প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় সুনামগঞ্জবাসির স্বপ্নের পদ্মা সেতুসহ জেলার ১৭টি সেতু

0
250

নূরুজ্জামান ফারুকী,বিশেষ প্রতিনিধিঃ বৃহত্তর সিলেট বিভাগের সুনামগঞ্জ জেলার জগন্নাথপুর উপজেলার রাণীগঞ্জ সেতু নির্মাণের মধ্য দিয়ে খুলতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের সাথে যোগাযোগে স্বপ্নের দুয়ার।

নির্মাণকাজ শেষে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের অপেক্ষায় রয়েছে ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সেতুটি। সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম এই সেতুটি উদ্বোধনের পর পরই সুনামগঞ্জ থেকে সরাসরি হবিগঞ্জ হয়ে ঢাকার সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যমে সৃষ্টি হবে এক নতুন অধ্যায়।

জানা গেছে, কুশিয়ারা নদীর ওপর ২০১৭ সালে নির্মাণকাজ শুরু হওয়া সিলেট বিভাগের সবচেয়ে বড় রাণীগঞ্জ সেতু আগামী ৭ নভেম্বর ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এর মধ্য দিয়ে স্বপ্ন পূরণ হবে সুনামগঞ্জের ২৫ লাখ মানুষের। উদ্বোধনের মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সুনামগঞ্জের দূরত্ব কমবে ৫৫ কিলোমিটার। সাশ্রয় হবে প্রায় দুই ঘণ্টার বেশি সময়। দূর হবে দীর্ঘ দিনের ফেরির ভোগান্তি। সহজ হবে পণ্য পরিবহন। হাওর জেলা সুনামগঞ্জে উৎপাদিত মাছ ও ফসল দ্রুত কম খরচে পৌঁছানো যাবে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য জায়গায়। সড়ক যোগাযোগের পাশাপাশি উন্নত হবে সুনামগঞ্জের অর্থনীতি।

স্থানীয়রা বলছেন, তাদের দীর্ঘ দিনের দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে। এই সেতুর মাধ্যমে তাদের অর্থ, সময় বাঁচবে। আগে ফেরির জন্য ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হতো। শিক্ষার্থীরা ঠিক সময়ে স্কুল-কলেজে পৌঁছাতে পারত না। রোগীকে হাসপাতালে নিতে ভোগান্তি পোহাতে হতো। এই সেতুর মাধ্যমে পুরোপুরি ভোগান্তি মুক্ত হবে তারা। পাশাপাশি রাজধানী যেতে এখন আর সিলেট ঘুরে যেতে হবে না। হবিগঞ্জ হয়ে সরাসরি ঢাকা পৌঁছাতে পারবে। রাণীগঞ্জ দিয়েই চলবে সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের যোগাযোগ রক্ষাকারী গণ ও পণ্য পরিবহন।

সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-দক্ষিণ সুনামগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য ও পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, “সেতুটি সুনামগঞ্জের সড়ক যোগাযোগের ক্ষেত্রে নবদিগন্তের সূচনা করবে। স্থানীয় বাসিন্দারা এর সুফল ভোগ করবেন। ফলে হাওর অধ্যুষিত সুনামগঞ্জের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে গতিশীলতা আসবে।”

তবে উদ্বোধন হলেও সেতুর পুরোপুরি সুফল এখনই ভোগ করা যাবে না। গলার কাটা হয়ে দাঁড়িয়েছে সুনামগঞ্জ থেকে রাণীগঞ্জ সড়কের দুটি বেইলি সেতু। সংকুচিত হওয়ায় সেতু দুটি দূরপাল্লার যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী। এছাড়া অপ্রশস্ত সুনামগঞ্জ-জগন্নাথপুর আঞ্চলিক সড়কে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হলে এই সড়ক হয়ে উঠবে দুর্ঘটনাপ্রবণ অন্যতম একটি এলাকা।

যোগাযোগ কারীদের সূত্রমতে , দেশের উত্তর-পূর্ব প্রান্তের শেষ জেলা সুনামগঞ্জ থেকে রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ দীর্ঘদিন ধরে সিলেট নগরী হয়ে যেতে হয়। ১৯৯৮ সালে এ সড়ক যোগাযোগ সহজ করতে সুনামগঞ্জের পাগলা-জগন্নাথপুর-আউশকান্দি আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজ শুরু হয়। সাবেক জাতীয় নেতা আব্দুস সামাদ আজাদের প্রচেষ্টায় কাজ শুরু হলেও ২০০১ সালে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় এসে সড়কের কাজ বন্ধ করে দেয়। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় আসার পর স্থানীয় সংসদ সদস্য ও বর্তমান পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানের প্রচেষ্টায় আবারও সড়কের কাজ শুরু হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করে সড়কের ৫২ কিলোমিটার অংশের কাজ শেষ করা হয়।

জগন্নাথপুর উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান বিজন কুমার দেব জানান, “রানীগঞ্জ সেতু সুনামগঞ্জের উন্নয়নের দুয়ার খুলে দেবে। এটি সুনামগঞ্জবাসীর কাছে পদ্মা সেতুর মতো। স্বপ্নের দৃশ্যমান এ সেতু এখন বাস্তবায়নের পথে।”

সুনামগঞ্জ সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর (সওজ) সূত্র থেকে জানা যায়, ১৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু প্রকল্পের কাজ বাস্তবায়ন করে এমএম বিল্ডার্স এন্ড কোম্পানি। ২০১৮ সালের ডিসেম্বর মাসে সেতুর কাজ শেষ করার কথা থাকলেও করোনাভাইরাস পরিস্থিতির কারণে কাজ বন্ধ ছিল কিছুদিন।

সেতুর কাজ বাস্তবায়নের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপক হারুণ রশীদ জানান, চায়না কোম্পানি করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে কাজ বন্ধ করে চলে যাওয়ায় সময়মতো সেতুর কাজ শেষ করা যায়নি। পরে আমরা সেতুর কাজ বাস্তবায়ন করি। এই সেতুতে বক্স গার্ডারসহ ১৫টি স্প্যান ও ১২টি পিলার রয়েছে।

জানা যায়, ২০০৩ সালে ধলাই সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। ২০০৬ সাল থেকে এখন পর্যন্ত সিলেট বিভাগের দীর্ঘতম সেতু ছিল কোম্পানীগঞ্জের ধলাই সেতু (দীর্ঘ ৪৩৪.৩৫ মিটার)। নবনির্মিত রানীগঞ্জ সেতু দৈর্ঘ্যরে দিক দিয়ে এ সেতুরও রেকর্ড ভাঙ্গলো।

সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আশরাফুল ইসলাম প্রামানিক বলেন, ‘আগামী ৭ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী সারা দেশের ১০০টি সেতু উদ্বোধন করবেন। এর মধ্যে রাণীগঞ্জ সেতুসহ সুনামগঞ্জের ১৭টি সেতু উদ্বোধন হবে। এতে সুনামগঞ্জের সঙ্গে ঢাকার দূরত্ব ৫৫ কিলোমিটার কমবে। সুনামগঞ্জ থেকে রাণীগঞ্জ সড়কে যে দুটি সরু বেইলি সেতু রয়েছে সেগুলো ভেঙে নির্মাণ করার জন্য প্রক্রিয়া চলমান আছে। যে কোনো দিন কার্যাদেশ আসতে পারে।”