প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্রসচিবকে নোটিশ

    0
    436

    আগাম বার্তা থাকা সত্ত্বেও সরকার সময়মতো প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থানে জামায়াত-শিবির নির্বিঘ্নে সহিংসতা চালিয়েছে। এই ব্যর্থতার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে দায়ী করে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়।
    সরকারের দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, ১৩ মার্চ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বরাষ্ট্রসচিব সি কিউ কে মুসতাককে এ নোটিশ দেওয়া হয়। তাঁকে সাত দিনের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়েছে। সাত দিন শেষ হয়েছে গতকাল বৃহস্পতিবার। এখন পর্যন্ত নোটিশের জবাব প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছায়নি।
    এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘একের পর এক ঘটনা ঘটছে, হরতালে সহিংসতা হচ্ছে। আমরা এসব সামাল দেব, নাকি শোকজের জবাব দেব।’
    সরকারি সূত্র জানায়, জামায়াতের নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় হওয়ার আগেই সরকারের অন্তত তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা জামায়াত-শিবির নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালাতে পারে বলে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আগাম সতর্কতামূলক বার্তা দেয়। বিশেষ করে প্রতিরক্ষা গোয়েন্দা মহাপরিদপ্তর ডিজিএফআই, জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআই এবং পুলিশের বিশেষ শাখা এসবি সরকারকে এ বার্তা দেয়।
    ২৮ ফেব্রুয়ারি সাঈদীর মামলার রায় হয়। এর আগে ১৩ ও ১৯ জানুয়ারি দুটি গোয়েন্দা প্রতিবেদনে রায়ের প্রতিক্রিয়ায় জামায়াত-শিবির কী ঘটাতে পারে, তা জানানো হয়। এমনকি ২০ ফেব্রুয়ারিও সরকারকে একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা সতর্ক করে দেয়। এসব প্রতিবেদনে নোয়াখালী, চট্টগ্রামের বাঁশখালী ও সাতকানিয়া, সাতক্ষীরা, রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় সহিংসতা হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। জামায়াতের আয়োজনে স্থানীয়ভাবে ওয়াজ মাহফিল করে জিহাদের ডাক দেওয়ার প্রস্তুতির কথাও বলা হয় প্রতিবেদনে।
    প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সূত্র জানায়, সাঈদীর মামলার রায়ের দুই দিন আগেও জামায়াত-শিবিরের নাশকতার ব্যাপক প্রস্তুতির কথা জানিয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য একটি গোয়েন্দা সংস্থা সরকারকে প্রতিবেদন দেয়। এসব প্রতিবেদনের সূত্র ধরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে নির্দেশনা দেওয়া হয়। কিন্তু স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রস্তুতিমূলক কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।
    এ সুযোগে সাঈদীর মামলার রায় ঘোষণার দিন থেকে শুরু করে দেশের ২৫টি উপজেলায় তাণ্ডব চালায় জামায়াত-শিবির। হামলা হয় মন্দিরে। আক্রান্ত হয় অনেক সংখ্যালঘু পরিবার। জামায়াত-পুলিশ সংঘর্ষসহ রাজনৈতিক সহিংসতায় গত ২৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত প্রাণ হারান পুলিশসহ ৮২ জন।
    এদিকে একটি গোয়েন্দা সংস্থা জামায়াত-শিবিরের নতুন পরিকল্পনা সম্পর্কে সরকারের শীর্ষ পর্যায়ে আরেকটি প্রতিবেদন দিয়েছে। এতে বলা হয়, সাম্প্রতিক সহিংসতায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত জামায়াত-শিবিরের কর্মীদের নাম-ঠিকানা প্রকাশ করে তারা পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেবে। যেসব জায়গায় সহিংসতা হয়েছে, সেসব স্থানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা করারও প্রস্তুতি নিচ্ছে জামায়াত। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াতের সাজাপ্রাপ্ত নেতাদের আপিল মামলা পরিচালনার জন্য আন্তর্জাতিক পর্যায়ের একজন আইনজীবী নিয়োগ করার কথাও ভাবছে তারা। মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম রাষ্ট্রগুলোয় যাতে বাংলাদেশ থেকে কোনো শ্রমিক না নেয়, সে জন্য জামায়াতের পক্ষ থেকে তদবির করা হবে।
    গোয়েন্দা প্রতিবেদনে আগাম ব্যবস্থা হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে যোগাযোগ বাড়াতে, ধর্মীয় অপপ্রচারের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও কৌশলী হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।