নায়ক সালমানশাহকে খুন করা হয়েছে দাবী এক প্রবাসিনীর

    0
    186

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৭আগস্ট,ডেস্ক নিউজঃ ঢাকাই চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় অভিনেতা সিলেটের মৌলভীবাজার জেলার কৃতি সন্তান সালমান শাহ আত্মহত্যা করেনি, তাকে খুন করা হয়েছে। এমন দাবি করে রাবেয়া সুলতানা রুবি নামে আমেরিকা প্রবাসী এক বাংলাদেশি অনলাইনে একটি ভিডিও বার্তা ছেড়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, সালমান শাহকে খুনে জড়িত ছিলেন তার স্বামী। চীনাদেরকে দিয়ে এই খুন করানো হয়। এতে জড়িত ছিলেন সালমান শাহ’র স্ত্রী সামিরার পরিবারও। জানা গেছে, দুই মিনিট ৫৯ সেকেন্ডের ওই ভিডিওটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এরই মধ্যে ভাইরাল হয়েছে।

    ভিডিওটিতে সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে কাতর কণ্ঠে রুবি বলেন, এই খুনের বিষয়ে তিনি বিস্তারিত জানেন। বিষয়টি যেভাবেই হোক, আবার যেন তদন্তের ব্যবস্থা করা হয়। তিনি যেভাবেই পারেন আদালতে সাক্ষী দেবেন।

    বাংলা চলচ্চিত্রে তোলপাড় ফেলা নায়ক সালমান শাহ ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর মারা যান। তিনি আত্মহত্যা করেছেন বলে পুলিশকে জানান তার স্ত্রী সামিরা। কিন্তু সালমান শাহের পরিবার একে হত্যা বলে আসছিল।

    তবে গত দুই দশকেও এই মামলার রহস্য উদঘাটন হয়নি। পুলিশ দুই দফা ময়নাতদন্ত করে একে আত্মহত্যাই বলেছিল। কিন্তু নারাজি আবেদন করেছে সালমান শাহের পরিবার। মামলাটির বিচারবিভাগীয় তদন্তও হয়েছিল। এখন মামলাটি পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন-পিবিআইয়ে রয়েছে। সম্প্রতি মামলাটি আবার পুনরুজ্জীবিত করা হয়েছে।

    সালমানের মৃত্যুর ২১ বছর পর রুবি তার ভিডিওতে বারবার বলেছেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, তাকে খুন করা হইছে।’ সালমান শাহের মাকে উদ্দেশ্য করে রুবি বলেন, ‘প্লিজ কিছু একটা করেন, কিছু একটা করেন।’

    রুবি বলেন, ‘সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ খুন হইছে। আমার হাসব্যান্ড এইটা করাইছে আমার ভাইরে দিয়ে। আমার হাসব্যান্ড করাইছে, এইটা সামিরার ফ্যামিলি করাইছে আমার হাজব্যান্ডরে দিয়ে, সবাইরে দিয়ে সব চাইনিজ মানুষ। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, শালমান শাহ খুন হইছে।’

    নিজের নাম প্রকাশ করে ভিডিওতে বলা হয়, ‘আমি রুবি, এখানে ভেগে আসছি, আমি ভেগে আসছি, এই কেস যেন না শেষ হয়। আমি যেভাবে পারি, ঠিকমত যেন আমি সাক্ষী দিতে পারি। আপনারা আমার জন্য দোয়া করেন।’

    তাকেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে জানিয়ে রুবি বলেন, ‘আমারেও খুন করার চেষ্টা করা হচ্ছে, দয়া করে আমার জন্য দোয়া করেন। আমি ভাল নাই, আমি কী করবো আমি জানি না, এতটুক জানি যে সালমান শাহ ইমন আত্মহত্যা করে নাই। ইমনরে সামিরা, আমার হাজব্যান্ড ও সামিরার সমন্ত ফ্যামিলি সবাই মিলে খুন করছে। প্লিজ দয়া করে কিছু করেন।’

    ‘এরা কী মানুষ, পুরা চাইনিজ কমিউনিটি আপনারা জানেন না। আমি পুরা ভেগে আসছি এখানে, কোনো রকমে। দয়া করে একটুখানি কারোরে জানান। কারোরে জানান যে, এটা আত্মহত্যা না, এটা খুন। খুন হইছে। আমার ছোট ভাই রুমিরে দিয়া খুন করানো হইছে। রুমিরেও খুন করা হইছে। আমি জানি না রুমির কবর কোথায় আছে। রুমির যদি কবর থেকে তুলে লাশ তুলে যদি ঠিকমত আবার পোস্টমর্টেম করে, তাহলে দেখা যাবে যে ওরা গলা টিপে মাইরা ফেলছে।’

    ‘এর মধ্যে আমার খালু মুন্তাজ হাসান আছে, আমার খালাত ভাই জুম্মান থাকতে পারে, হামার হাজব্যান্ড চ্যাং লিং চ্যাং, জন চ্যাং নামে বাংলাদেশে পরিচিত ছিল। সাংহাই চাইনিজ রেস্টুরেন্টের মালিক ছিল ধানমন্ডি ২৭ নম্বর রোডে। দয়া করে কাউরে জানান।’

    ‘আগি ভেগে আসছি আমার জানের ওপর, আমি লাস্ট মানুষ যে কি না জানে যে, এটা খুন। আমি এটা প্রমাণ করতে পারব ইনশাআল্লাহ।’

    ‘দয়া করে একটু সাহায্য করেন, একটু সাহায্য করেন। সাংঘাতিক অবস্থা, এরা আমারে বাসার মধ্যে খুন করার প্ল্যান করছিল। আশেপাশে সমস্ত, সুযোগ পায় নাই। আমার জামাইরে আমি জিজ্ঞাস করেছিলাম যে, তুমি আমারে খুন করতে চাও, তাই না? ও বলেছে যে, খুন করলে তো তোরে আমি কবেই খুন করে ফেলতাম।’

    ‘এইটা তো আমি জানি। এখন আবার খুন করতে চায়, কারণ এখন আবার কেইস ওপেন হইছে। প্লিজ দয়া করে কিছু করেন, দয়া করে জানান।’

    সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরীকে উদ্দেশ্য করে ভিডিওতে বলা হয়, ‘ভাবি, আপনার ছেলেরে খুন করা হইছে। আমার যা করার আমি করব, আমি ভেগে আছি ভাবি, নাইলে আমারেও মেরে ফেলত এরা সবাই মিলে। লুসি, আমার হাসব্যান্ড জন, সবাই মিলে আমার বাচ্চাটা, আমার বাচ্চা রিকি আর আমার জানের ওপর অনেক জিনিস আছে ভাবি।’

    ‘দয়া করে কিছু করেন ভাবি, কিছু করেন, কিছু করেন। যেখানেই যান ইনভেস্টিগেশন করেন। এটা খুন ছিল, ইমন আত্মহত্যা করে নাই। সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই, সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই ভাবি, সালমান শাহ আত্মহত্যা করে নাই আপনার ছেলে আত্মহত্যা করে নাই, আপনার ছেলেরে খুন করান হইছে। আমার বাপরেও মনে হয় মাইরা ফেলছে ভাবি, আমি জানি না, আমার ভাইটারেও মাইরা ফেলছে মনে হয়।’

    ‘দয়া করেন, আল্লাহ, আপনি দয়া করেন, কিছু করেন। আসসালামো আলাইকুম আবার। আল্লাহ হাফেজ, বেঁচে থাকলে ইনশাআল্লাহ দেখা হবে’-বলে শেষ করেন রুবি।’

    উল্লেখ্য, ১৯৯২ সালে ‘কেয়ামত থেকে কেয়ামত’ ছবি দিয়ে সালমান শাহের রূপালী মর্দায় যাত্রা শুরু। চার বছরের ক্যারিয়ারে তিনি মোট ২৭টি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন। এর প্রতিটিই দর্শকপ্রিয়তা পায়। বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বকালের ব্যবসা সফল সেরা ১০ চলচ্চিত্রের দুই, তিন ও চার নম্বরে আছে সালমান শাহ অভিনীত সিনেমা।

    সালমানের মৃত্যুর পর তার অগুণতি ভক্তকূল একে আত্মহত্যা বলে মেনে নিতে নারাজ ছিল। প্রিয় তারকার মৃত্যুতে বেশ কয়েকজন তরুণী আত্মহত্যাও করেছিলেন।

    এই মৃত্যুর পেছনে তার সালমান শাহের মা নীলা চৌধুরী শুরু থেকেই সালমান শাহের স্ত্রী সামিরাকে দায়ী করে আসছিলেন। তিন ১১ জনের বিরুদ্ধে মামলাও করেছিলেন। এতে সামিরা ছাড়াও আসামি ছিলেন চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই এবং ভিডিও বার্তা প্রচারকারী রাবেয়া সুলতানা রুবির নামও রয়েছে।

    সালমান শাহের স্ত্রী সামিরা পরে মুস্তাক ওয়াইজ নামে এক ব্যবসায়ীকে বিয়ে করে সংসার করছেন থাইল্যান্ডে। তাদের সংসারে তিনটি সন্তানও রয়েছে। আর রুবি তার স্বামীর সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভানিয়াতে অবস্থান করছিলেন। সুত্রঃসময়ের কণ্ঠস্বর

    ভিডিও লিঙ্কঃ  https://youtu.be/-4YFPfjawUg?t=12