পাথর কোয়ারীতে উত্তোলন বন্ধ থাকার পরেও অভিনব কায়দায় উত্তোলন ও পাচার

0
191

রেজোয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধিঃ অভিনব কায়দায় শ্রীপুর পাথর কোয়ারী হতে পাথর উত্তোলন, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, কর্মহীণ প্রায় ৩০হাজার শ্রমিক। কাগজে পত্রে শ্রীপুর পাথর কোয়ারী বন্দ থাকলেও বাস্তবে অভিন্ন চিত্র। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিরব ভূমিকায়।

সরেজমিনে শ্রীপুর পাথর কোয়ারী ঘুরে জানা যায়, অভিনব কায়দায় সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতায় সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার একমাত্র পাথর কোয়ারী শ্রীপুর হতে রাতের আঁধারে ও দিনের আলোতে পাথর উত্তোলন হচ্ছে।
কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসিনতায় এবং কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজেসে শ্রীপুর পাথর কোয়ারী হতে পাথর লুন্ঠন অব্যাহত রয়েছে।
ফলে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হচ্ছে একটি চক্র, বঞ্চিত হচ্ছে হাজার হাজার শ্রমিক, সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব।

শ্রীপুর পাথর কোয়ারীর সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলেন, কোয়ারীতে বেলচা, বালতী, হেমার, বারকী, ট্রাক শ্রমিক ও চালক ও ব্যবসায়ী মিলে প্রায় ত্রিশ হাজার লোক পাথর উত্তোলন কাজে নিয়োজিত ছিল। সরকারও কোটি টাকার উপর রাজস্ব আদায় করত। পরবর্তীতে সরকারি নির্দেশনায় উপজেলার একমাত্র শ্রীপুর পাথর কোয়ারীটি গত ২০১৬ সনে পাথর উত্তোলন বন্ধ ঘোষনা করা হয়।

সম্প্রতি গত বছরের নভেম্বর মাস হতে কতিপয় পাথর খেকু চক্রের সদস্যরা কোয়ারী জিরো লাইন হতে দিনের বেলায় পাথর উত্তোলন করে নদীর ধারে সাজিয়ে রাখছে। রাতের বেলা এসকল পাথর নৌকাযোগে নদী পার করে শ্রীপুর কোয়ারীর মন্ত্রী চা বাগান, সেলিম চৌধুরীর বাংলো, বর্তমান ইউপি সদস্য রাজু মিয়ার বাড়ী, বাননের ঘাট, চা বাগান, খড়মপুর এলাকা এবং আদর্শগ্রাম ঘাট দিয়ে পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে। যার ফলে একদিকে শ্রমিকরা কর্মহীন অপরদিকে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হচ্ছে সুবিধাভোগী পাথর খেকু চক্রের সদস্যরা ও তাদের সহায়তাকারীরা।

সম্প্রতি শ্রীপুর, খড়মপুর এলাকায় প্রায় ৪০-৫০ গাড়ী ও আসামপাড়া আর্দশগ্রাম ঘাটে প্রায় ২০ গাড়ী পাথর স্তুপ করে প্রায় দেড় মাস হতে আটক করে রেখেছে সংশ্লিষ্টরা। পাথর গুলোকে সাইনবোর্ড হিসাবে ব্যবহার করে প্রতিনিয়িত দিন রাতে পাথর উত্তোলন করে নিয়ে যাচ্ছে পাথর খেকু চক্রের সদস্যরা। বিনিময়ে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব, আগুল ফুলে কলাগাছে পরিনত হচ্ছে পাথর লুন্টনকারী চক্রের সদস্যরা।

স্থানীয় বাসিন্দা এক সময়ের শ্রীপুর পাথর কোয়ারীর ব্যবসায়ী, ইদ্রিস আলী, আলী হোসেন, সামছু মিয়া, আমিন আহমদ, শরিফ আহমদ, সাব্বির আহমদ, মাসুক উদ্দিন, জালাল উদ্দিন, আব্দুর রব, আব্দুল হান্নান, আব্দুল মন্নান, সামসুল ইসলাম সহ অনেকেই জানান, উপজেলা প্রশাসন কয়েকটি অভিযান পরিচালনা করেন। এরপর হতে রহস্যজনক কারনে শ্রীপুর পাথর কোয়ারীতে অভিযান বন্ধ রাখায় গত দেড়মাস হতে কিছু পাথর কৌশলে স্তুপকরে রেখে দিয়েছে। পাথর গুলোকে পুজি করে প্রতিনিয়ত পাথর খেকুরা কোয়ারীর পাথর লুন্ঠান করে নিয়ে যাচ্ছে। নদীর পাড়ে এবং শ্রীপুর, খড়মপুর ও আদর্শগ্রাম ঘাটের পাথর গুলো নিলামে বিক্রয় হলে পাথর উত্তোলনে বাঁধা হয়ে পড়বে তাই পাথর গুলো নিলাম করা হচ্ছে না। এই সুবাধে পাথর খেকু চক্রের সদস্যরা দেদারছে কোয়ারীর পাথর লুন্ঠন করছে।

শ্রীপুর বিজিবি ক্যাম্পের নায়েক সুবেদার মকবুল হোসেন বলেন, শ্রীপুর, খড়মপুর ও আসামপাড়া আদর্শগ্রাম ঘাটে বেশ কিছু পাথর বিজিবি আটক করে রেখেছে। আটককৃত পাথর গুলো জব্দ করে নিলামের জন্য উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেকে জানানো হয়েছে। পাথর গুলোর জন্য অনেকেই মনে করছে কোয়ারী হতে পাথর উত্তোলন হচ্ছে।

জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (এসিল্যান্ড) রিপামনী দেবী বলেন, “শুনেছি শ্রীপুর কোয়ারীর কিছু পাথর বিজিবি আটক করেছে। দ্রত সময়ের মধ্যে পাথর গুলো জব্দ করে নিলামে বিক্রয় করা হবে।”