নারী ইউএনও’র যোগদান,জৈন্তাপুর প্রশাসনে গতিশীলতা

    0
    583

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৮এপ্রিল, রেজওয়ান করিম সাব্বির,জৈন্তাপুর সিলেট প্রতিনিধি: এক সময়ের নারী রাজ্য খ্যাত ছিল স্বাধীন জৈন্তিয়া রাজ্যের। ৭১ সালে মুক্তিযুদ্বের মাধ্যমে স্বাধীন  বাংলাদেশের জৈন্তাপুর উপজেলায় ২৬তম একজন সফল নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা যোগদান করেন, কর্মস্থলে যোগদার করার পর নির্বাহীর বাসভবনকে নারীর মত সাজিয়ে নিতে কিছু সময়ের জন্য সিলেটের বাসা থেকে এখানে এসে অফিসের কার্যক্রম চালিয়েজান তিনি।

    এরপর হাতে তাহার নেতৃত্বে প্রশাসনকে দালাল মুক্ত করে সেবা নিতে আসা লোকজনের সাথে কথা বলার সুযোগ সৃষ্ট করেন। এর পর হতে এগিয়ে যাচ্ছে জৈন্তাপুরের প্রায় দেড়লক্ষ নাগরিক। প্রাণ চা ল্য ফিরে এসেছে প্রতিটি ক্ষেত্রে।

    প্রধানমন্ত্রীর ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ভিশন ২০২১এর ধারাবাহিকতা রক্ষায় উপজেলা প্রশাসনে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের প্রধান কাজ হলো উপজেলায় অবস্থিত সকল বিভাগের কাজকর্মের সমন্বয় সাধন। মাদকমুক্ত, যৌতুক-বাল্যবিবাহ রোধ ও জঙ্গিমুক্ত সামাজিক ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ কাজের ভার তাদের উপর।

    এছাড়াও একজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা একটি উপজেলার সকল দায়িত্ব তদারকি করে থাকেন। পাশাপাশি জেলার সঙ্গে সমন্বয় করে তিনি অনেক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। সাধারণ প্রশাসন, রাজস্ব প্রশাসন, ফৌজদারি প্রশাসন ও উন্নয়ন প্রশাসন বিষয়ে দায়িত্ব পালনের ভার উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও)।

    তাছাড়াও অন্যান্য দায়িত্ব হলো আইন-শৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড তদারকি করা, সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম বাস্তবায়ন, সরকারের উন্নয়নমূলক কাজ তদারকি ও বাস্তবায়ন, বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলায় পূর্বপ্রস্তুতি ও পরবর্তী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ, যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়ন।

    ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে বিভিন্ন উন্নয়নমূলক প্রকল্প বাস্তবায়ন, আশ্রয়ণ প্রকল্প, আদর্শ গ্রাম, আবাসন প্রকল্প গ্রহণ ও তাদের বাস্তবায়ন, অসহায় মানুষদের বিভিন্ন আশ্রয়নে সংস্থানকরণ, আবাসনবাসীদের ঋণ প্রদান ও তাদের স্বাবলম্বী করা, উপজাতিদের ঋণ প্রদান, তাদের স্বাবলম্বী করা, মাধ্যমিক বিদ্যালয়, প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা পরিদর্শন ও তাদের শিক্ষার মান উন্নয়ন করা।

    স্থানীয় জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিষ্পত্তি করা, ইউনিয়ন পরিষদে ট্যাক্স আদায়ের জন্য বিভিন্ন পরিকল্পনা করা ছাড়াও কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, দুর্যোগকালীন ত্রাণসামগ্রী বিতরণ ও ভিজিডি, ভিজিএফ, অতিদরিদ্র কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাস্তবায়ন,সরকারের নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে জনগণকে জানানো। জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসকল কাজ অত্যন্ত দক্ষতা বিচক্ষণতার সাথে করে যাচ্ছেন। ফলে প্রশাসনে ফিরে এসেছে প্রানচাঞ্চল্য ও গতিশীলতা।।

    জৈন্তাপুর উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে গত বছর নভেম্বর মাসে যোগ দেন ২৯তম বি,সি,এস এর প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তা মৌরীন করিম। একজন সফল নারী কর্মকর্তা হিসেবে মৌরীন করিম প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে ২০১৫সালে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ নারী কর্মকর্তার পুরস্কার পান। তিনি ২০১৬সালে সিলেট বিভাগের শ্রেষ্ঠ এ,সি ল্যান্ডের পুরস্কার পান।

    মৌরীন করিম জৈন্তাপুরে যোগদান করার পর প্রতিটি সরকারী দপ্তর সহ জনপ্রতিনিধিদের সমন্বয় সাধন করে একটি স্বচ্চ, গতিশীল ও দূর্নীতি মুক্ত প্রশাসন গড়ে তুলতে নিরলস ভাবে কাজ করে যাচ্ছেন। সকল জাতীয় দিবস ও সরকারী কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যাচ্ছেন দক্ষতার সাথে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তুলতে তিনি জৈন্তাপুরের প্রশাসনের প্রত্যেকটি ক্ষেত্রে নতুন ইনোভেশন যুক্ত করে উপজেলা প্রশাসনের ওয়েব পোর্টাল ব্যবহার করছেন।

    ফলে এ বছর সিলেট বিভাগের মধ্যে জৈন্তাপুর উপজেলার ওয়েব পোর্টাল শ্রেষ্ঠ পুরস্কার পেয়েছে। উপজেলায় নারী জাগরণ সৃষ্টি করতে তিনি প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে ছাত্রীদের উদ্বুদ্ধ করছেন। তাঁর অফিসে এসে সাধারণ জনগণের পাশাপাশি নারীরা তাদের সমস্যার কথা অত্যন্ত স্বাচ্ছন্দের সাথে বলতে পারছে। তিনি এসকল সমস্যা দ্রুত সমাধান করছেন।বাল্যবিবাহ রোধে ছুটে চলেন গ্রামেগঞ্জে। মেয়েদের ও অভিবাবকদের  কাউন্সেলিং করে ইতোমধ্যে কয়েকটি বাল্যবিবাহ রোধ করেছেন।

    মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মান প্রদর্শনে তিনি কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করছেন। সকল জাতীয় দিবসে স্কুল কলেজের ছাত্রছাত্রীদের মাঝে মুক্তি যোদ্ধাদের উপস্থিত রেখে তাঁদের মুখ থেকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস শুনান। এ বছর মহান স্বাধীনতা দিবসে উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নাম ও ছবি সংবলিত ক্রেস্ট প্রদান করে সংবর্ধনা প্রদান করা হয়।

    উপজেলার সরকারী উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের পাশাপাশি তিনি বেসরকারি ভাবে উন্নয়ন ও রাস্তাঘাট নির্মাণ করতে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করছেন।কিছুদিন পূর্বে নিজপাট উজানী নগরে স্থানীয় জনগণের উদ্যোগে একটি রাস্তা নির্মাণে তিনি জনগণের পাশে থেকে উৎসাহ প্রদান করেন। সাংস্কৃতিক উন্নয়নে তিনি ঝিমিয়ে পড়া উপজেলা শিল্পকলা একাডেমির নতুন কমিটি গঠন করেন।

    একাডেমির নতুন কার্য্যালয় স্থাপন করে শিক্ষক নিয়োগ এর বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। মৌরীন করিম জৈন্তাপুর উপজেলায় যোগদানের পর সকল ক্ষেত্রে স্বচ্চতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠা করে একটি জনকল্যাণমুখী গতিশীল প্রশাসন হিসেবে জৈন্তাপুরে ফিরে এসেছে প্রানচাঞ্চল্য।