নিখোঁজ মুজিবুর জীবিত না মৃতঃজিজ্ঞাসা পরিবারের

    1
    228

    আমারসিলেট24ডটকম,১৮জুন,মোজাম্মেল আলম ভূঁইয়াঃসুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি নেতা ও যুক্তরাজ্য প্রবাসী মুজিবুর রহমান মুজিব নিখোঁজের দেড়মাস পেড়িয়ে গেলেও তার সন্ধান মেলাতে পারেনি পুলিশ। অথচ তাকে উদ্ধারের জন্য সিলেট ও সুনামগঞ্জে গঠন করা হয়েছে ৬টি বিশেষ টিম। দেশের সম্ভাব্য বিভিন্ন জায়গায় চলানো হয়েছে বিশেষ অভিযান। মোবাইল ট্যাকিংয়ের সূত্র ধরে ময়মনসিংহ,হবিগঞ্জ ও সুনামগঞ্জ থেকে সন্দেহ ভাজন ৬ব্যক্তিকে আটক করে জেলহাজতে পাঠালেও প্রকৃত অপরাধীরা এখনও রয়েছে ধরাছোয়ার বাহিরে। মুজিবকে উদ্ধারের দাবীতে দলের পক্ষ থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেও পুলিশের ব্যর্থতা নিয়ে উঠেছে না প্রশ্ন। আর এদিকে নিখোঁজ বিএনপি নেতা মুজিবকে জীবিত ফেরত পাওয়ার আশায় অপেক্ষার প্রহর গুনছে তার পরিবার। কিন্তু পুলিশের ব্যর্থতার কারণে মুজিবুরের সন্ধান না পেয়ে হতাশ হয়ে পড়েছে তার অসহায় পরিবার।

    এখন প্রশাসনসহ মিডিয়ার কাছে মুজিব পবিবারের জিজ্ঞাসা তিনি কি জীবিত আছেন নাকি মৃত। একটি সূত্র জানায়,কিছুদিন আগে নগদ দশ কোটি টাকা মুক্তিপন দিলে কিছুদিনের মধ্যে নিখোঁজ বিএনপি নেতা মুজিবুরকে ছেড়ে দেওয়া হবে বলে বাংলাদেশ থেকে তার লন্ডনের বাসার অজ্ঞাত ফোন নাম্বার থেকে নিখোঁজ নেতার ছেলে রিপন আহমেদের কাছে কল করেছিল অপহরনকারীরা। পরবর্তীতে সেই নাম্বারে পুনঃরায় যোগাযোগ করে কাউকে পাওয়া যায়নি। আরো জানাযায়,২০০৩ সালে লন্ডনের ব্রাডি সেন্টারে যুবদলের সভায় বিএনপি নেতা মুজিবুর উত্তেজিত হয়ে দলের এক কর্মীকে ছুরিকাঘাতে হত্যার চেস্টা চালান। এঘটনায় তার ৬মাসের সাজা হয়। এরপর ২০০৪সালের ২৯এপ্্িরল তিনি মুক্তি পান। তারপর বিএনপির নেতা মুজিবুরের গতিবিধি পর্যবেক্ষণ করার জন্য তার শরীরে লাগানো হয় “বডি ট্র্যাকার”। এই ট্র্যাকার নিয়ে মাস কয়েক চলতে হয় তাকে।

    মুজিব নিখোঁজের পিছনে রাজনৈতিক বিরোধের সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা তাও খতিয়ে দেখছে বলে জানিয়েছে আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। কিন্তু মুজিব নিখোঁজের পরপর তার লন্ডনের বাসায় অজ্ঞাত অপহরনকারীদের পাঠানো চিরকুটের সূত্র ধরে এখনও পর্যন্ত কাউকে সনাক্ত করতে পারেনি পুলিশ। অথচ পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে,গত ৪মে রোববার বিকেলে চালকসহ বিএনপি নেতা মুজিবুরকে অপহরণ করেছে অজ্ঞাত অপহরণকারী চক্র। টানা ৫দিন নিখোঁজ থাকার পর মুজিবকে দুইদিনের মধ্যে হত্যা করার হুমকি দিয়ে তার লন্ডনের বাসার লেটার বক্সে একটি চিটি পাঠানো হয়। চিরকুটে বলা হয়েছিল,সিলেট থেকে একটি সিএনজির মাধ্যমে বিএনপির নেতা মুজিবুর রহমান মুজিব ও তার গাড়ি চালককে অপহরণ করা হয়েছে। এবং সিলেটের পৃথক পৃথক বাসায় তাদের দুজনকে আটকে রাখা হয়েছে। চিটিতে আরও উল্লেখ ছিল,অজ্ঞাত অপহরণকারীরা নিজেদের বাচাঁতে মুজিবকে দুইদিনের মধ্যে হত্যা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু অজ্ঞাত অপহরনকারীরা তাদের নাম পরিচয় ঘোপন রাখলেও মুজিব পরিবার কিংবা তার কোন আত্মীয়-স্বজনের কাছে মুক্তিপন বাবদ কোন কিছু দাবী করেনি।

    এমতাবস্থায় অভিযান চালিয়ে সুনামগঞ্জ থেকে ৩জন,ময়মনসিংহ থেকে ২জন ও হবিগঞ্জ থেকে ১জনকে সন্দেহ জনক ভাবে আটক করে জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। সেই সাথে নিখোঁজ বিএনপির নেতা মুজিবুর জীবিত আছেন বলে দাবী করছেন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। কিন্তু আজ পর্যন্ত প্রকৃত অপরাধীদের সন্ধান তারা করতে পারেনি। বিএনপি নেতা মুজিব নিখোঁজের ঘটনায় পুলিশের সন্দেহের তালিকা অনেকে লম্বা হলেও গত দেড়মাস পেড়িয়ে গেলেও মুজিবুর কিংবা তার গাড়িচালক সোহেল এমনকি তাদের ব্যবহৃত গাড়িটি পর্যন্ত উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশের এমন রহস্যজনক তৎপরতা ও দায়িত্ববোধ নিয়ে নানান প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে। সেই সাথে তাদের ব্যর্থতা নিয়ে সমালোচনার ঝড় বইছে সর্ব মহলে। পুলিশের এই দায়িত্বে অবহেলাকে দায়ী করছেন সংশ্লিস্ট সচেতন মহল।

    এদিকে নিখোঁজ বিএনপি নেতার শ্যালক যুক্তরাজ্য প্রবাসী সাংবাদিকদের বলেন-বৃটিশ পুলিশের সাথে তাল মিলিয়ে দেশের পুলিশও মুজিব জীবিত আছে বলে জানালেও এখনও পর্যন্ত তারা মুজিবের কোন সন্ধান দিতে পারেনি। তাদের দায়িত্বে অবহেলাকে আড়াল করতেই মনগড়া বুলি শুনিয়ে যাচ্ছে। আর এদিকে আমরা তার পরিবার উদ্বিগ্ন হয়ে আছি। নিখোঁজ গাড়ি চালক সুহেলের বাবা মুক্তিযোদ্ধা ওয়াহিদুর রহমান অশ্রু ভেজা দু-নয়নের বলেন-একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে দেশ স্বাধীন করার জন্য অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছি। কিন্তু বর্তমান এই সরকারের আমলে তার প্রতিদান হিসেবে আমার ছেলেকে হারাতে হবে আমি কখনো তা ভাবতে পারিনি। এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার হারুন আর রশিদ বলেন-নতুন কোন ক্লো-না পাওয়ায় আপাদত কিছু করা যাচ্ছেনা। তবে পরিকল্পনা অনুযায়ী বিএনপি নেতা মুজিবুর ও তার গাড়ি চালকে উদ্ধারের জন্য তৎপরতা চলছে।

    উল্লেখ্য,গত ৪ মে রোববার বিএনপির গণঅনশন কর্মসূচি শেষে বিকেলে শহরের হাজিপাড়া থেকে চালকসহ প্রাইভেট কার নিয়ে বিএনপি নেতা মুজিবুর সিলেটের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন।এরপর থেকে তারা নিখোঁজ রয়েছেন। এদিকে বিএনপি নেতার নিখোঁজের খবর জেলার সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে প্রতিদিন মিছিল,মিটিং,মানববন্ধন ও সমাবেশে উত্তাল হয়ে উঠছে পুরো জেলাজুড়ে। এছাড়া মুজিবুর রহমান ও তার গাড়ি চালককে অক্ষত অবস্থায় ফিরে পাওয়ার দাবিতে ১১মে রোববার আধাবেলা হরতাল পালনসহ পরিবহণ ধর্মঘট পালন করে জেলা বিএনপি ও জেলা বাস ট্রাক অটোরিক্সা মলিক ও চালক সমিতি।