নড়াইলের ইউপি চেয়ারম্যান আ’লীগ নেতা পলাশ হত্যা মামলায়

    0
    232

    দীর্ঘ সময় কেটে গেলেও চার্জশীট হয়নি, আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে বাদী ও সাক্ষীদের হুমকির অভিযোগ

    নড়াইল প্রতিনিধিঃ নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার দিঘলিয়া ইউনিয়ন পরিষদের জনদরদী চেয়ারমান, উপজেলা আওয়ামীলীগের শ্রম বিষয়ক সম্পাদক লতিফুর রহমান পলাশ হত্যার সাড়ে ৫ মাসে কেটে গেলেও এখনো দেয়া হয়নি মামলার চার্জশীট ।  চা ল্যকর এই মামলার বিচার নিয়ে অনেকটাই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছেন মামলার বাদী। হত্যা মামলাটির আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে বাদী ও সাক্ষীদের হুমকি দিচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সঠিক বিচারের আশায় মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের দাবি করেছেন। এদিকে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা জানালেন, তদন্তকাজ শেষ হলেই আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হবে।

    জানা গেছে, চলতি বছরের ১৫ ফেব্রুয়ারী দুপুর ১২টার দিকে লোহাগড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা লতিফুর রহমান পলাশকে গুলি করে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। ইউপি নির্বাচনের জের, রাজনৈতিক ও এলাকায় আধিপত্য বিস্তার নিয়ে প্রতিপক্ষের সাথে বিরোধের জের ধরে তিনি খুন হন বলে শোনা যায। হত্যাকান্ডের ঘটনায় নিহতের বড় ভাই জেলা পরিষদের সদস্য মুক্তিযোদ্ধা সাইফুর রহমান হিলু বাদী হয়ে  ১৫ জনকে আসামী করে লোহাগড়ায় থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-২৫, তাং-১৭/০২/১৮)।

    এজাহারভূক্ত আসামীরা হলেন, জেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সম্পাদক কুমড়ি গ্রামের শরীফ মুনীর হোসেন, লোহাগড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সংগঠনিক সম্পাদক দিঘলিয়া ইউপি নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রাথী মাসুদুজ্জামান, দিঘলিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ইমতিয়াজ আহম্মেদ মাসুম, দিঘলিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি ওহিদুর সরদার, কুমড়ি গ্রামের বদিউর রহমানের ছেলে হত্যা সহ প্রায় একডজন মামলার আসামী সোহেল খা, আ’লীগ নেতা শরীফ মুনীর হোসেনের ভাই শরীফ বাকী বিল্লাহ,  কুমড়ি গ্রামের বনি শেখ, কটু শেখ, হেদায়েত আলী. খায়ের শেখ, বাবু শেখ, রওশন শেখ, রিপন দত্ত, নজরুল ফকির ও রব মোল্যা।

    ঘটনার পর এজাহারভূক্ত আসামী শরীফ মুনীর হোসেন ও শরীফ বাকী বিল্লাহ সহ ৩ জনকে গ্রেফতার করে পুলিশ এবং পরে ৮ জন আসামী আদালতে আত্মসমর্পণ করে বর্তমানে জামিনে রয়েছে। এছাড়া ৪ জন আসামী এখনও ধরাছোয়ার বাইরে রয়েছে।

    কুমড়ি গ্রামের (পশ্চিমপাড়া) আব্দুল আহাদ সরদার জানান, স্বাধীনতার পরবর্তী সময়ে দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামে অন্তত ২৩টি হত্যাকান্ড ঘটেছে। সর্বশেষ ঘটনার বলি হয়েছেন জনপ্রিয় চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ। এ পর্যন্ত কোন মামলায় বিচার হয়নি। চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকায় তিনি ২০১৬ সালের ইউপি নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে জয়লাভ করেন। আওয়ামীলীগ থেকে মাসুদুজ্জামান মনোনয়ন পেলেও বিপুল ভোটে পরাজিত হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। এছাড়া প্রতিপক্ষের সন্ত্রাসীরা জোটবদ্ধ হয়ে পলাশকে উপজেলা পরিষদের সামনে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করে ও কুপিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। নির্মম এ হত্যাকান্ডের পর এখনও এলাকার মানুষ স্বাভাবিক হতে পারেনি। এদিকে আসামীরা জামিনে মুক্তি পেয়ে কিছুদিন আগে মাসুদুজ্জামান মোটর সাইকেল মোহড়া সহ বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে।

    কুমড়ি গ্রামের শেখ খাজার মেয়ে মেঘা খানম দাবি করেন, চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ হত্যাকান্ডের ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি না হলে গ্রামের মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে পারবে না।

    এই গ্রামের গৃহবধু চায়না পারভীন জানান, তাদের সন্তানরা স্কুল-কলেজে যেতে ভয় পাচ্ছে। স্কুলে যাতায়াতের সময় আসামীরা ও তাদের লোকজন ধুমকি-ধামকি ও ভয়ভীতি দিচ্ছে। মামলা তুলে না নিলে তাদের সন্তানদের ক্ষতি করা হতে পারে বলে অভিভাবকরা উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে।

    এদিকে লতিফুর রহমান পলাশ নিহতের পর দিঘলিয়া ইউনিয়নে  উপ-নির্বাচনে তার স্ত্রী নীনা ইয়াছমিন বিপুল ভোটের ব্যবধানে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।  তার স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনায় জড়িত পলাতক চার আসামীকে দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানান। পাশাপাশি মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্নের দাবি জানান। ইতিমধ্যে ১১ জন আসামী জামিনে এসে বিভিন্নভাবে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।

    এই মামলা বাদী হয়েছেন নিহতের বড় ভাই বীরমুক্তিযোদ্ধা নড়াইল জেলা পরিষদের সদস্য সাইফুর রহমান হিলু। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ঘটনার সাড়ে ৫ মাস অতিবাহিত হলেও মামলার চার্জশীট দেয়া হচ্ছে না। মামলা থেকে গুরুত্বপূর্ণ আসামীদের বাদ দেয়ার চক্রান্ত হচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে শোনা যাচ্ছে। এছাড়া আসামীদের নাম উল্লেখ করে মামলা করা হলেও তদন্তকারী কর্মকর্তা  এজাহারভূক্ত আসামীদের বাইরে আরো ৩ জনের নাম অর্ন্তভূক্তি করে মামলাটিকে দূর্বল এবং জজমিয়া নাকটের সৃষ্টি করতে বলে প্রতীয়মান হয়েছে। মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের চিঠি আসলেও অজ্ঞাত কারনে চার্জশীট দিতে বিলম্ব করা হচ্ছে এবং দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তর করা হচ্ছে না।  ন্যায্য বিচার প্রাপ্তির আশায় তিনি এ ব্যাপারে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের আন্তরিক হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

    এ ব্যাপারে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা লোহাগড়া থানার ওসি তদন্ত মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘ চেয়ারম্যান পলাশ হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত আলামত উদ্ধার ও অন্যান্য আসামীদের গ্রেফতারের জোর চেষ্টা চলছে।  মামলার তদন্ত কাজ শেষ হলেই আদালতে চার্জশীট প্রদান করা হবে’। তিনজন আসামী অর্ন্তভুক্ত সম্পর্কে বলেন, ‘তদন্ত সোর্সের মাধ্যমে এজাহারভূক্ত আসামীর বাইরে আরো তিনজনের জড়িত থাকার বিষয়ে নিশ্চিত হয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। হত্যাকান্ডে জড়িত থাকার বিষয়ে আদালতে ৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে’। বাদীর সব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘মামলাটি যথেষ্ট গুরুত্বের সাথে দেখা হচ্ছে’।

    এদিকে জনপ্রিয় চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ হত্যা মামলার বাদী ও সাক্ষীদের নিরাপত্তা, দ্রুত চার্জশীট প্রদান ও মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে হস্তান্তরের মাধ্যমে ভূক্তভোগী পরিবারটি যাতে ন্যায্য বিচার পান সেই দাবি করেছেন চেয়ারম্যানের শুভাকাঙ্খীরা।

    প্রসঙ্গত, দিঘলিয়া ইউনিয়নের কুমড়ি গ্রামের মৃত গোলাম রসুল শেখের ছেলে নিহত চেয়ারম্যান লতিফুর রহমান পলাশ  ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ইউপি নির্বাচনে তিনি আ’লীগের মনোনয়ন না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী হিসেবে চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে নির্বাচিত হন। এর আগেও তিনি একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন।