নানা অভিযোগে ৬মাসে ১৩০কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ

    0
    201

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৮মে,ডেস্ক নিউজঃ  ফেসবুক তাদের জনপ্রিয় প্লাটফর্মটি থেকে সন্ত্রাসবাদ, সহিংসতা, হিংসাত্মক কনটেন্ট এবং স্প্যামের বিস্তার দমন করার লক্ষ্যে মাত্র ৬ মাসে ১৩০ কোটি ফেসবুক অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে।

    ফেসবুক এ বছরে তাদের প্রথম প্রান্তিকের কমিউনিটি স্ট্যান্ডার্ডস এনফোর্সমেন্ট রিপোর্টে জানিয়েছে, গত দুই প্রান্তিকে (২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিক এবং ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিক) সোশ্যাল সাইটটি প্রায় ১৩০ কোটি ফেক অর্থাৎ ভুয়া অ্যাকাউন্ট নিষ্ক্রিয় করেছে, যার অধিকাংশই ছিল স্প্যাম ছড়িয়ে দেওয়ার অভিপ্রায়ে কিংবা অবৈধ কার্যকলাপের যেমন স্ক্যাম।

    সাইটটি আরো জানিয়েছে, গত দুই প্রান্তিকে অর্থাৎ ছয় মাসে নীতিমালা ভঙ্গের লাখ লাখ ঘটনা ঘটেছে। যার মধ্যে রয়েছে গালাগালি, গ্রাফিক সহিংসতা, প্রাপ্তবয়স্ক নগ্নতা এবং যৌন কার্যকলাপ, সন্ত্রাসী প্রচারণা, স্প্যাম এবং ভুয়া অ্যাকাউন্ট।

    ফেসবুক স্বীকার করেছে যে, তাদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা শনাক্তকরণ প্রযুক্তি এখনো পর্যাপ্ত দক্ষ নয়- বিশেষ করে ঘৃণাত্মক তথ্য চিহ্নিত করার ক্ষেত্রে। এক্ষেত্রে ফেসবুক মডারেটরদের মাধ্যমে চেক করার প্রয়োজন পড়ে।

    ফেসবুকের প্রোডাক্ট ম্যানেজমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট গাই রোসেন এক বিবৃতিতে বলেন, ‘এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ যে এক্ষেত্রে অগ্রগতির অনেক বেশি প্রয়োজন এবং আমরা সম্ভবত আমাদের পদ্ধতি পরিবর্তন করবো, যার মাধ্যমে আমরা গুরুত্ব এবং কাজের ব্যাপারটি আরো বেশি শিখবো। নীতিমালা ভঙ্গকারী পোস্ট প্রতিরোধে আমাদের এখনো অনেক কাজ করার আছে।’

    প্রতিষ্ঠানটি এর আগে জানিয়েছিল যে, ফেসবুককে সকলের জন্য নিরাপদ রাখতে আরো কয়েক হাজার নতুন মডারেটর নিয়োগের পরিকল্পনা তারা করছে।

    এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে ঘৃণাত্মক মন্তব্যের মাধ্যমে নিয়ম লঙ্ঘনের জন্য ২৫ লাখ পোস্ট মডারেট করেছে ফেসবুক, যার মধ্যে মাত্র ৩৮ শতাংশ পোস্ট স্বয়ংক্রিয় প্রযুক্তি চিহ্নিত করতে পেরেছিল, আক্রমণাত্মক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে পাল্টা আক্রমণাত্মক মন্তব্য কিংবা সারগাজম চিহ্নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

    এছাড়া প্রথম প্রান্তিকে ফেসবুক ৩৪ লাখ সহিংসামূলক কনটেন্ট মুছে ফেলেছে বা সতর্ক করেছে- ২০১৭ সালের শেষ প্রান্তিক থেকে এ বছরের প্রথম প্রান্তিক পর্যন্ত যা ১৩৪ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে প্রায় ৮৬ শতাংশ সহিংসামূলক কনটেন্ট ফেসবুকের প্রযুক্তি খুঁজে বের করেছে, ব্যবহারকারীরা অভিযোগ জানানোর আগেই।

    ফেসবুকের ভাইস প্রেসিডেন্ট গাই রোসেন বলেন, ‘ফেসবুকে সহিংসামূলক কনটেন্ট বেড়ে যাওয়ার কারণ হতে পারে আন্তর্জাতিক মতবিরোধ, যেমন- সাম্প্রতিক সিরিয়ার ঘটনা। প্রায়ই দেখা যায় যখন বিশ্বে বিতর্কিত কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তখন বিষয়টি ফেসবুকে প্রচুর পরিমাণে চলে আসে।’

    বিভিন্ন দেশের সরকার এবং মানবাধিকার সংগঠনগুলোর কাছে ফেসবুক কঠোর সমালোচিত হয়ে আসছে গুজব, ঘৃণাত্মক কনটেন্ট, সন্ত্রাসবাদ, সংঘাতের কাজে সাইটটির ব্যবহার বেড়ে যাওয়ায় এবং প্লাটফর্মটির মাধ্যমে খুন এবং আত্মহত্যার মতো বিষয়গুলো প্রচার পাওয়ায়।

    নিয়মভঙ্গকারী লেখা, ছবি এবং ভিডিও মুছে ফেলতে সফটওয়্যার এবং মডারেটর উভয় মাধ্যম ব্যবহার করছে ফেসবুক।

    গাই রোসেন বলেন, ‘প্রযুক্তি যেমন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখনো খারাপ কনটেন্ট চিহ্নিতে শতভাগ পারদর্শী নয় কারণ বাক্যের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির বৃহত্তর পরিমাণে প্রশিক্ষিত ডাটা প্রয়োজন যার মাধ্যমে বিভিন্ন আচরণের অর্থপূর্ণ বিষয়টি বুঝতে পারবে, কেননা কম ব্যবহৃত ভাষাগুলোর ক্ষেত্রে প্রায়ই এর অভাব দেখা যায়।’

    যা হোক, ব্যবহারকারীদের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়ার আগেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে ভুয়া অ্যাকাউন্ট শনাক্তে ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তির দক্ষতা বেড়েছে। গত দুই প্রান্তিকে (২০১৭ সালের চতুর্থ প্রান্তিক এবং ২০১৮ সালের প্রথম প্রান্তিক) স্প্যামের সঙ্গে জড়িত ভুয়া অ্যাকাউন্টের ১০০ শতাংশের মধ্যে ৯৮.৫ শতাংশ অ্যাকাউন্টই চিহ্নিত করেছে ফেসবুকের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা টুলগুলো।

    এ বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) ৫৮ কোটি ৩০ লাখ ভুয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধ করেছে ফেসবুক, অ্যাকাউন্টগুলো রেজিস্ট্রেশনের কয়েক মিনিটের মধ্যে।

    বিশ্বে এক-চতুর্থাংশের বেশি মানুষ ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে, ফেসবুকের মাসিক ব্যবহারকারীর সংখ্যা ২০০ কোটি। বেশ কয়েকটি দেশের সরকারের পক্ষ থেকে চাপের মুখে ফেসবুক তাদের মডারেটরের সংখ্যাও বাড়িয়ে তুলছে। ২০১৮ সালের শেষে ফেসবুক মডারেটরের সংখ্যা ২০ হাজারে পৌঁছাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

    এক নজরে দেখে নিন, ২০১৭ সালের অক্টোবর থেকে ২০১৮ সালের মার্চ পর্যন্ত, ৬ মাসে কি ধরনের কনটেন্ট নিষ্ক্রিয় করেছে ফেসবুক।