পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে এখনো হোটেলে ৫ টাকা কাপ ‘চা’

    0
    474

    মিনহাজ তানভীরঃ মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলা বৃহত্তর সিলেটের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন এলাকা। প্রতিদিন দেশের কোনো না কোনো জেলার লোকজন এই ছায়াঘেরা স্বপ্নীল জায়গা,সবুজ-শ্যামল পাহাড়ি আঁকাবাঁকা মেঠো পথ ধরে হাঁটছে, ঘুরছে, আনন্দ উপভোগ করছে।

    চায়ের রাজধানী খ্যাত শ্রীমঙ্গলে রয়েছে ছোট-বড় অভিজাতসহ অর্ধশত হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট। কিন্তু হোটেল মালিকরা এই পর্যটন নগরী শ্রীমঙ্গলে আগত বিভিন্ন জেলার নানা শ্রেণীর মানুষের কথা ভাবলেও এমন ভাবে ভেবেছে কিনা জানা নেই।

    তবে সম্প্রতি কোন এক আড্ডার ছলে আমরা কয়েকজন রং চা পান করতে মৌলভীবাজার রোডস্থ শ্রীমঙ্গল থানার বিপরীত পাশে  জিলানী হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে ১০/১১ জনের একটি দল সিনিয়র জুনিয়রসহ জিলানী হোটেলে চা পান করতে যাই। কৌতূহলবশত  ক্যাশ টেবিলে বসে থাকা এক ভদ্রলোককে জিজ্ঞাসা করা হয় রং চা কত করে দাম রাখেন ? তিনি বললেন পাঁচ টাকা ,আমাদের মনে হলো তিনি হয়তো মজা করছেন।

    যাই হোক চা’য়ের অর্ডার দেওয়ার পর মাথা গুনা প্রতিজনে এক কাপ করে কাঁচের গ্লাসে করে রং চা এবং সাথে করে এক টুকরা লেবু চায়ের কাপের উপর সু-সজ্জিত করে টেবিলে রাখেন। যা চা পান করাকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।

    টেবিলে সাজানো রং চায়ের কাপগুলো

    আমরা বিষয়টি দেখে খুব কৌতুহল অনুভব করি যা সাধারণত কোন পার্টি না হলে দেওয়া হয় না। সাথে দুই প্যাকেট বিস্কিট ও। সম্ভবত ১০/১৫ টাকার মধ্যেই প্রতি প্যাকেটের মূল্য হবে। বিস্কুটের মূল্য হতে পারে যাই হোক, ভাবছিলাম আমরা যারা চায়ের জন্য অপেক্ষা করছি আমরা চা পান করবো কিন্তু আমাদের আড্ডা একটু বড় হওয়ায় হোটেলের মালিক ও আমাদের পাশে এসে বসে আমাদের সাথে তিনি ও  চা পান করেন। মনে হলো ওই হোটেলের মালিক এম এ সালাম তিনি একজন রসিক মানুষ খুব সামাজিক।

    এখানে একটি  বিষয় লক্ষণীয়, আমাদের দেশে অনেক হোটেল রয়েছে যে হোটেলের খাবার মালিকরা নিজেরাও খান না ! কিন্তু এখানে আমাদের একটু ব্যতিক্রম বলেই মনে হয়েছে।

    রং চায়ের মূল্য ৫ টাকা রাখা প্রসঙ্গে আবারো জিলানী হোটেলের স্বত্বাধিকারী এম এ সালাম সাহেবকে আমাদের টিমের একজন সিনিয়র জিজ্ঞাসা করলেন আসলেই কি আপনার হোটেলের চা পাঁচ টাকা নাকি আপনি আমাদের সাথে মজা করেছেন ?  তিনি (এম এ সালাম) বললেন না ভাই, আমি ব্যবসা করি মজা করবো কেন ? তখন উনাকে প্রশ্ন করে আপনি কেন প্রতি কাপ ৫ টাকা করে রাখেন অন্যান্য অভিজাত হোটেল গুলোতে এর চেয়ে বেশি মূল্য। এর কারণ কি ?

    তখন তিনি উত্তর দিলেন, যে দেখেন ভাই আমি ব্যবসা করি দীর্ঘ ১০ বছর ধরে আমি চাই ব্যবসার সাথে সাথে সামাজিক সেবা করতে এবং তা চেষ্টাও করি, যেহেতু শ্রীমঙ্গল পর্যটন নগরী বিভিন্ন এলাকা থেকে লোকজন আসে এবং আমার হোটেলটি শ্রীমঙ্গল থানার সম্মুখে হওয়ার ফলে কিছু গরিব লোক থানায় আসা-যাওয়া করে দীর্ঘ সময় থানার সামনে বসে থাকে বারবার চা পান করে। দুধ চা বার বার পান করলে শারীরিকভাবেও ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে যা আপনারা জানেন।

    এছাড়া আরও কিছু লোক রয়েছে যারা দুধ চা পছন্দ করেন না, যেমন কিছু সচেতন লোকজন সুস্থ থাকার কার জন্য দুধ চা পছন্দ করেন না। সবমিলিয়ে স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য আমি রং চা ৫ টাকা করেই রাখি। সবগুলোতে কম রাখা যাবে না। এছাড়া অন্যান্য খাবার চেষ্টা করি সাধারণ মানুষের হাতের নাগালে রাখতে এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার সাথে মানসম্মত করে আপনাদেরকে খাওয়াতে।

    জানা যায়, জিলানী হোটেলের পরিচালক মীর এম এ সালাম, তিনি দশ বছর ধরে হোটেল ব্যবসার সাথে জড়িত। তিনি শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় দু’বারের নির্বাচিত ৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। এখনো তিনি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।

    উল্লেখ্য চায়ের আড্ডায় অংশগ্রহণ করে তিনি আমাদের চায়ের বিল দিতে হবে না বলে অফার করে যদিও আমাদের সিনিয়র ওরা তার এই অফারকে সম্মানের সাথে ফিরিয়ে দেন বলেন ইনশাআল্লাহ আগামীতে হবে।