নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার আছেন কাগজে কলমেঃবাস্তবে নেই!

    0
    361

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১০মে,মতিউর রহমান মুন্নাঃ প্রয়োজনীয় লোকবল ও অব্যবস্থাপনার কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে নবীগঞ্জবাসী। নবীগঞ্জ উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটির স্বাস্থ্যসেবা কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ইউনিয়ন পর্যায়ে উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে ২২ জন ডাক্তারের স্থলে ১৯ জন ডাক্তার দিয়ে চলছে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম।

    এর মধ্যে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ অর্ধেন্দু দেব’র পদোন্নতি হয়ে সিভিল সার্জন হিসেবে অন্যত্র বদলী হওয়ায় ওই পদটি দীর্ঘদিন ধরে খালি রয়েছে।

    এর বিপরীতে চট্রগ্রাম মেডিকেল কলেজের ডাঃ মখলিছুর রহমানকে ভারপ্রাপ্ত টিএইচও হিসেবে নিয়োগ দিলেও তিনি অদ্যাবধি পর্যন্ত যোগদান না করায় অত্র হাসপাতালের জুনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ মুছা হাওলাদার ভারপ্রাপ্ত টিএইচও হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে দীর্ঘদিন ধরে আর.এম.ও ও এ্যানেস্তেসিয়া ডাক্তারের পদ শুণ্য রয়েছে।

    গাইনী ডাঃ সুর্বণা পোদ্দার যোগদানের পর একদিন ডিউটি করেই বাড়ি চলে গেছেন। রির্পোট লেখা পর্যন্ত তাকে হাসপাতালে দেখা যায়নি। এর মধ্যে ডেন্টাল সার্জন ডাঃ ইয়াসীন জাহান আফরোজ অনিয়মিত ডিউটি করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কাগজ কলমে ১৯ জন ডাক্তারের পোষ্টিং দেখালেও বাস্তবে অনেককেই তাদের কর্মস্থলে দেখা যায় না।

    ৯ জন নার্সের মধ্যে রয়েছেন ৭ জন। দীর্ঘদিন ধরে নার্সের ২টি পদ শুণ্য রয়েছে। ওই ৭ জনের মধ্যে ১ জন রয়েছেন মাতৃকালীন ছুটিতে, একজন নানা অজুহাতে হাসপাতালে আসছেন না। দীর্ঘদিন ধরে অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিনটি রয়েছে বিকল। জেনারেটরটি অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

    এছাড়াও দীঘলবাক ইউপি উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তার নিয়োগ দিলেও সেখানে কোন উপ স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই। ওই ডাক্তার উপজেলা সদরে ডিউটি করছেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। সদর হাসপাতালে গুরুত্বপূর্ণ পদে ৩ জন ডাক্তারের পদ শুণ্য থাকায় রোগীর চাপ সামলাতে না পেরে মেডিক্যাল এসিষ্ট্যান্ট দিয়ে জরুরী বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা সেবা কার্যক্রম চালানো হচ্ছে।

    অপরদিকে ময়লাযুক্ত বিছানাপত্র পরিস্কার পরিচ্ছন্নতার অভাব এবং নিম্নমানের খাবার পরিবেশনের ব্যাপক অভিযোগ রয়েছে। অভিযোগ আছে জরুরী বিভাগ ও ডিসপেনসারীতে ব্যাপক অনিয়ম, দূর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের। টাকা ব্যতিত কোন কাজই হয় না। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে সার্টিফিকেট বাণিজ্য। রয়েছে বালিশ, বিচানা চাদর, মশারীসহ প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও ঔষধের তীব্র সংকট। হাসপাতালের প্রায় সব ক’টি বৈদ্যুতিক পাকা অকেজো। ভর্তিকৃত রোগীরা অসহনীয় গরমে চরম অতিষ্ট রয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

    এ ছাড়া হাসপাতালের বহিঃবিভাগে ময়লা আবর্জনা ও দূর্গন্ধের জন্য ভর্তিকৃত রোগীরা সস্থ্য হওয়ার বদলে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। চরম অব্যবস্থাপনা রয়েছে। যেখানে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যার যার মতো করে ডিউটি করছেন। ফলে আগত রোগীরা সঠিক চিকিৎসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে।

    ইউনিয়ন উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নিয়োগপ্রাপ্ত বেশীর ভাগ ডাক্তারগণ যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করায় জন দূর্ভোগ চরম আকার ধারণ করেছে। স্থানীয়ভাবে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হয়ে অনেকেই উপজেলা সদরে এসে ভিড় করেন।

    কিন্ত এখানেও পর্যাপ্ত পরিমানে চিকিৎসক না থাকায় যথাযথ ভাবে চিকিৎসা সেবা পাচ্ছেন না। প্রতিদিন যে পরিমান রোগী হয় তা সামাল দিতে না পেরে মেডিক্যাল এসিষ্টেন্ট, কখনও উপ-স্বাস্থ্য কেন্দ্র থেকে ডাক্তার এনে জরুরী বিভাগসহ বিভিন্ন বিভাগে চিকিৎসা সেবা প্রদান করা হচ্ছে। দীর্ঘদিন ধরে জেনারেটর নষ্ট।

    ফলে বিদ্যুৎ চলে গেলে ভুতুরে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করতে একটি অত্যাধুনিক এক্স-রে মেশিন স্থাপিত হলেও দীর্ঘ কয়েক বছর যাবৎ মানব দেহে তা ব্যবহার হয়নি প্রয়োজনীয় জিনিস পত্রের অভাবে।

    নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের ৩১ শয্যা থেকে ৫০ শয্যায় উন্নিতকরণের কাজ চলছে প্রায় দেড় বছর ধরে। ওই কাজে ব্যাপক অনিয়ম, দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নবীগঞ্জবাসী অনতিবিলম্বে নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের শুন্য পদে ডাক্তার, জেনারেটর মেরামতসহ এক্স-রে মেশিন সচল এবং প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র ও ঔষধ সরবরাহের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন।