নবীগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩ জনের মৃত্যু

0
591
নবীগঞ্জে ২৪ ঘন্টায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে মুক্তিযোদ্ধাসহ ৩ জনের মৃত্যু

নূরুজ্জামান ফারুকী, বিশেষ প্রতিনিধি: হবিগঞ্জ জেলার নবীগঞ্জ উপজেলায় এক দিনের ব্যবধানে বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং মহিলাসহ করেনায় আক্রান্ত ও করোনার উপসর্গ নিয়ে ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। বৃহস্পতিবার ১৫ জুলাই সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে করোনায় প্রাণ গেল বীর মুক্তিযোদ্ধা সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মৌলদ হোসেন কাজলের। একই দিন কুহিনুর খান (৩৫) নামে সাবেক এক ছাত্র নেতা ও ওমান প্রবাসী করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেছেন। নিহত কুহিনুর খান পুর্ব দেবপাড়া গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুল মতব্বিরের ছেলে। বিকাল ৫টায় তার জানাজার নামাজ শেষে দাফন সম্পন্ন হয়েছে। শনিবার রাতে তার শ^াসকষ্ট শুরু হলে রাতেই তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসারত অবস্থায় বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে। গত ১২ জুলাই সোমবার বিকালে বীর মুক্তিযোদ্ধা নবীগঞ্জ উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ডেপুটি কমান্ডর মৌলদ হোসেন কাজল শহরের ওসমানী রোডস্থ বাসায় অসুস্থ্য হলে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে করোনা পরীক্ষায় তার রিপোর্ট পজেটিভ আসে। তার পর করোনা ইউনিটে রেখে তার চিকিৎসা চলে। এক পর্যায়ে বৃহস্পতিার (১৫ জুলাই) সকাল ৮ টায় চিকিৎসারত অবস্থায় তিনি মারা যান। তিনি উপজেলার কুর্শি ইউপির সাদুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা।

এদিকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ করোনায় আক্রান্তে মৃত্যুর সনদপত্র দিয়ে ছাড়পত্র দেয়। এই তথ্য গোপন রেখে নবীগঞ্জ শহরের ওসমানী রোডস্থ বায়তুন নুর জামে মসজিদ প্রাঙ্গনে ১ম জানাজার নামাজ অনুষ্টিত হয়। এতে বিপুল সংখ্যক মানুষের সমাগম ঘটে। ২য় জানাজা নিহতের গ্রামের বাড়ি সাদুল্লাহপুর গ্রামে অনুষ্ঠিত হওয়ার পুর্ব মুহুর্তে উপজেলা নির্বাহী অফিসার শেখ মহি উদ্দিন মৃত্যুর সনদপত্র খোজেন। কাগজপত্র পর্যালোচনায় দেখা যায় বীর মুক্তিযোদ্ধা মৌলদ হোসেন কাজল করোনায় মৃত্যু হয়েছে। পরে স্বাস্থ্য বিধি মেনে গার্ড অব অনার প্রদান করা হয়। তারপর ৩ ফুট দুরত্ব বজায় রেখে সীমিত আকারে বেলা ৫ টায় জানাজার নামাজ শেষে পরবর্তীতে সন্ধ্যায় পিপি পরিহিত লোকজন দ্বারা বিশেষ ব্যবস্থাপনায় তার দাফন সম্পন্ন হয়। এর আগে ১৪ জুলাই বুধবার সিলেট থেকে ঢাকা নিয়ে যাবার পথে রুনা ফেরদৌস (৫২) নামের এক মহিলা করোনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। এই প্রথম একজন নারী করোনায় মারা গেছেন। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা নমুনা পরীক্ষায় ৪২ জনের মধ্যে আক্রান্ত হয়েছে ২৯ জন। এ পর্যন্ত সরকারী হিসেবে ৩ জনের মৃত্যুর হিসাব থাকলেও বেসরকারীভাবে এ উপজেলায় করোনায় এবং করোনার উপসর্গ নিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এদিকে গত ১৫ দিনে ১৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষায় ৯৩ জনের শরীরে করোনা সনাক্ত হয়েছে। এভাবে করোনা লাফিয়ে বাড়তে থাকায় সংশ্লিষ্ট মহল চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
হাসপাতাল ও বিভিন্ন সুত্রে জানা যায়, নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি ইউনিয়নের উমরপুর গ্রামের মোঃ বদরুজ্জামানের স্ত্রী রুনা ফেরদৌস নামের এক মহিলা সিলেটস্থ নিজ বাসায় করোনায় আক্রান্ত হলে সিলেট উইমেন্স হাসপাতালে ভর্তি হন। সেখানে তার অবস্থার অবনতি ঘটলে বুধবার সকালে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা নিয়ে যাবার পথে তার মৃত্যু ঘটে। কয়েক দিন ধরে জ¦র, সর্দিতে ভোগছিলেন উপজেলার দেবপাড়া ইউপির পুর্ব দেবপাড়া গ্রামের কুয়েত প্রবাসী আব্দুল মতব্বীরের ছেলে ওমান প্রবাসী ও সাবেক ছাত্রদল নেতা কুহিনুর খান। বুধবার রাতে হঠাৎ তার শ^াসকষ্ট দেখা দেয়। পরিবারের লোকজন রাতেই তাকে সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করেন। বৃহস্পতিবার (১৫ জুলাই) সকাল টার দিকে সেখানে তার মৃত্যু হয়। ধারনা করা যাচ্ছে, করোনা উপসর্গ নিয়েই তার মৃত্যু হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে অনেক জ¦র, সর্দি, কাশিঁ, শ^াসকষ্ট নিয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তারা কোনভাবেই নমুনা পরীক্ষা দিচ্ছেন না। ফলে দেখা যাচ্ছে চিকিৎসারত অবস্থায় করোনা উপসর্গ নিয়েই তাদের মৃত্যু হচ্ছে।
এদিকে নবীগঞ্জ উপজেলায় এ পর্যন্ত মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে এবং করোনা উপসর্গ নিয়ে ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের মধ্যে করোনার প্রথম ঢেউয়ে মারা যান পৌর এলাকার গয়াহরি গ্রামের জগদিশ দাশ (৬২), করগাও ইউপির মুক্তাহার গ্রামের গনেন্দ্র লাল দাশ (৬৫) ও নবীগঞ্জের তাজপুর (মাধবপুর) গ্রামের কৃতি সন্তান গৃহায়ণ ও গণপুর্ত মন্ত্রাণালয়ের (পি.ডাব্লিউ.ডি) অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী (অতিরিক্ত সচিব) ইঞ্জিনিয়ার চিত্ত রঞ্জন দাশ (৭০), দ্বিতীয় ঢেউয়ে মারা যান করগাও ইউপির শেরপুর গ্রামের মৃত হাজী রজব আলীর ছেলে শাহ এমরান আলী (৬৫), বড় সাখোয়া গ্রামের মালয়েশিয়া প্রবাসী আব্দুল মাহিদ (৫৫), নবীগঞ্জ পৌর এলাকার চরগাওঁ গ্রামের মৃত মামদ মিয়া চৌধুরীর পুত্র কামরুল মিয়া (৪৭), ইনাতগঞ্জ ইউপির ঘোলডুবা গ্রামের মৃত কঠা মিয়া চৌধুরীর ছেলে খালেদ আহমদ চৌধুরী (৫৬), ৫ জুলাই রাতে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে মারা যান ইনাতগঞ্জ ইউপির চানপুর গ্রামের বিমল দাশ (৩৮)। ১১ জুলাই দিবাগত রাতে আউশকান্দি ইউপির উত্তর দৌলতপুর গ্রামের আব্দুল হক সর্দার। এর প্রায় ৩/৪ মাস পুর্বে তার ছোট ভাই আব্দুল ওয়াহিদ সর্দার (৪০) করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু বরণ করেন। ১৪ জুলাই করোনায় মৃত্যু হলো উপজেলার আউশকান্দি ইউপির উমরপুর গ্রামের বদরুজ্জামানের স্ত্রী রুনা ফেরদৌস। ১৫ জুলাই সকালে সিলেট ওসমানী মেডিকেলে সর্ব শেষ করোনায় মৃত্যু হয় বীর মুক্তিযোদ্ধা মৌলদ হোসেন কাজল এবং একই দিন করোনা উপসর্গ নিয়ে মারা গেলেন সাবেক ছাত্র নেতা ও ওমান প্রবাসী কুহিনুর। নিহতের পরিবার এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এদিকে গত ১৫ দিনে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১১৭৩ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়। এরমধ্যে ৯৩ জনই করোনা সনাক্ত হয়েছে। জুন মাসে ১১০ জনের নমুনা সংগ্রহ হলে সনাক্ত হয়েছিল ২৩ জন। এ পর্যন্ত হোম আইসোলেশনে রয়েছেন ৮৮ জন। হাসপাতালে ভর্তি আছেন ৫ জন। শ^াসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় ২ জনকে প্রেরন করা হয়েছে সিলেট শামছুদ্দিন হাসপাতালে। এদের মধ্যে আব্দুল হক সর্দার মারা গেলেন রবিবার দিবাগত রাতে। করোনায় এ পর্যন্ত মোট নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল ১ হাজার ৯২০ জনের। এরমধ্যে ৩৩৭ জনের সনাক্ত হয়েছে। সুস্থ্য হয়েছে এ পর্যন্ত ২৩১ জন। তবে ইদানিং দেখা যাচ্ছে মানুষের মাঝে পরীক্ষা করানোর প্রবনতা কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। ১লা জুলাই থেকে ১৫ জুলাই পর্যন্ত ১৭৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে ৯৩ জনের দেহে করোনা পজেটিভ রিপোর্ট এসেছে। আক্রান্তের হার প্রায় ৬৬%। ইতিপূর্বে আক্রান্তদের মধ্যে গতকালের রিপোর্ট অনুযায়ী ১জনও সুস্থ হননি। আক্রান্তদের মধ্যে ৯৩ জন রয়েছেন হোম আইসোলেশনে। ৭জন ছিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে করোনা ইউনিটে।
নবীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের টিএইচও ডাঃ আব্দুস সামাদ বলেন, প্রতিদিন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি সকলকে স্বাস্থ্য বিধি মেনে চলাচল এবং সর্তক থাকার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন।