নবীগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় কলেজ ছাত্র নিহতের ঘটনায় ভাংচুর

    0
    208

    “কলেজ কতৃপক্ষের উদাসীনতা,আন্দোলনে উস্কানির অভিযোগ,স্প্রীড ব্রেকার নির্মানের দাবীতে ছাত্রদের বিক্ষোভ,গাড়ীর গ্লাস ভাংচুর”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৮মার্চ,নবীগঞ্জ প্রতিনিধিঃ নবীগঞ্জে সড়ক দূর্ঘটনায় পানিউমদা রাগীব রাবেয়া কলেজ ছাত্র মাহফুজ আহমেদ(১৯) নিহত হওয়ার ঘটনায় ঘাতক চালকের ফাঁসির দাবী ও স্প্রীড ব্রেকার নির্মানের দাবীতে ফুঁসে উঠেছে উক্ত কলেজের শিক্ষার্থীসহ এলকার উত্তেজিত জনতা। গত মঙ্গলবার দুপুরে কলেজের বিক্ষোব্দ ছাত্ররা মিছিল দিয়ে ঢাকা সিলেট মহা সড়কের পানিউমদা এলাকায় অবরোধ করে রাখে এবং দুটি গাড়ী ভাংচুর করে। এসময় উভয় দিকে কয়েক শতাধীক যানবাহন আটকে থাকে।

    এতে যাত্রীদের চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। পরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও থানার ওসি ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করেন। পরে কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিয়ে জরুরী এক বৈঠক করা হয়।

    জানা যায়, গত সোমবার বিকেলে উপজেলার খাগাউড়া নোয়াগাঁও  গ্রামের মহিবুর মিয়ার ছেলে ও স্থানীয় রাগিব রাবেয়া হাই স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র মাহফুজ কলেজ থেকে ক্লাস শেষে ঢাকা সিলেট মহাসড়ক হয়ে বাড়ি যাওয়ার জন্য (হবিগঞ্জ-থ ১১-৩১৪৬) নম্বারের সিএনজি অটোরিক্সা যোগে রওনা হন। পথিমধ্যে বড়গাঁও এলাকায় যাওয়া মাত্র হবিগঞ্জ-সিলেট এক্সপ্রেস পরিবহনের একটি বাসের সাথে মুখোমুখি সংঘর্ষ বাধে। এতে মাহফুজ (১৯) ঘটনাস্থলেই নিহত হয়। অন্যান্য যাত্রীদের প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়।

    এ সময় স্থানীয় উত্তেজিত জনতা বিক্ষোভ মিছিল করে মহা সড়ক অবরোধ করে রাখেন। পরে পুলিশ ও নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিবর্গের হস্তক্ষেপে প্রায় আড়াই ঘন্টা পর পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে যান চলাচল ফের শুরু হয়। এবং সেই গাড়ীটি আটক করে রাখা হয়। নিহত মাহফুজ কলেজের ছাত্র হওয়ায় বিবেচনা করে ময়না তদন্ত না করেই পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

    এদিকে, গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে হঠাৎ করে ৫ থেকে ৬ শত শিক্ষার্থী হাতে লাঠিসোটা নিয়ে বিক্ষোভ মিছিল বের করে। এক পর্যায়ে মহসড়কে অবস্থান করে সড়ক অবরোধ করে রাখে। এসময় ঘাতক চালকের ফাঁিসর দাবী এবং স্প্রীড ব্রেকারের দাবীতে বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে মিছিল দিতে থাকেন। হঠাৎ উত্তেজিত ছাত্ররা গাড়ীর উপর ঢিল ছুরে মারেন এমনকি মিতালি পরিবহনের একটি গাড়ী সহ দুটি গাড়ীর গ্লাস ভাংচুর করে।

    এসময় কলেজের শিক্ষকরা ছাত্রদের সামনেই ছিলেন বলে জানিয়েছেন গাড়ীর চালকরা। অবরোধে দুদিকের কয়েক শতাধীক গাড়ী আটকে থাকে এবং যাত্রীরা চরম ভূগান্তিতে পড়েন। কলেজ ছাত্ররা হঠাৎ করে এমন বিক্ষোব্দ হওয়ার ঘটনায় শিক্ষকদের উদাসীনতা ও কয়েক জনের উস্কানি আছে বলে মনে করছেন অনেকেই।

    এ ঘটনার খবর পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে পৌছান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী। তিনি স্থানীয়দের নিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চালান পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার ও থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। সবার সাথে আলোচনা সাপেক্ষে এক পর্যায়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা হলে ফের যান চলাচল শুরু হয়।

    এসময় মিতালি পরিবহনের গাড়ীর গ্লাস ভাংচুরের ঘটনায় সাথে সাথে মুজিব নামের এক যুবককে আটক করে পুলিশে সোর্পদ করেন স্থানীয়রা। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে কলেজ প্রাঙ্গনে এক বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। এতে উক্ত কলেজ ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ও স্থানীয় চেয়ারম্যান ইজাজুর রহমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাজিনা সারোয়ার, থানার অফিসার ইনচার্জ এস.এম আতাউর রহমান, হাইওয়ে থানার ওসি বিমল বৌমিক, গোপলার বাজার পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ মোহাম্মদ আলী আশরাফ, কলেজের অধ্যক্ষ, স্থানীয় ইউপি সদস্য আমজদ আলী, নবীগঞ্জ প্রেসক্লাবের সহ-সভাপতি এম এ মুহিত, প্রেসক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক মতিউর রহমান মুন্না, যুবলীগ নেতা অনু আহমেদ, আফজল মিয়া, আনিছ মিয়া, সুকেশ আহমেদ প্রমুখ।

    বৈঠকে এ ঘটনার ফিছনে কারা নেতৃত্ব দিচ্ছেন এসব খোঁজে বের করার দাবী উঠে। কলেজে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তায় যাবে এসবের দায়বার কে নিবে, এমন প্রশ্নও উঠে।

    বৈঠকে বক্তারা বলেন, আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়ে গেছেন, এমন কথায় তার পরিবারে কোন অভিযোগ নেই। সড়ক দূর্ঘটনা একটি অনাকঙ্খিত ঘটনা। টাকা পয়সা দিয়েতো আর মাহফুজের জীবন ফিরিয়ে আনা যাবেনা। তবে গাড়ীটি আটক আছে এবং এর বিচার হবে। তবে হঠাৎ কেন এমন আন্দোলন করে গাড়ীর গ্লাস ভাংচুর করা কোন যুক্তি নেই। তিনি বলেন, নিহত মাহফুজের শোকে কলেজে এক শোক সভা করা, বৃহস্পতিবার কলেজ বন্ধ রাখা এবং শনিবার সকালে এ বিষয়ে বাস মালিক সমিতি, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কলেজ কতৃপক্ষকে নিয়ে আবার বৈঠক করা হবে। এবং ঘটনার সাথে কারা জড়িত তদন্ত করে দেখার জন্য কলেজ অধ্যক্ষকে নির্দেশদেন।

    বক্তারা বলেন, আইন সবার জন্য সমান, একটি গাড়ী দূর্ঘটনা করেছে সেই গাড়ীটি আটক আছে চালককে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। আর ছাত্ররা যদি বই হাতে নিয়ে সড়কে অবস্থান করতো সেটা মানা যেত, কারন তাদের সহপাঠি মারা গেছে তাই ক্ষোভে এমনটা করলে মেনে নেয়া যেত। কিন্তু লাঠিসোটা নিয়ে রাস্তা অবরোধ ও গাড়ীর গ্লাস ভাংচুর বড় অপরাধ। এর জন্য তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়ার কথাও জানান তিনি। কেননা অভিযোগ উঠেছে এ ঘটনায় বহিরাগতরা জড়িত আছে।

    শিক্ষার্থীদের সচেতন থাকার আহবান জানিয়ে ইউএনও বলেন, লক্ষ করা গেয়ে অনেক কলেজের পড়ূয়া সবার হাতেই স্মার্ট ফোন, অনেকে কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে সড়ক দিয়ে হেটে হেটে যান তখন গাড়ীর হর্রন

    বা শব্দ তাদের কানে পৌছায় না। এসব বিষয়েও সর্তক থাকার আহবান জানান তিনি। এবং স্প্রীড ব্রেকার নির্মাণ প্রসঙ্গে সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের সাথে আলোচনা করা হবে বলে জানান তারা। এদিকে, দুর্ঘটনা আহত সিএনজি অঠোরিকশা চালকের অবস্থা আশংকা জনক বলে জানা গেছে।