নরসিংদীতে শিশু ইয়ামিন শেখ হত্যার তদন্তে চাচার নাম !

0
552
নরসিংদীতে শিশু ইয়ামিন শেখ হত্যার তদন্তে চাচার নাম !

বিশেষ প্রতিনিধি,নরসিংদীঃ নরসিংদীতে শিশু ইয়ামিন শেখ হত্যার তদন্তে ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী হিসেবে উঠে আসছে শিশুটির চাচার নাম। মুক্তিপণের জন্য অপহরণের পর খুন ! এই পুরো প্রক্রিয়ায় জড়িত দুই তরুণ গ্রেপ্তারের পর এসব তথ্য দিচ্ছে বলে দাবি করেছে পুলিশ। এ কাজে তারা গুগল প্লে গিফট কার্ডের ম্যাজিক কল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে। তবে এ কাজে দেবরের সম্পৃক্ততা আছে বলে বিশ্বাস করছেন না ইয়ামিনের মা।

উত্তর বাখরনগর ইউনিয়নের মালয়েশিয়াপ্রবাসী জামাল মিয়ার ছেলে ইয়ামিন। তার অর্ধগলিত লাশ উদ্ধারের পর বিস্তারিত তদন্ত ও প্রযুক্তির সহায়তা নিয়ে গতকাল শনিবার ৪ ডিসেম্বর ভোরে সিয়াম উদ্দিন (১৭) ও তার বন্ধু রাসেল মিয়াকে (১৭) গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। ১৬১ ধারায় জিজ্ঞাসাবাদের তথ্যের বরাত দিয়ে পুলিশের একাধিক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এর মধ্যে সিয়াম স্বীকার করেছে, সে বালিশচাপা দিয়ে ইয়ামিনকে হত্যা করে। তার আগে শিশুটিকে অপহরণের জন্য ১০ ডলার দিয়ে গুগল প্লে গিফট কার্ড কিনে ম্যাজিক কল নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে তারা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ফাঁকি দিতেই এ পথ বেছে নেওয়া হয়।

পুলিশ বলছে, জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম স্বীকার করেছে, গিফট কার্ড কেনার টাকা দেন শিশুটির চাচা মাহমুদুল হাসান। এ ছাড়া তাকে দুটি ল্যাপটপ ও এক লাখ টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেন। ২৬ নভেম্বর তারা পরিকল্পনা করে। ইয়ামিনকে অপহরণ করে ১০ লাখ টাকা মুক্তিপণ আদায় করাই ছিল তাদের লক্ষ্য।

জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশ জানতে পেরেছে, প্রযুক্তিতে পারদর্শী সিয়াম। তাকে এই অপহরণের দায়িত্ব দেন হাসান। ২৮ নভেম্বর ইয়ামিনকে অপহরণ করা হয়। এ বিষয়ে ম্যাজিক কলে সিয়ামকে সব সময় নির্দেশনা দিয়েছেন শিশুর চাচা।

জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হাসানকে হেফাজতে নিয়েছে পুলিশ। এখন সিয়াম-রাসেল ও হাসানকে মুখোমুখি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। মুক্তিপণ ছাড়া আর কোনো কারণ আছে কিনা, তা ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। যদিও গত শুক্রবার পর্যন্ত ভাতিজা হত্যায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে সোচ্চার ছিলেন হাসান।

পুলিশ বলছে, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে সিয়াম জানায়, হাসান ব্যবসায় মার খেয়েছেন। ৮-১০ লাখ ঋণ হয়েছে। এ জন্য নিজের ভাতিজাকে অপহরণের ছক আঁটেন তিনি। ইয়ামিনকে ওদের বাড়ির পাশের দোকানের সামনে থেকে খেলার ছলে কৌশলে নিয়ে যায় সিয়াম। এ সময় সিয়ামের সঙ্গে তার বন্ধু রাসেলও ছিল। আগে থেকে চেনাজানা ও প্রতিবেশী হওয়ায় শিশু ইয়ামিনও সিয়ামের সঙ্গে যাওয়ার সময় কান্নাকাটি করেনি। শিশুটিকে নিয়ে সিয়াম তার খালি বাড়িতে যেতেই সে কান্নাকাটি শুরু করে। বিষয়টি হাসানকে জানালে তিনি শিশুটিকে বালিশচাপা দেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপরই তাকে বালিশচাপা দিয়ে হত্যা করে রাসেল। আর শিশুটির হাত-পা চেপে ধরে সিয়াম। অপহরণের ৩০ মিনিটের মধ্যে তাকে হত্যার পর লাশ প্লাস্টিকের বস্তায় পেঁচিয়ে গোলাঘরের পাটাতনের ওপর রেখে দেয় তারা। তিন দিন পর লাশটি রাতের অন্ধকারে নিয়ে বাড়ির পাশে একটি ডোবার মধ্যে ফেলে তারা।

সিয়াম জানায়, তার দুই বোন মাদ্রাসায় পড়ে। তাদের ক্ষতি করার হুমকি দিয়ে হাসান তাকে এ কাজে যুক্ত হতে বাধ্য করেন। তাদের এক লাখ করে টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেওয়া হয়। ইয়ামিনকে হত্যার পর সে তাদের বাড়িতে গিয়ে তার মাকে সান্ত্বনাও দেয়। নানা নাটকীয়তার পরও তারা মুক্তিপণের টাকা পায়নি।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ের একটি সিমের কলরেকর্ডের সূত্র ধরে সিয়াম ও রাসেলকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ।

ইয়ামিনের মা শামসুন্নাহার গনমাধ্যমকে বলেন, “খুনের সঙ্গে আমার দেবর মাহমুদুল জড়িত- এটা হতেই পারে না। ছেলের বাবা ১৪ বছর ধরে মালয়েশিয়া থাকে। সর্বশেষ সাত বছর আগে একবার এসেছিল। তিন সন্তানকে আমি বড় করছি।“

জানা যায়, ইয়ামিনকে অপহরণের তিন দিন পর তার মা বাদী হয়ে কয়েকজনকে আসামি করে রায়পুরা থানায় জিডি করেন। শুক্রবার সকালে উত্তর বাখরনগর এলাকায় একটি ডোবা থেকে ইয়ামিনের গলিত লাশ উদ্ধার করা হয়। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহূত স্কচটেপ, বালিশ ও অপহরণের ঘটনায় ব্যবহূত মোবাইল ও সিম আলামত হিসেবে উদ্ধার করা হয়।

নরসিংদীর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) সাহেব আলী পাঠান গনমাধ্যমকে বলেন, টিভিতে ‘সিআইডি’ ও ‘ক্রাইম প্যাট্রল’ সিরিয়াল দেখে অনেকে খুনের এমন ছক সাজিয়ে থাকে।