পীরগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে বেপরোয়া অনিয়ম ও দূনীর্তি

    0
    228

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,০৯মে,গীতিগমন চন্দ্র রায়,পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) প্রতিনিধি: ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জে সরকারি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট আর অনিয়ম ও দূর্নীতির কারণে ঠাকুরগাওয়ের পীরগঞ্জে চিকিৎসা সেবা থেকে পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ। সম্প্রতি উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা সেবা নিয়ে হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় এসব অভিযোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। অভিযোগের প্রতিকার চেয়ে বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করা হলেও কাজ হচ্ছে না বলে অভিযোগ করা হয় ঐ সভায়।

    জানা যায়, সম্প্রতি পীরগঞ্জ উপজেলা হাসপাতাল ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইয়াসিন আলী এমপি’র সভাপতিত্বে কমিটির সভা হয়। এতে সিভিল সার্জন ডাঃ আবু মোহাম্মদ খায়রুল কবীর, ইউএনও এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার, পৌর মেয়র কশিরূল আলম, উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রুস্তম আলী সহ সহ কমিটির অন্যান্য সদস্য ও হাসপাতালের চিকিৎসক ও নার্স উপস্থিত ছিলেন।

    সভায় একাধিক বক্তা অভিযোগ করেন, মানুষে মৌলিক চাহিদাগুলির মধ্যে চিকিৎসা একটি গুরুত্বপূর্ন বিষয় আর এটি পাওয়ার অধিকার রয়েছে সবার। সরকারও সেই মৌলিক চাহিদা সাধারণ মানুষের কাছে পৌছে দিতে জেলা ও উপজেলা ছাড়াও ইউনিয়ন পর্যায়ে সরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র চালু করেছেন। সরবরাহ করেছেন আধুনিক যন্ত্রপাতি। দিচ্ছেন পর্যাপ্ত ওষুধও। কিন্তু সেই সেবা থেকে পদে পদে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।

    অর্থ লোভ, মধ্যে প্রাইভেট ক্লিনিকের সাথে হাপাতালের চিকিৎসকদের অবৈধ ব্যবসা, টাকার বিনিময়ে জখমী সনদ পত্র প্রদান, সরকারি ওষুধ ব্যক্তিগত চিকিৎসা কেন্দ্রে ব্যবহার, চেম্বারে বসে রোগী দেখার পরিবর্তে বাদাম খেতে খেতে খোষ গল্পে মেতে উঠা ও অফিস ফাকি দেওয়া অন্যতম বলে আলোচনায় উঠে আসে। উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রুস্তম আলী জানান, চিকিৎসক পদে ১১ জন থাকার কথা থাকলেও রয়েছেন ৩ জন।

    আরএমও, জুনিয়র কনসালটেন্ট গাইনী ও ১ জন মেডিকেল অফিসার দিয়েই চালাতে হচ্ছে ৫০ শয্যার হাসপাতালটি।এতে চিকিৎসা দিতে চরম স,স্যা হচ্ছে। এদিকে চিকিৎসক সংকটের কারণে উজেলার প্রায় ৪ লাখ মানুষকে নির্ভর করতে হচ্ছে ঐ ৩ জনের উপর। ঐ ৩ জন ডাক্তারের মধ্যে জুনিয়র কনসালটেন্ট (গাইনী) দীর্ঘদিন ধরে এ হাসপাতালে কর্মরত আছেন এবং তিনি স্থানীয় বাসিন্দা হওয়ায় সরকারী নীতিমালা লংঘন করে পীরগঞ্জে অংশিদারিত্বে ভিত্তিতে দু’টি প্রাইভেট ক্লিনিক ও একটি ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার পরিচালনা করে আসছেন। হাসপাতালে আগত রোগীদের তিনি কোন কারণ ছাড়াই ঐসব ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। সেখানে না গেলে তিনি কোন চিকিৎসা দেন না।

    সম্প্রতি জগথা গ্রামের আমিরুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি তার পিঠে ফোড়া জনিত সমস্যা নিয়ে হাসপাতালে ডাক্তার নজরুলের কাছে চিকিৎসার জন্য গেলে তিনি তাকে আধুনিক ক্লিনিকে ভর্তি হতে বলেন। এর কারণ জানতে চাইলে ডাক্তার সাহেব তাকে বলেন, এখানে কোন ভাল যন্ত্রপাতি নাই, আদর্শ তিøনিকে আছে। সেখানে গেলে চিকিৎসা হবে, নইলে অন্য ডাক্তারের কাছে যান। তিনি পারব না বলে তাকে বিদায় দেন।

    বিষয়টির প্রতিকার চেয়ে জেলা সিভিল সার্জন সহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ভুক্তভোগী আমিরুল ইসলাম। এছাড়াও হাসপাতালে সিজারের ব্যবস্থা থাকলেও ডাক্তার নজরুল হাসপাতালে আগত ডেলিভারী রোগীদের নানা রকম ভয়ভীতি দেখিয়ে তার মালিকানাধীন ক্লিনিকে পাঠিয়ে দেন। রোগী ও তার স্বজনদের অভিযোগ, রোগীর পেটের পানি ভেঙ্গে গেছে, বাচ্চা ও মা উভয়ের জীবন এখন সংকটপন্ন, এখনেই ক্লিনিকে না নিলে মা ও বাচ্চা উভয়কেই হারাতে হবে এমন কথা বলে ভয় দেখান ডাক্তার নজরুল।

    এতে বাধ্য হয়েই রোগীর জীবন বাচাতে নিয়ে যান তার নির্ধারিত ক্লিনিকে। সেখানে রোগীর সিজার করিয়ে নানা ভাউচার দেখিয়ে আদায় করা হয় কাড়ি কাড়ি টাকা। অথচ অভিযোগ রয়েছে, হাসপাতালে ডাক্তার নজরুল সিজারের দায়িত্বে থাকায় সরকারী যন্ত্রপাতি, সুই সুতা ও ওষুধ হাসপাতালের পরিবর্তে তার অংশিদারিত্বের ক্লিনিকে ব্যবহার করেন। অপরাধ ঢাকাতে তিনি হাসপাতালে মাসে দু’চারটি সিজার করান। কিন্তু তাদের ভাগ্যে সরকারি কোন ওষুধ জুটে না। সব কিছুই বাইরে থেকে কিনতে হয়। বাড়ি ফেরার সসয় রোগীর স্বজনের কাছ থেকে বকশি আদায় করা হয় দেড় থেকে আড়াই হাজার টাকা।

    তাছাড়া হাসপাতালের আউট ডোরে চেম্বারে বসে বাদাম খেয়ে সময় কাটান তিনি। রোগীরা বাইরে দাড়িয়ে ঘন্টার পন ঘন্টা অপেক্ষা করলেও সেদিকে খেয়াল রাখেন না তিনি। স্থানীয়ত্বের প্রভাব খাটিয়ে তিনি সকল অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন অবাধে। এদিকে হাসপাতালে ভর্তি ও আগত রোগীদের অকারণে পরীক্ষা-নীরিক্ষার জন্য পাঠানো হয় ঐ দুই ডায়াগনোষ্টিক সেন্টারে। অন্য কোন জায়গায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট দেখে না হাসপাতালের ডাক্তাররা। অথচ হাসপাতালে এক্সরে বাদে সকল পরীক্ষা-নীরিক্ষার যন্ত্রপাতি সচল রয়েছে। সেখানে পরীক্ষা নীরিক্ষার জন্য কাউকে পাঠানো হয় না।

    তবে সম্প্রতি স্বাস্থ্য কর্মকর্তা নির্দেশে কিছু পরীক্ষা-নীরিক্ষা হাসপাতালে শুরু হয়েছে। অন্যদিকে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া জখমী রোগীদের টাকার বিনিময়ে জখমী সনদ পত্র দেওয়ার অভিযোগ রয়েছে অসংখ্য। কোন ঘটনায় মামলা হলে টাকা নিয়ে কম জখমীদের বেশী জখম এবং বেশী জখমীদের কম জখমী সার্টিফিকেট দেওয়া হচ্ছে। সেনগাও ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোস্তাফিজার রহমান অভিযোগ করে বলেন, মেডিকেল সার্টিফিকেটে হের ফের করা হচ্ছে। এতে সাধার মানুষ মামলা-মকদ্দমায় হয়রানি হচ্ছে।

    প্রবীন সাংবাদিক আব্দুর রহমান অভিযোগ করে বলেন, মারামারি ঘটনায় তার ছেলের হাতেরর আঙ্গুল ভেঙ্গে গেলে তিনি হাসপাতালে ভর্তি করান। এর জন্য সেবা ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার থেকে এক্্র-রে করে আনলে আরএমও হুমায়ুন কবীর তা প্রত্যাখান করেন এবং ডিজিটাল ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার থেকে এক্্র-রে করে আনতে বলেন। পরে বাধ হয়ে আবারো ডিজিটাল ডায়াগনোষ্টিক সেন্টার থেকে এক্্র-রে করে আনতে হয়।

    এটা ব্যবসা ছাড়া আর কিছু না। অপর চিকিৎসক ডাঃ কামাল হোসেন এনেসথেসিয়ায় এবং অল্ট্রাসনোলজিতে প্রশিক্ষন প্রাপ্ত। যে কারণে পীরগঞ্জ, রানীশংকৈল ও পাশ্ববর্তী বোচাগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন ক্লিনিকে সিজারের অবস এবং বিভিন্ন ডায়াগোনষ্টিক সেন্টারে অল্টাসনোগ্রামের কাজে ব্যস্ত থাকেন। সরকারি হাসপাতালে মোটেও সময় দেন না তিনি। অভিযোগ বিষয়ে ডাক্তার নজরুল বলেন, আমি ৪র্থ গ্রেডে চাকরী করি। কত অভিযোগ দেখলাম ?। আমি ওগুলো পরোয়া করি না। তাছাড়া কোন ক্লিনিকে তার মালিকানার অংশ নেই বলে দাবি করেন তিনি। তবে জরুরী প্রয়োজনে সিজারের জন্য ক্লিনিকে তিনি যান বলে স্বীকার করেন।

    উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার রুস্তম আলী বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর নিয়ম মত দায়িত্ব পালন করার জন্য সকলকে বলেছি। আর যেন কোন সমস্যা না হয় সেদিককে আমি খেয়াল রাখবো। সিভিল সার্জন ডাঃ আবু মোহাম্মদ খায়রুল কবীর বলেন, অভিযোগগুলি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।