নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি রূখতে হার্ডলাইনে যাচ্ছে সরকার

    0
    256
    ডেস্ক নিউজঃ সম্প্রতি বাস চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহতের পর সড়ক ব্যবস্থাপনার পরিবর্তন আনতে ৯ দফা দাবিতে আন্দোলন করছে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা। তাদের ঘোষিত ৯ দফা দাবির সবগুলোই মেনে নেওয়ার দাবি করা হচ্ছে সরকারের পক্ষ থেকে। তার পরও কেন শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে? এরকম প্রশ্নের উত্তর খুঁজছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা ও রাজনৈতিক সচেতন মহল।

    আন্দোলনের আড়ালে সরকারকে বেকায়দায় ফেলতে সরকারবিরোধী মহল ব্যাপক তৎপরতা চালাচ্ছে বলে মনে করেন অনেকে। এর মধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের গুজব ছড়িয়ে শিক্ষার্থীদের উস্কে দেওয়ার প্রমানও পেয়েছে দেশের গোয়েন্দারা।

    দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং যে কোনো মূল্যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। সরকারি সূত্রগুলো সংবাদ মাধ্যমকে এ তথ্য দিয়ে বলছে, সরকারের কাছে খবর রয়েছে, আগামী চার মাসে রাজপথ দখলসহ নানা ধরনের নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে একটি মহল তৎপরতা শুরু করেছে। বিশেষ করে এই সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। এ প্রশ্নে সরকারের অবস্থান জিরো টলারেন্স। এ নিয়ে পুলিশ সদর দফতরে অনুষ্ঠিত অপরাধ পর্যালোচনা সভায় এ বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে টহল বাড়ানোর জন্য দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা। প্রস্তুত থাকবে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন আন্দোলনে একটি মহল ছাত্রদের ওপর ভর করে ফায়দা লোটার চেষ্টা করেছে।
    দেশকে অস্থিতিশীল করার গভীর ষড়যন্ত্র ছিল বলে একাধিক সংস্থার প্রতিবেদনে তা উঠে এসেছে। নির্বাচনের আগেও বিভিন্ন ধরনের আন্দোলনের আশঙ্কা করছে সরকার। সামাজিক বিষয়সহ নতুন নতুন ইস্যুতে এ ধরনের আন্দোলন গড়ে উঠতে পারে বলে মনে করছেন সরকারের নীতিনির্ধারকরা।
    সে জন্য সরকারের সব সংস্থাকে আরও সতর্ক থাকার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। তবে সম্ভাব্য এসব আন্দোলন কঠোর হাতে দমন করবে সরকার। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও বিজিবিকে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি নিয়ে থাকতে বলা হয়েছে।
    পুলিশ সদর দফতরের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, যে কোনো মূল্যে পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে বিশেষ নির্দেশনা এসেছে নীতিনির্ধারক পর্যায় থেকে। জনগণের জানমালের নিরাপত্তার প্রশ্নে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। ঢাকা ও ঢাকার বাইরে টহল বাড়াতে দেওয়া হয়েছে বিশেষ নির্দেশনা।
    নবগঠিত পুলিশের অ্যান্টি টেররিজম ইউনিটের প্রধান অতিরিক্ত পুলিশ মহাপরিদর্শক মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের সার্বক্ষণিক নজরদারি আছে। যারা যা করছে, এর কোনো কিছুই আমাদের চোখের বাইরে নয়। জাতীয় নির্বাচনসহ অন্য সব অনুষ্ঠানে আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের অন্য ইউনিটগুলো মাঠে দায়িত্ব পালন করলেও এটিইউর সদস্যরা মাঠে এবং মাঠের বাইরে সর্বোচ্চ সতর্ক থাকবেন। কেউ কোনো কিছু করতে চাইলে ধরা না পড়ে কোনো উপায় থাকবে না।’
    গতকাল ঢাকা রেঞ্জের অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপ-মহাপরিদর্শক চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুন জাতীয় শোক দিবস ও ঈদে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ সুপারদের নির্দেশনা দেন। জঙ্গিরা যাতে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে বিষয়ে সজাগ থাকতে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে সঙ্গে নিয়ে মাদক নির্মূলের জন্য পুলিশ সুপারদের নির্দেশ দেন তিনি।
    জানা গেছে, কোটা আন্দোলনের পর নিরাপদ সড়কের দাবিতে গড়ে ওঠা সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে বেশ বেকায়দায় পড়েছিল সরকার। তবে আন্দোলনের সময় বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ও সরকার-সমর্থিত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়ানো আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে হার্ডলাইনে রয়েছে সরকার। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে সার্বক্ষণিক মনিটরিংয়ের মধ্যে রাখা হয়েছে, যাতে কেউ গুজব সৃষ্টি করে অপ্রীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে। অসংখ্য মামলায় অনেক শিক্ষার্থীকে গ্রেফতার করে রিমান্ডেও নেওয়া হয়েছে। ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আলোকচিত্রী শহিদুল আলমসহ বিভিন্ন পেশাজীবীকে। এর মাধ্যমে ভবিষ্যতে নতুন করে যাতে কোনো আন্দোলন গড়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে একটি বার্তা দিতে চায় সরকার।
    সংশ্লিষ্টরা বলছেন, আন্দোলনকারীদের ব্যাপারে সরকার কোনো ধরনের ছাড় দিতে নারাজ। সে জন্যই তাদের বিরুদ্ধে নানা প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে ভবিষ্যতে যারা আন্দোলনের ছক কষছেন তাদের একটি বিশেষ বার্তা দিতে চায় সরকার। তা হলো সাধারণ ছাত্র, সাধারণ জনগণ এবং সর্বোপরি সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দল কাউকেই ছাড় দেওয়া হবে না।
    র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, ‘জাতীয় শোক দিবস, ঈদুল আজহার নিরাপত্তায় আমাদের সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। এর বাইরেও যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সব ধরনের প্রস্তুতি নিয়ে রেখেছেন র্যাবের সদস্যরা।’
    ডিএমপির ক্রাইম কনফারেন্স : জাতীয় শোক দিবস এবং আসন্ন ঈদুল আজহায় আরও সতর্ক থাকার জন্য পুলিশ কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। তিনি বলেছেন, পুলিশের প্রত্যেক সদস্যকে চোখ-কান খোলা রাখতে হবে, কেউ যেন ষড়যন্ত্র করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি না করতে পারে। উঠান-বৈঠকের মাধ্যমে নগরবাসীকে সতর্ক করতে হবে। গতকাল ডিএমপি সদর দফতরে মাসিক অপরাধ পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত কর্মকর্তাদের এসব কথা বলেন তিনি। অপরাধ সভায় উপস্থিত ছিলেন ডিএমপির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং সবগুলো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা।
    অপরাধ সভায় বক্তব্য রাখেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (সিটিটিসি) মনিরুল ইসলাম ও অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন। সাম্প্রতিক আন্দোলন দমন এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার জন্য ডিএমপির প্রত্যেক সদস্যকে ধন্যবাদ জানান তারা। ডিএমপি কমিশনার বলেন, ঈদকেন্দ্রিক রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে এবং নগরবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে উঠান-বৈঠকের মাধ্যমে সবাইকে সতর্ক করতে হবে। অভিযানের সংখ্যা বাড়াতে হবে। তবে নগরবাসী যাতে হয়রানির শিকার না হয় এ বিষয়টিও মাথায় রাখতে হবে। আংশিক সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিন