আহমেদ, হাজেরা সুলতানা, কামরূল আহসান, কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য আলী আহমেদ এনামুল হক এমরান প্রমুখ।

    সংবাদ সম্মেলনে রাশেদ খান মেননের বক্তব্য :

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

    আপনারা আমার অভিনন্দন গ্রহণ করুন।দশম জাতীয় সংসদের নির্বাচন সমাসন্ন। সংবিধান অনুযায়ী আগামী ২৫ অক্টোবর থেকে ২৪ জানুয়ারির ৯০ দিনের সময়সীমার মধ্যে তা সম্পন্ন করতে হবে। সে অনুযায়ী আগামী ২৫ অক্টোবরের পর থেকে নির্বাচনের দিনগণনা শুরু হবে।সংসদীয় গণতন্ত্রে নির্বাচন একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। আমাদের সংবিধান অনুযায়ী দেশের জনগণ প্রতি ৫ বছর অন্তর ভোট প্রদান করে সংসদ ও সরকার গঠন করতে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচন করেন। কিন্তু বর্তমান নির্বাচন কেবলমাত্র সরকার গঠন ও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত নয়, এর সাথে বাংলাদেশের অস্তিত্বের মূল ভিত্তির প্রশ্ন জড়িয়ে গেছে। বাংলাদেশের অস্তিত্বের এই মৌল ভিত্তি হচ্ছে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শাসন যা দীর্ঘ সংগ্রামের পর ২০০৮ সালের নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছিলাম। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে পঁচাত্তর-পরবর্তী দীর্ঘ অসাংবিধানিক শাসনের অবসান ঘটলেও বিএনপি’র বিশ্বাসঘাতকতায় তিন জোটের রূপরেখা অনুযায়ী মুক্তিযুদ্ধের ধারায় দেশ পরিচালিত হয় নি। বরং ২০০১-২০০৬ সালে বিএনপি-জামাত জোট শাসনে বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িকতা-মৌলবাদের অতল অন্ধকারে পতিত হয়। দেশে জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটে। বিএনপি-জামাতের ঐ শাসনের বৈশিষ্ট ছিল বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধবিরোধী যুদ্ধাপরাধীদের শাসনক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া। তাদের গাড়িতে-বাড়িতে বাংলাদেশের পতাকা তুলে দেওয়া। বিএনপি-জামাত জোটের দুর্নীতি-দুর্বৃত্তায়ন-জঙ্গিবাদী উত্থান ও দুঃশাসন এবং ১/১১-পরবর্তী সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এ দেশের জনগণ ২০০৮ সালে দেশে অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে মহাজোটের পক্ষে রায় প্রদান করে। বিগত পৌনে পাঁচ বছরে সংবিধানের অবৈধ পঞ্চম সংশোধনী বাতিল করে কিছু ব্যত্যয় সত্বেও সংবিধানের চার মূলনীতির পুনঃস্থাপন করা হয়েছে। যুদ্ধাপরাধের বিচারসহ সকল অপরাধমূলক তৎপরতার বিচার হয়েছে এবং হচ্ছে। বাংলাদেশ আবার অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক ভিত্তিভূমির উপর নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে সামনের দিকে এগিয়ে চলেছে।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

    বিগত পৌনে পাঁচ বছরে বাংলাদেশ রাষ্ট্রকে তার মৌলভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি দেশ শাসনের ক্ষেত্রে শিক্ষা, কৃষি, স্বাস্থ্য, সামাজিক নিরাপত্তা, দারিদ্র্য হ্রাস, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, জাতীয় প্রবৃদ্ধির উচ্চ হারসহ অর্থনৈতিক সূচকসমূহ উর্ধমুখী। অন্যদিকে শেয়ারবাজার কেলেংকারী, হলমার্ক-ডেসটিনি কেলেংকারী, দুর্নীতির অভিযোগের কারণে পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে না পারা, গার্মেন্টস শিল্পে শ্রমিকদের মজুরি ও নিরাপত্তা বিধান করতে না পারা, ধান-পাটের মূল্য না পাওয়া, সাগর-রুনি-ইলিয়াস আলীসহ বিভিন্ন হত্যা-গুমের সমাধান না হওয়া, সন্ত্রাস-দুর্নীতির নানা ঘটনা এই শাসনামলকে কলংকিত করেছেÑ জনগণ যার প্রতিবিধিান কামনা করেছেন। কিন্তু এই সব বিফলতা সত্বেও বর্তমান নির্বাচনের সামনে মুখ্য প্রশ্নÑ বহু সংগ্রাম ও ত্যাগ-তিতিক্ষার বিনিময়ে অর্জিত মুক্তিযুদ্ধের মূল ধারা অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক শাসন অব্যাহত থাকবে কিনা।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

    গত বছরগুলোতে বিশেষ করে গত দেড় বছরাধিককাল ধরে যুদ্ধাপরাধের বিচারকে কেন্দ্র করে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর আক্রমণের মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টি করা, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপর সহিংস আক্রমণ পরিচালনা, আস্তিক-নাস্তিক বিভাজন এবং সর্বশেষ হেফাজতীদের তাণ্ডবের যে ঘটনা ঘটেছে, তাতে বাংলাদেশ রাষ্ট্র ও সমাজের অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক কাঠামো চরম বিপদের মুখে। বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচনের প্রশ্নকে সামনে রেখে এ সকল ঘটনাকে সমর্থনই করে নাই কেবল, ক্ষেত্রবিশেষে উস্কে দিয়েছে। বর্তমানে বিএনপি’র নেতৃত্বে জামাত-হেফাজতসহ প্রতিক্রিয়ার সকল শক্তি এক মেরুতে দাঁড়িয়ে। সামনের নির্বাচনে এই শক্তি ক্ষমতায় আসলে কেবল বাংলাদেশের ক্ষেত্রেই নয়, সমগ্র দক্ষিণ এশিয়ায় বিপর্যয় ঘটবে। বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, সহিংস রাজনৈতিক প্রতিশোধ, সকল প্রকার মুক্তবুদ্ধি ও চেতনার অবসান, নারীর ক্ষমতায়নসহ নারীর ন্যূনতম অধিকার হরণ, ক্রস-বর্ডার টেররিজমসহ জঙ্গিবাদের উত্থান ঘটবে। আমরা দেশবাসীকে এ বিষয়ে অতীতেও সতর্ক করেছি এবং এখনও করছি।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

    আমরা পুনরায় দ্ব্যর্থহীনভাবে বলতে চাই, দশম সংসদ নির্বাচনে দুই দল বা জোটের মধ্যে একটিকে বেছে নেওয়া বা কেবল সরকার পরিবর্তনের প্রশ্ন নয়, দেশকে জঙ্গিবাদী, দুর্নীতি, দুর্বৃত্তায়ন, দুঃশাসনের পরিণতিতে নিয়ে যাব, নাকি অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক মুক্তিযুদ্ধের ধারা অব্যাহত রাখবÑ জনগণকে সে ব্যাপারেই স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এখানে সমদূরত্ব গ্রহণেরও কোনো অবকাশ নেই। বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি অতীতের মতো শেষোক্ত বিকল্প বেছে নিতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছে এবং সেই লক্ষ্যে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সকল বাম প্রগতিশীল, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল, শ্রেণী-পেশা-সামাজিক সংগঠনকে ঐক্যবদ্ধ কার্যক্রম গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছে।

    প্রিয় সাংবাদিক বন্ধুগণ,

    আমরা এই রাজনৈতিক বাস্তবতার প্রেক্ষাপটেই নির্বাচন সম্পর্কে সকল প্রকার অনিশ্চয়তা দূর করা ও একটি বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য নির্বাচনকালীন অন্তবর্তী সরকারের রূপরেখা, তার ক্ষমতার পরিধি ও প্রশাসনিক বিন্যাস সুনির্দিষ্টকরণের দাবি জানিয়ে এসেছি। আমরা সাথে সাথে নির্বাচনকালীন সময়ে স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, স্থানীয় সরকার ও অর্থ মন্ত্রণালয় নির্বাচন কমিশনের হাতে প্রদান ও নির্বাচনের লেভেল প্লেয়িং ফিল্ডের জন্য সংসদ ভেঙ্গে দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য আহ্বান জানিয়ে এসেছি। প্রধানমন্ত্রী তার সাম্প্রতিক বক্তৃতায় নির্বাচনকালীন অন্তর্বর্তী সরকারের রূপরেখা সম্পর্কে একটি প্রস্তাব দিয়েছেন। আমরা মনে করি, তার এই প্রস্তাব সমঝোতার পথকেই প্রশস্ত করবে। এই প্রস্তাব ধরেই সমাধানের সূত্র বের হতে পারে। ঐ প্রস্তাবে যা কিছু অস্পষ্টতা আছে, রাজনৈতিক দলসমূহের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তাকে আরো সুনির্দিষ্টভাবে স্পষ্ট করা যেতে পারে। আমরা সেই লক্ষ্যে সরকার, প্রধান বিরোধী দলসহ সকল রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপের উপর গুরুত্ব আরোপ করছি। ওয়ার্কার্স পার্টি মনে করে, একটি শান্তিপূর্ণ অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য সংলাপের মাধ্যমে সমঝোতায় পৌঁছানো জরুরি এবং এখনও সম্ভব।সকলকে আন্তরিক ধন্যবাদ।