নড়াইলে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ

    0
    320

    নড়াইলে শেখহাটি ইউনিয়নের শেখহাটী তপনবাগ যুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ।

    নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইল সদরের শেখহাটি ইউনিয়নের শেখহাটী তপনবাগ যুক্ত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি বাবর আলী মোল্যা ও সদ্য অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শক্তিপদ হালদারের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ে দুর্নীতি, অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ ও নিয়োগ বানিজ্যের অভিযোগ পাওয়া গেছে ।
    জানা গেছে বর্তমান সভাপতি ও সদ্য অবসরপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতায় থাকায় ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি সাধন করেছেন। বিদ্যালয়ের সভাপতি বাবর আলী ও তার সহযোগি এ বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য রুহুল এবং প্রধান শিক্ষক প্রভাব খাটিয়ে সুকৌশলে বিদ্যালয় হতে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ভবনের ছাদ ভাঙ্গার পর টেন্ডার ছাড়াই ছাদের পুরানো রড বিক্রি করে প্রায় ৩০ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। ২০১৯ইং সালে শতবর্ষী একটি বড় আম গাছ ও কয়েকটি মেহগনি গাছ নিয়ম বহির্ভুত ভাবে বিক্রি করে হাতিয়ে নিয়েছেন লক্ষাধিক টাকা। টেন্ডারের মাধ্যমে বিদ্যালয় চত্বর হতে ৩ লক্ষ ২০ হাজার টাকা গাছ বিক্রি করেছেন। সেই টাকার কোন হিসেব দেননি।

    আবু জাফর মোঃ মুরাদ হোসেনকে বিদ্যোৎসাহী সদস্য করার জন্য ১০ হাজার টাকা নেন সাবেক প্রধান শিক্ষক শক্তি প্রসাদ হালদার ও সভাপতি বাবর আলী মোল্যা। কিন্তু তারা তাকে কোন রশিদ দেননি। ওই টাকা বিদ্যালয় ফান্ডে জমা করেননি। দুই কিস্তিতে টিউশন ফিস’র ৮৭ হাজার ৫শ টাকা ব্যাংক হতে উত্তোলন করেছেন। ওই টাকা শিক্ষকদের প্রাপ্য হলেও তা শিক্ষকদের দেননি। সাবেক প্রধান শিক্ষক শক্তি প্রসাদ হালদার ও সভাপতি বাবর আলী ৫জন শিক্ষক এবং ১জন গ্রন্থাগারিক ও ১ জন এমএলএসএস নিয়োগ দিয়ে অনুদানের নামে ১৬ লক্ষ ৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বিদ্যালয়ের উন্নয়ন কল্পে। কিন্তু দৃশ্যমান কোন উন্নয়ন করেননি। সভাপতির আতিœয় হওয়ায় শিক্ষিকা ফারজানা আক্তার বিদ্যালয়ে না এসেও কয়েকদিন পর এসে হাজিরা খাতায় সাক্ষর করেন।

    এমনকি একাধারে ৭৫ দিন অনুপস্থিত থেকে সব সাক্ষর এক সাথে করেছেন। দুর্নীতি দমন কমিশন সততা ষ্টোর স্থাপনের জন্য ৩০ হাজার টাকা দেয়। ওই টাকা হতেও ২১ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন সাবেক প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি। ভৌত অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য সভাপতি ১২ হাজার টাকা বিদ্যালয় হতে নিলেও কোন উন্নয়ন করেননি। ২০১৯ সালের ২০ জুন মোবাইলের সিম ক্রয়ের নামে ভাউচার দিয়ে ৩হাজার টাকা নিয়েছেন। বাস্তবে কোন সিম ক্রয় করেননি। শিক্ষা সফরের নামে প্রায় ১৮ হাজার টাকা নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন।
    বর্তমান বিদ্যালয়ের সহকারি প্রধান শিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক ) আ স ম ফারুক হোসেন জানান, গত ডিসেম্বর মাসের ৫ তারিখে প্রধান শিক্ষক স্যার অবসর গ্রহন করলেও আনুষ্ঠানিক ভাবে তাকে কোন দায়িত্ব দিয়ে যান নাই, শুধু বিদ্যালয়ের মোবাইলটা দিয়ে গেছেন, এ ব্যাপারে সভাপতির সাহেবকে জানালেও তিনি কোন ব্যাবস্থা নেন নাই। প্রধান শিক্ষক স্যারের কাছে দায়িত্ব চাইলে তিনি বলেন , আমার সময় কেউ আমাকে দায়িত্ব বুঝে দেই নাই, আমিও দায়িত্ব বুঝে দিতে পারব না। প্রধান শিক্ষক স্যার বর্তমান সভাপতির সাথে যোগ সাজসে ভৌত অবকাঠামো উন্নয়ন কাজসহ বিভিন্ন নামে মিথ্যা বিল ,ভাউচার করে বিদ্যালয়ের ব্যাপক ক্ষতি করে গেছেন। দুর্নীতি দমন থেকে সততা ষ্টোরের জন্য প্রাপ্ত ৩০ হাজার টাকার মাত্র ৮-৯ হাজার টাকা বিদ্যালয় বুঝে পেয়েছে, বাকী টাকা হেড মাষ্টার ও সভাপতি ভাগ করে নেছে। প্রধান শিক্ষক নিয়োগের জন্য কাগজে আমার কাছ থেকে জোর করে সই নেয়ার চেষ্টা করছে। আমি সই দিইনি।
    বিদ্যালয়ের অভিভাবক সদস্য মোঃ রুহুল, সভাপতি ও তার বিরুদ্ধে আনা সকল অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক নিজে প্রধান শিক্ষক হবার জন্য এবং বিদ্যালয়ের সুনাম নষ্ট করার জন্য এ সব অপপ্রচার চালাচ্ছে। বিদ্যালয়ের সকল হিসাব পত্র ঠিক আছে, এখানো কোন দুর্নীতি অনিয়ম হয় নাই, এলাকার কিছু লোক বিদ্যালয়ের পড়াশুনার পরিবেশ নষ্ট করার জন্য এসব করছে।
    এ ব্যাপারে অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শক্তিপদ হালদার বলেন, তার নামের সকল অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের ক্ষমতা হস্তান্তরের বিষয় বলেন আগের প্রধান শিক্ষকরা যে নিয়মে কাজ করেছে ,আমিই তাই করেছি। আমিও কারও কাছ থেকে ক্ষমতা বুঝে নিইনি ,আমি কাউকে বুঝে দিতে পারবো না।
    বিদ্যালয়ের সভাপতি বাবর আলীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
    শেখহাটী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোঃ বুলবুল আহম্মেদসহ ইউনিয়নের নির্বাচিত সদস্যরা বলেন,্ বিদ্যালয়ের গাছ কাটা,গাছ বিক্রি, রড বিক্রিসহ বিদ্যালয়ের সকল আয়ের উৎসের হিসাব আমরা চাই, এ বিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য বর্তমান কমিটির সভাপতি বাবর আলী মোল্যা ও সদ্য অবসর প্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক শক্তিপদ হালদারের দুর্নীতির আইনানুগ সঠিক তদন্ত দাবি করছি। বিদ্যালয়ে যারা অনিয়ম ও দুর্নীতি করেছে সে যেই হোক না কেন তার বিচার দবি করছি।
    সভাপতি ও সাবেক প্রধান শিক্ষকের দুর্নীতি অনিয়মের কারনে বিদ্যালয়ে চরম অস্থিরতা বিরাজ করছে। শ্রেণিপাঠ কার্যক্রম ভেঙ্গে পড়েছে। ঐতিহ্যবাহী বিদ্যালয়টি ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। বর্তমানেও প্রায় ৭শ শিক্ষার্থী রয়েছে। দিন দিন প্রতিষ্ঠানের ফলাফল নি¤œগামি হচ্ছে। সচেতন মহল সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে দোষিদের বিরুদ্ধে শাস্তিমুলক ব্যবস্থা গ্রহন করে এ প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার পরিবেশ ফিরিযে আনার দাবি জানিয়েছেন।