নিজ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ২১ রানে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড

    0
    318

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,অক্টোবর,ক্রীড়া প্রতিবেদকঃ মুহূর্তের ব্যাটিং ধস বদলে দিল দৃশ্যপট। চালকের আসনে থাকা বাংলাদেশ ছিটকে গেল ম্যাচ থেকে। জয়ের আবিরে রাঙানো হলো না সিরিজের প্রথম ম্যাচ। ইনিংসের শেষান্তে বিপর্যস্ত ব্যাটিংয়ে বিফলে গেল ইমরুল কায়েসের সেঞ্চুরি। রকেট সিরিজের প্রথম ম্যাচে শুক্রবার মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশকে ২১ রানে হারিয়ে দিল ইংল্যান্ড। এই জয়ে সিরিজে ১-০ তে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।

    প্রথমে ব্যাট করে বেন স্টোকসের সেঞ্চুরিতে ৮ উইকেটে ৩০৯ রান করে ইংল্যান্ড। জবাবে ইমরুলের সেঞ্চুরির পরও ৪৭.৫ ওভারে ২৮৮ রানে অলআউট হয় বাংলাদেশ।
    দলীয় ২৭১ রানে সাকিব যখন পঞ্চম ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন তখনও জয় থেকে ৩৯ রান দূরে বাংলাদেশ। বল ছিল ৩৯টি। কিন্তু এরপরই পথ হারিয়ে ফেলে বাংলাদেশ। অবিশ্বাস্য, ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয়ে মাত্র ১৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে উল্টো ম্যাচ হেরে বসে টাইগাররা। মোসাদ্দেক-মাশরাফিদের আসা যাওয়ার মিছিলে ইনিংসের শেষটা ধূসর হয়ে যায়। ভরসার কেন্দ্র ইমরুলও স্ট্যাম্পড হয়ে ফিরেন। তাসকিন অভিষিক্ত জ্যাক বলের পঞ্চম শিকার হলে শেষ হয় বাংলাদেশের ইনিংস।
    ৩১০ রানের টার্গেটে খেলতে নামা বাংলাদেশের ইনিংসটা আবর্তিত হয়েছে ইমরুল কায়েসের অসামান্য ইনিংস ঘিরে। সবার সঙ্গে জুটি গড়ে ইনিংসকে এগিয়ে নিয়েছেন এই বাঁহাতি ওপেনার। তামিমের (১৭) সঙ্গে তার ওপেনিং জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ৪৬ রানে। সাব্বিরের সঙ্গে জুটিটা স্থায়ী হয়েছিল ৩৬ রান। ১৮ রান করা সাব্বির বাউন্ডারিতে উইলির দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরত যান। মাহমুদউল্লাহ-ইমরুল জুটিও প্রায় জমে গিয়েছিল। ৫০ রান যোগ করে সেটি ভেঙে যায় মাহমুদউল্লাহ রশিদের শিকার হলে। তিনি ২৫ রান করেন।
    এর মাঝে ৫৫ বলে পঞ্চাশ পূর্ণ করেন ইমরুল। দলীয় ১৫৩ রানে মুশফিক (১২) উইকেট ছুঁড়ে আসলে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। তারপরই আসলে বাংলাদেশকে জয়ের স্বপ্ন দেখায় ইমরুল-সাকিব জুটি। আস্কিং রেটের চাপ কমিয়ে ধীরে ধীরে দলকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ এনে দেন তারা দুজন। ব্যক্তিগত ৮১ রানে পেশীতে টান পড়ে ইমরুলের। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলে তার পথ চলা। তবুও হাল ছাড়েননি এই বাঁহাতি ওপেনার। বুক চিতিয়ে লড়ে ১০৫ বলে ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ইমরুল।
    সেঞ্চুরিয়ান ইমরুলকে যোগ্য সঙ্গ দেন সাকিব। মারকুটে ব্যাটিংয়ে ৩৯ বলেই ৩১তম হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন সাকিব। পঞ্চম উইকেটে তাদের জুটিটা ১১৮ রানে থামে। জ্যাক বলের করা ৪২তম ওভারের তৃতীয় বলে পুল করতে গিয়ে সাকিব ধরা পড়েন মিড উইকেটে। ৫৫ বলে ৭৯ রান (১০ চার, ১ ছয়) করেন তিনি। পরের বলেই মোসাদ্দেক (০) বোল্ড হন। ভরসা হতে পারেননি মাশরাফিও (১)। ৪ রানে ৩ উইকেটের পতনে ম্যাচে পিছিয়ে পড়ে বাংলাদেশ। দলীয় ২৮০ রানে স্ট্যাম্পড হন ইমরুল। তখনই আসলে বাংলাদেশের জয়ের আশা তিমিরে ঢাকা পড়ে। ১১৯ বলে খেলেন ১২২ রানের অসামান্য ইনিংস। যেখানে ছিল ১১টি চার ও ২টি ছয়ের মার। পরে শফিউলও (০) রান আউট হন।  তাসকিন (১) জ্যাক বলের শিকার হন। ইংল্যান্ডের পক্ষে জ্যাক বল ৩৩ রানে ৫টি, আদিল রশিদ ৪টি করে উইকেট পান।
    এর আগে চেনা উইকেটে আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও বাংলাদেশের ক্যাচ মিসের বদন্যতায় বড় স্কোর গড়ে ইংল্যান্ড। তিনটি ক্যাচ ফিল্ডাররা ফেলেছেন। আর তিনটি ক্যাচ মিস হয়েছে বল পড়েছে ‘নো ম্যানস ল্যান্ডে’। কয়েকজন দৌড়ালেও বলের নাগাল কেউ পাননি। ইনিংসের অষ্টম ওভারেই বিচ্ছিন্ন হয় ইংল্যান্ডের ওপেনিং জুটি। শফিউলের বলে মাশরাফির হাতে ক্যাচ দেন ভিন্স (১৬)। দলীয় ৬১ রানে জ্যাসন রয় সাকিবের শিকার হন। তিনি ৪০ বলে ৪১ রান করেন। ২ রান পরই বেয়ারস্টো (০) সাব্বিরের ক্ষিপ্র গতির সরাসরি থ্রোয়ে রান আউট হন। ৬৩ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে বসা ইংল্যান্ডকে পথ দেখায় স্টোকস ও অভিষিক্ত ডাকেটের জুটি।
    তারা দুজন তিনবার জীবন পেয়েছেন। ৪৫ বলেই স্টোকস তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। অভিষেকেই ২১তম ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে হাফ সেঞ্চুরি করেন ডাকেট ৬৩ বলে। ৬৯ রানে তাসকিনের বলে মিড অনে মাহমুদউল্লাহ ও ৭১ রানে আবারও মাশরাফির বলে ডিপ কভারে স্টোকসের ক্যাচ ফেলেন রুবেল। তবে ইংল্যান্ডের তৃতীয় উইকেট জুটি বিচ্ছিন্ন হয় ৩৯তম ওভারে।
    দলীয় ২১৬ রানে শফিউলের নিরীহ ফুলটসে বোল্ড হন ডাকেট। ৫৯ রানে রুবেলের হাতে জীবন পাওয়া ডাকেট ১ রান যোগ করেই ফিরে যান। ভেঙে যায় ১৫৩ রানের জুটি। ডাকেট ফিরলেও সেঞ্চুরি মিস করেননি স্টোকস। ৯৮ বলে পূর্ণ করেন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি। মাশরাফি শিকার হওয়ার আগে ১০০ বলে ১০১ রানের (৮ চার, ৪ ছয়) ইনিংস খেলেন তিনি।
    শেষ দিকে ইংল্যান্ডের স্কোরটা তিনশো পার হয় বাটলারের ঝড়ো হাফ সেঞ্চুরিতে। ৩৩ বলে ৭ম হাফ সেঞ্চুরি করেন তিনি। সাকিবের বলে সাব্বিরের হাতে ক্যাচ দেয়ার আগে ৩৮ বলে ৬৩ রানের (৩ চার, ৪ ছয়) ইনিংস খেলেন বাটলার। ইনিংসের শেষ বলে রান আউট হন ১৬ রান করা ক্রিস ওকস। বাংলাদেশের পক্ষে মাশরাফি, সাকিব ও শফিউল ২টি করে উইকেট নেন।