নবীনগরে কওমি মাদ্রাসা ছাত্রী আমিনা হত্যাকাণ্ডের রহস্য

    0
    243

    উদঘাটন হয়নি।কিশোরী ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা শেষে প্রধান শিক্ষক (মোহতামিম) মাওলানা মোস্তফা লাশ মাদ্রাসার চিলেকোঠায় ঝুলিয়ে রাখেন -এমন অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশ মোস্তফাসহ চার শিক্ষককে গ্রেপ্তার করলেও ঘটনার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি তাদের কেহ।

    বি বাড়িয়া প্রতিনিধিঃ ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলার সলিমগঞ্জ কওমি পন্থি মাদ্রাসা “জান্নাতুল ফেরদাউস মহিলা মাদ্রাসা”র শিক্ষার্থী আমেনা খাতুন হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়নি। কিশোরী ওই ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যাশেষে প্রধান শিক্ষক (মোহতামিম) মাওলানা মোস্তফা লাশ মাদ্রাসার চিলেকোঠায় ঝুলিয়ে রাখেন -এমন অভিযোগে মামলা হয়েছে। পুলিশ মোস্তফাসহ চার শিক্ষককে গ্রেপ্তার করলেও ঘটনার ব্যাপারে স্পষ্ট ধারণা দিতে পারেনি তাদের কেহ।

    এদিকে মাদ্রাসা হোষ্টেলে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ নিয়ে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে সলিমগঞ্জ। ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচার দাবিতে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসি  মানববন্ধন  ও বিক্ষোভ মিছিল করেছেন। বুধবার বিকেলে ছয়ফুল্লাকান্দিতে অনুষ্ঠিত মানববন্ধন  ও মিছিলে অংশ নেন বিপুল সংখ্যাক মানুষ।

    নবীনগরের সাংসদ মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল বলেন, ‘বিশ্বাসই করতে পারছি না আমার এলাকায় এমন ঘটনা ঘটতে পারে। ইতিমধ্যে পুলিশকে ঘটনার রহস্য বের করাসহ সকল অপরাধীকে ধরতে নির্দেশ দিয়েছি। আর অনুমতিবিহীন এ ধরণের সব মাদ্রাসার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্টদের কঠোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।’

    এদিকে ঘটনা নিয়ে জনমনে নানা প্রশ্ন তৈরী হয়েছে। মাদ্রাসার সকল আবাসিক ছাত্রীকে তাদের অভিভাবকরা বাড়ি নিয়ে গেছেন। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে মাদ্রাসাটি তালাবন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন।

    তিনতলা বিশিষ্ট মোস্তফা মার্কেটের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় মাদ্রাসাটি অবস্থিত। স্থানীয় মাওলানা আবদুল মান্নান কয়েকজন সহযোগি নিয়ে পাঁচ বছর ধরে পরিচালনা করে আসছেন মাদ্রাসাটি। এটির দ্বিতীয় তলায় অনেকটা অন্ধকার ঘরে আবাসিক ছাত্রীদের হোষ্টেলে ৫২ জনের বসবাস। তৃতীয় তলায় যেখানে প্রায় ২০০ ছাত্রীর ক্লাশ নেয়া হয় সেখানকার পরিবেশ বেশ নোংরা। এখানে পরিবেশসহ নানা ঘটনা বাইরে থেকে কারো দেখা সম্ভব ছিল না। ১৪ জন শিক্ষক ছাড়া মাদ্রাসায় প্রবেশের অনুমতি ছিল না কারো। মাদ্রাসাটির প্রধান শিক্ষক স্থানীয় বাসিন্দা মাওলানা মোস্তফা দীর্ঘদিন ধরে বাজারের মসজিদে ইমামতি করছেন। তার মাধ্যমে ছাত্রী ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনা মানতে কষ্ট হচ্ছে স্থানিয়দের।
    স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম এলাহী সংবাদ মাধ্যমকে বলেন,‘অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ছাত্রী নিবাস বানিয়ে কিভাবে মাদ্রাসা চলছিল তা বিশ্বাস করা কঠিন। যে ঘটনা ঘটেছে তাতে মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির চরম গাফিলতি রয়েছে। বৈধ অনুমোদন ছাড়া এ ধরনের মাদ্রাসা পরিচালনা বন্ধের পাশপাশি কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।’

    মাদ্রাসার পাশেই রয়েছে একটি বিউটি পার্লার। সেখানকার এক নারী কর্মীর দাবি, ঘটনার পরপরই দুইজন বোরখা পরিহিত নারী মাদ্রাসা থেকে বেরিয়ে গেছেন। সন্দেহ হলে তাদের চেষ্টা করেও আটকানো যায়নি।

    উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মাইনুদ্দিন আহমেদ বলেন,‘এটি যে হত্যাকান্ড তাতে সন্দেহ নেই। তবে এর সঙ্গে মাদ্রাসার প্রধানসহ কয়েকজন হুজুর জড়িত, তা বিশ্বাস করতে পারছিনা। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।’

    ছাত্রীর বাড়ি কাঞ্চনপুর গ্রামে শোকের মাতম চলছে। ছাত্রীর মা সেলিনা খাতুন সমকাল কে বলেন, ‘মাত্র ২৫দিন আগে আমেনার বাবা সৌদী প্রবাসী মমিনুল হক একমাত্র মেয়েকে মাদ্রাসায় পৌঁছে দেন। মেয়ের এমন নির্মম মৃত্যুর খবর বাবাকে জানানো হয়নি।’
    এ ঘটনায় দায়ের করা মামলার বাদি সেলিনা খাতুন বলেন, ‘আমি শতভাগ নিশ্চিত আমার মেয়েকে মাদ্রাসার প্রধান শিক্ষক ধর্ষণ শেষে গলা টিপে হত্যা করেছে। পরে লাশ ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রেখে ওরা নাটক সাজিয়েছে। আমি এদের সকলের ফাঁসি চাই।’

    নবীনগর থানার ওসি রনোজিত রায় বলেন,‘এটি ধর্ষণ, হত্যা নাকি আত্মহত্যা, তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলেই বলা যাবে। মামলাটির তদন্ত শুরু হয়েছে। ঘটনায় জড়িত সকলকেই আইনের আওতায় আনা হবে।’

    সোমবার রাতে মাদ্রাসার আবাসিক ছাত্রী আমেনার ঝুলন্ত লাশ চতুর্থ তলার চিলেকোঠা থেকে উদ্ধার করে পুলিশ। এ ঘটনায় ছাত্রীর মা বাদি হয়ে মাদ্রাসার প্রধানসহ ছয়জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করেছেন। তাদের বিরুদ্ধে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগ আনা হয়েছে। অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষকসহ চারজনকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।