‘পর্যটন বর্ষ ২০১৬’ উপলক্ষে ৩ দিনব্যাপী পৌষ পার্বন

    0
    217

    মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস এবং লোকজ সংস্কৃতি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান:অপরূপ চৌধুরী

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,ডিসেম্বরঃ বাংলাদেশ ইয়ুথ এন্ড স্টুডেন্টস ফোরাম ফর ট্যুরিজম ডেভেলপমেন্ট (বি.ওয়াই.এস.এফ.টি.ডি) এর উদ্যোগে চলতি ‘পর্যটন বর্ষ ২০১৬’ উপলক্ষে আয়োজিত তিন দিনব্যাপী পৌষ পার্বন ও বিজয় উৎসব আজ শেষ হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর থেকে ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের স্বোপার্জিত স্বাধীনতা চত্বরে (টিএসসি সড়কদ্বীপ) এ উৎসব শুরু হয়।

    আজ ১৭ ডিসেম্বর সকাল ১১টায় উৎসবের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী। ‘আমাদের মুক্তিযুদ্ধ-আমাদের পর্যটন’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠানে মূল আলোচক ছিলেন সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব গোলাম কুদ্দুস। সংগঠনের চেয়ারম্যান মোস্তফা আলমগীর রতনের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল বাপ্পাদিত্য বসুর স ালনায় এতে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সেক্রেটারি অব ফুড এন্ড হসপিটালিটি নাছিমা হক রুবি।

    অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে পর্যটন কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান ড. অপরূপ চৌধুরী মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণ করে বলেন, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এক বিরাট ক্যানভাসে আঁকা মহান ইতিহাস। এ ইতিহাস বিশে^র মধ্যে অনন্য। স্বাধীনতার জন্য এতো দীর্ঘ সংগ্রাম এবং এতো রক্ত ও প্রাণদানের ইতিহাস বিশে^ বিরল। বিশ্বের কাছে মুক্তিযুদ্ধের মহান ইতিহাস সঠিকভাবে তুলে ধরতে পারলে বিপুল সংখ্যক বিদেশি পর্যটককে এখানে আকৃষ্ট করা সম্ভব। পাশাপাশি বাংলাদেশের যে ঐতিহ্যবাহী লোকসংস্কৃতি, তাও বিশ্বের মধ্যে অন্যতম সমৃদ্ধ সংস্কৃতি। আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও লোকজ সংস্কৃতি আমাদের পর্যটন শিল্পের গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হতে পারে।

    তিনি বলেন, ভারতের সাথে লড়াই করে আমরা বাংলা লোকগানকে বাংলাদেশের বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া আমাদের বর্ষবরণ অনুষ্ঠান ও জামদানি শাড়ির মতো সাংস্কৃতিক উপাদানগুলো এখন বিশ্ব ঐতিহ্য হিসেবে বৈস্বিক স্বীকৃতি পেয়েছে। প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থানগুলো ভ্রমণের সাথে সাথে আমাদের রান্নাবান্না, খাবারদাবার, পোশাক-পরিচ্ছদ, দৈনন্দিন জীবনাচরণ, লোকজ সংস্কৃতিক, লোকজ খেলাধুলাও আমাদের পর্যটক আকর্ষণের উপাদান। আমাদের পার্বত্য অঞ্চলের জীবনাচরণ ও সাংস্কৃতিক বৈচিত্র্য এবং সেই বৈচিত্র্যের মধ্যে ঐক্য পর্যটক আকর্ষণের অন্যতম ভিত্তি।

    অপরূপ চৌধুরী আরো বলেন, অন্যান্য শিল্পের চেয়ে পর্যটন শিল্প নানাভাবেই আলাদা। এটি একটি শ্রমঘন শিল্প। অন্যান্য শিল্পের কাঁচামাল আমদানি ও বিভিন্ন কারণে উপার্জনের একটা অংশ বিদেশে চলে যায়। কিন্তু পর্যটন শিল্প থেকে উপার্জিত কোনো অর্থই দেশের বাইরে যায় না। জাতিসংঘের এমডিজি লক্ষ্যমাত্রা সফলভাবে বাস্তবায়নের পর আমরা এখন এসডিজি লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়নের কাজে হাত দিয়েছি। এসডিজি’র ৮, ১২ এবং ১৪ নম্বর ধারা সরাসরি পর্যটন শিল্পের সাথে জড়িত। ফলে পর্যটন শিল্পের উপর গুরুত্বারোপ আমাদের নীতির অংশ হওয়া উচিৎ।

    অনুষ্ঠানে মূল আলোচকের বক্তব্যে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুস বলেন, বাংলাদেশ আজ একটি জাতিরাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। আমাদের গৌরবের মাতৃভাষা বাংলা, আমাদের খাবারদাবার, জীবনব্যবস্থা, সংস্কৃতি, পেশা, সামাজিক মূল্যবোধ, নীতি নৈতিকতা সবকিছুই এই জাতিরাষ্ট্রের উপাদান। এগুলো নিয়েই বাঙালি ও বাংলাদেশ। তাই বাংলাদেশে বিদেশি পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে চাইলে এই জাতিরাষ্ট্রের সংস্কৃতিকে বাদ দিয়ে হবে না। পর্যটন ও সংস্কৃতি অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। কিন্তু এই দুটো খাতেই সরকারের বাজেট বরাদ্দ সবচেয়ে কম। যেন বাজেটে ভিক্ষার ঝুলি হাতে ধরিয়ে দেওয়া হয়।

    তিনি বলেন, আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছি, নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছি, অর্থনীতির নানা ক্ষেত্রে আমরা উন্নত হচ্ছি। কিন্তু চিন্তার দারিদ্র্য রয়ে গেছে। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, নৈতিক ও সামাজিক মূল্যবোধ এসব ক্ষেত্রে আমরা ক্রমেই দরিদ্র হচ্ছি। এই চিন্তার দারিদ্র্যের কারণেই জঙ্গিবাদের উত্থান হচ্ছে। আমাদের চিরায়ত অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিতে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা নামমাত্র।

    এ কারণে আমাদের তরুণরা আমাদের এই উদার সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হতে পারছে না। তাই জঙ্গি হওয়ার জন্য তারা এককভাবে দায়ী নয়, দায়ী আমাদের ব্যবস্থা, আমরা সবাই। সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্যকে গুরুত্ব দিতে না পারলে এই চিন্তার দারিদ্র্য দূর হবে না। ফলে অর্থনীতিতে উন্নতি হলেও জঙ্গিবাদের মূলোৎপাটন করা যাবে না।

    আলোচনা সভা শেষে বিকাল ৩টা থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। অনুষ্ঠানে পৌষ পার্বনের গান, লোকগীতি, দেশাত্মবোধক গান, মুক্তিযুদ্ধের গান পরিবেশন করেন শিল্পী জয়দেব কর্মকার ও তার দল।

    এছাড়া অনুষ্ঠান চত্বরে ছিলো তিন দিনব্যাপী লোকজ মেলার আয়োজন। মেলায় হরেক রকমের পিঠা, পায়েস, আচার, মিষ্টি এবং বাহারী হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে বসেন দোকানিরা। মেলায় বিপুল সংখ্যক সংস্কৃতি ও পর্যটনপ্রিয় মানুষ অংশগ্রহণ করেছেন।

    উৎসবের প্রথম দিন ১৫ ডিসেম্বর সকালে উৎসবের উদ্বোধন করেন ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন এমপি। দ্বিতীয় দিন ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসে বিকাল ৩টা থেকে বিজয় উৎসব (সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান) অনুষ্ঠিত হয়। প্রতিদিন উৎসব চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।