ইমরান হোসেন তুষারঃ ভোলার কবি মোজাম্মেল হক (রহ.)’র খানকায় (ধর্মীয় স্থান) কোন এক পরন্তু বিকেলে উপস্থিত কাজী নজরুল ইসলাম। বাহারি রঙিন কাগজে খানকা’র দেয়াল সুসজ্জিত দেখে কৌতূহলী নজরুল কবি মোজাম্মেলকে জিজ্ঞেস করলেন, আজ এখানে কিসের আয়োজন ? প্রত্তুরে কবি মোজাম্মেল বলেন, আজ নবীজির মৌলুদ শরীফ (দঃ)। তখন তিনি নজরুলকে একটা না’ত শরীফ লিখার অনুরোধ করেন। সালাতুল আছরের পর কবি নজরুল লিখেন-
দরদ মাখা কণ্ঠে মৌলুদ শরীফের মাহফিলে সমবেতদের গেয়েও শোনান। তখন ভোলার কবি সুফি মোজাম্মল হক আবারও বলেন, তুমি এতোটুকুই দেখলে মাত্র আমার নবীজির সৃষ্টি তত্ত্ব ? মাগরিবের নামাজের পর কবি নজরুল ইসলাম লিখেন,
বিস্মিত কবি মোজাম্মেল হক জিজ্ঞেস করেন, নজরুল এগুলো কোথা হতে পেলে ? প্রত্তুরে নজরুল বলেন, জানি না হযরত!
বেশ কয়েক বছর গত হয়ে গেল কোন একদিন বঙ্গীয় মুসলিম সাহিত্য সম্মেলনে দু’জনের আবার দেখা। ত্রিভুবন আর নূরের দরিয়ার রহস্য ভেদি সেই তত্ত্ব ও তথ্য ব্যাখা করলেন কবি মোজাম্মেল হক বিখ্যাত দুইটি তাফসির ও সিরাত গ্রন্থ হতে। দুনিয়া ও আখিরাতের বাহিরেও তৃতীয় জগতটা হল রূহের জগৎ। যেখানে সমস্ত নবী আলাইহিস সালামগণ আমার নবীজির নবুওয়তের আনুগত্যতা স্বীকার করেছেন। আর নূরের দরিয়া হল-আটাশ হাজার নূরের জগৎ অতিক্রম করে অবশেষে তৎকালীন মক্কায় পিতা হজরত আব্দুল্লাহ (রাঃ)’র পেশানি হয়ে মা হজরত আমিনার (রাঃ) হেরেমে সেই নূরের ঠাঁই। এসব ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ শুনে আশেকে রাসুল কবি নজরুল ইসলাম বললেন, হযরত এই কিতাব গুলো তো আমি কখনো দেখিও নি! শুনিও নি!
বাংলা সাহিত্য ভূবনে নজরুল চির বিস্ময়কর এক অধ্যায়। কি স্থান পায় নি তাঁর সাহিত্য সম্ভারে। পুথিঁগত বিদ্যার বাহিরেও যে জ্ঞানের বিশাল জগৎ আছে। তা হয় তো নজরুলের আগমন না হলে বাঙ্গালীর জানাই হতো না। ঐশী দানে পূর্ণভানে নজরুলের সাহিত্যধারা।
আজ প্রিয় কবির জন্মদিন। নিরন্তর ভালোবাসা প্রিয় কবির জন্য।
উল্লেখিত ঘটনাটি কবি পুত্র সাবেক ভূমি সচিব মোকাম্মেল হক এবং আল্লামা ড.এ কে এম মাহবুবুর রহমান হুযুরের আলোচনা থেকে শোনা।
কবি মোজাম্মেল হক ছিলেন, এক সময়ে বঙ্গীয় প্রাদেশিক আইন পরিষদের চিফ হুইপ কবি মোজাম্মেল হক বিশেষ করে ‘জাতীয় মঙ্গল’এর কবি হিসেবে খ্যাত। ভোলা জেলা সদরের বাপ্তা গ্রামে ৬ সেপ্টেম্বর ১৮৮৩ সালে তার জন্ম এবং ১ আগষ্ট ১৯৭৬ সালে তিনি ইন্তেকাল করেন। এদিকে ২৫ মে, প্রেম,বিদ্রোহ ও মানবতার কবি কাজী নজরুল ইসলামের ১২২ তম শুভ জন্মদিন।