পরিবেশের ক্ষতি করে কোন উন্নয়নই টেকসই হবে নাঃপ্রধানমন্ত্রী

    0
    295

    আমারসিলেট24ডটকম,১৫মেঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সকলের প্রতি পরিবেশ বান্ধব হওয়ার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, পরিবেশের সঙ্গে সামঞ্জস্য ছাড়া কোন উন্নয়নই টেকসই হবে না।
    তিনি বলেন, ‘দেশের সমৃদ্ধির লক্ষ্যে জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবেলা ও বর্ধিষ্ণু জনসংখ্যার খাদ্য ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী টেকসই উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।’
    শিল্প বর্জ্য দ্বারা নদী, জমি ও পরিবেশ দূষিত হচ্ছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘পরিবেশের ক্ষতি করে কোন উন্নয়নই টেকসই হবে না।’
    প্রধানমন্ত্রী আজ সকালে বাংলাদেশ সচিবালয়ে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে গিয়ে কর্মকর্তদের উদ্দেশে ভাষণকালে এসব কথা বলেন।
    মন্ত্রণালয়ের কর্মকান্ডে গতিশীলতা আনতে এবং নিজ মতামত ও পরামর্শ প্রদানে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক সব মন্ত্রণালয় পরিদর্শনের পরিকল্পনা নিয়েছেন। তারই ধারাবাহিকতায় আজ পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় পরিদর্শনে যান এবং তাঁর নিজস্ব অভিমত ব্যক্ত করেন।
    শেখ হাসিনা বলেন, নিষ্কাশন ব্যবস্থার সহায়ক রাজধানীর অধিকাংশ খাল ও পুকুর ধ্বংস করে কালভার্ট ও ভবন নির্মাণ করা হয়েছে, যা দুঃখজনক।
    তিনি বলেন, ইউক্যালিপটাস গাছ মাটির রস শুষে নেয়। দেশের উত্তরাঞ্চল শুষ্ক হওয়া সত্ত্বেও এক সময় সেখানে ইউক্যালিপটাস গাছ লাগানো হয়, যা পরিবেশের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।
    ইউক্যালিপটাস গাছ বাস্তুসংস্থানের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় এ অসাধু পদক্ষেপ রূখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
    জলবায়ূ পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রতল উঁচু ও বিরূপ আশঙ্কার কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, এ জন্য তাঁর সরকার নদীর পানির ধারণ ক্ষমতা বাড়াতে ডেজিং কার্যক্রম চালু করেছে। এতে চাষাবাদে পানির সঙ্কটও দূর হয়েছে।
    অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন পরিবেশ ও বন মন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আবদুস সোবহান সিকদার, প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের সচিব আবুল কালাম আজাদ এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব শফিকুর রহমান পাটোয়ারী ও উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
    শিল্প বর্জ্য ও খেয়া পারাপারের নৌকার ইঞ্জিনের তেলই বুড়িগঙ্গা দূষণের মূল কারণ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ দূষণ রোধের উপায় খুঁজে বের করার জন্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের প্রতি আহবান জানান।
    তিনি বলেন, বুড়িগঙ্গাকে বাঁচাতে তাঁর সরকার যে কোন পদক্ষেপ নিতে পিছপা হবে না। একে দূষণমুক্ত এবং অন্যান্য নদী ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে এর নাব্যতা ফিরিয়ে আনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, বর্তমানে ১৩৫টি ড্রেন দিয়ে রাজধানীর আবাসন বর্জ্যসহ কল-কারখানার সমস্ত বর্জ্য বুড়িগঙ্গায় পড়ছে। এই ১৩৫টি ড্রেন লাইনকে একটি লাইনে নিয়ে এসে বর্জ্য অন্যত্র ফেলার পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে।
    তিনি বলেন, এ জন্য তাঁর সরকার বুড়িগঙ্গার তীরে একটি কেন্দ্রীয় শোধনাগার তৈরির পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। এতে যত অর্থই প্রয়োজন হোক নিষ্কাশন ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। তিনি পারাপারের খেয়ায় ইঞ্জিন ব্যবহার বন্ধ করে বৈঠার প্রচলন চালু করারও নির্দেশ দেন।
    পরিবেশ রক্ষা ও উন্নয়নের জন্য বন সংরক্ষণের উপর গুরুত্ব আরোপ করে শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার গ্রীন হাউস গ্যাস কমাতে গাছ লাগানো কর্মসূচীর মধ্যদিয়ে বনায়ন সৃষ্টির উদ্যোগ নিয়েছে।
    পরিবেশ রক্ষায় বনায়নের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইতোমধ্যে প্রায় ১ লাখ ৯৬ হাজার হেক্টর চরাঞ্চলে বনায়নের মাধ্যমে নয়নাভিরাম উপকূলীয় বন সৃজন করা হয়েছে। উপকূলীয় বনায়ন প্রক্রিয়ায় বঙ্গোপসাগর থেকে ১ হাজার ২০০ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ভূমি দেশের মূল ভূখন্ডের সঙ্গে সংযোজন করা সম্ভব হয়েছে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের বন্যপ্রাণী ও জীব-বৈচিত্র সংরক্ষণের লক্ষ্যে ৩৭টি সংরক্ষিত এলাকা পরিচালনা করা হচ্ছে। এছাড়া ১৪টি ইকো-পার্ক, উদ্ভিদ উদ্যান, সাফারি পার্ক পরিচালিত হচ্ছে। সম্প্রতি গাজীপুরে বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্ক এবং চট্টগ্রামে রাসেল এভিয়ারী ইকো-পার্ক প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে।
    তিনি বলেন, সামাজিক বনায়ন বাংলাদেশের বন ব্যবস্থাপনায় উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন ও সাফল্য এনেছে। এছাড়া দারিদ্র্য দূরীকরণ, নারীর ক্ষমতায়ন ও পরিবেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। ইতোমধ্যে বন বিভাগ স্থানীয় বননির্ভর ৫ লাখ উপকারভোগী পরিবারকে সম্পৃক্ত করে দেশের অবক্ষয়িত বনভূমি ও প্রান্তিক ভূমিকে সামাজিক বনায়নের আওতায় এনেছে। তিনি এ কার্যক্রমকে আরও জোরদার করার ওপর জোর দেন।
    শেখ হাসিনা বলেন, বন গবেষণার মাধ্যমে এ পর্যন্ত প্রায় ৫০টি প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা সম্ভব হয়েছে। এছাড়া টিস্যু কালচার পদ্ধতির মাধ্যমে বনজ ও ফলজ বৃক্ষ এবং ১২ প্রজাতির বাঁশের বংশ বৃদ্ধির কৌশল উদ্ভাবন করা হয়েছে। প্ল্যান্ট ট্যাক্সোনোমিক গবেষণার মাধ্যমে ২টি নতুন প্রজাতি আবিষ্কারসহ ১২৫টি নতুন রেকর্ড এবং প্রায় ৫০ হাজার সংগৃহীত উদ্ভিদ নমুনা সঠিকভাবে সনাক্ত করা হয়েছে।
    ট্যানারীকে ঢাকা থেকে সরিয়ে নেয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাজারীবাগ ট্যানারী অতি সত্ত্বর সাভারে স্থানান্তরের ব্যাপারে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় শিল্প মন্ত্রণালয়কে সহায়তা করছে। শিল্প প্রতিষ্ঠানসমূহে ইটিপি কার্যক্রম অনলাইনে মনিটর করার বিষয়েও এ মন্ত্রণালয় পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, ট্যানারী চলে গেলে ওই স্থানটিকে দুষণমুক্ত করার কাজে হাত দেয়া হবে।
    প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিল্প কারখানা থেকে নির্গত দূষিত তরল বর্জ্য নিয়ন্ত্রণের জন্য ২০০৯ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত ৮১২টি কারখানায় ই.টি.পি স্থাপন করা সম্ভব হয়েছে। আগামী ২০১৮ সালের মধ্যে কলকারখানাসমূহে ১০০% ইটিপি চালুর পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
    তিনি বলেন, বায়ু দূষণের মাত্রা হ্রাস করার লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ২ হাজার ১৪১টি ইট-ভাটাকে আধুনিক প্রযুক্তির ইট-ভাটায় রূপান্তর করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে সকল ইট-ভাটাকে আধুনিক প্রযুক্তির আওতায় আনা হবে।বাসস