নবীগঞ্জে শিশু খুনে চাচাতো ভাই-বোনের স্বীকারোক্তি,আটক-২

    0
    263

    নূরুজ্জামান ফারুকী:  নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামে আমীর হামজা (৩) নামের শিশুকে শ্বাসরুদ্ধ করে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় বেরিয়ে এসেছে লোমহর্ষক চাঞ্চল্যকর তথ্য। হত্যাকাণ্ডে জড়িত জুনাইদ মিয়া (১৮) ও তার বোন রুজি বেগমকে (২৩) গ্রেফতার করেছে নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। সূত্র বলছে- দুই শিশুর ঝগড়া ও মারামারির জের ধরেই ক্ষোভে বালিশে চাপা দিয়ে হত্যা করা হয় আমীর হামজাকে।
    মঙ্গলবার রাতে গ্রেফতারকৃত জুনাইদ মিয়া (১৮) ও তার বোন রুজি বেগম (২৩) হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য পাঠানো হয়। ঘাতক জুনাইদ ও রুজি উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের আকলিছ মিয়ার ছেলে-মেয়ে।
    অনুসন্ধানে জানা যায়, উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দাউদপুর গ্রামের আব্দুর রশীদের একমাত্র পুত্র সন্তান শিশু আমীর হামজা তার চাচাতো বোন রুজি বেগমের ৩ বছর বয়সী মেয়ের সাথে খেলাধুলায় মেতে থাকতো। এই অবুঝ দুই শিশুর মাঝে প্রায়ই ঝগড়া হত। প্রায়শই খেলার ফাঁকে রুজি বেগমের মেয়েকে মারধোর করত অবুঝ হামজা। মেয়েকে মারধোরের কারণে চাচাতো ভাই অবুঝ শিশু হামজার উপর ক্ষোব্দ ও অতিষ্ঠ ছিলেন রুজি বেগম।

    এমন তুচ্ছ বিষয়কে কেন্দ্র করে রুজির ছোট ভাই জুনাইদকে নিয়ে হামজাকে হত্যার পরিকল্পনা করেন রুজি। পরিকল্পনা অনুযায়ী গত (২ নভেম্বর) সোমবার সন্ধ্যায় আমীর হামজাকে ডেকে নেয় হামজার চাচাতো ভাই আকলিছ মিয়ার পুত্র জুনাইদ মিয়া। এরপর রুজি ও জুনাইদ শিশু আমীর হামজাকে কৌশলে বালিশ দিয়ে চাপা দিয়ে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়। পরে শিশু হামজার দেহ গাড়ির গ্যারেজে মুখে কস্টেপ দিয়ে পেছানো অবস্থায় ফেলে রাখা হয়।
    পরে হামজার পরিবারের সদস্যরা হামজাকে জুনাইদ ও রুজির পিতা আকলিছ মিয়ার গাড়ির গ্যারেজে মুখে কস্টেপ পেছনো অবস্থায় নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখে তাকে উদ্ধার করে দ্রুত নিকটবর্তী আউশকান্দিতে একটি হাসপিটালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
    এ ঘটনার খবর পেয়ে নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী, নবীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আজিজুর রহমানসহকারে একদল পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করেন। সোমবার রাতেই হামজাকে ডেকে নেয়া তার চাচাতো ভাই জুনাইদের কথাবার্তায় সন্দেহ হলে স্থানীয় লোকজন জুনাইদকে আটক করে পুলিশে সোপর্দ করেন। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশকে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় রুজি বেগমের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে জানায় জুনাইদ।

    অন্যদিকে পরিস্থিতি টের পেয়ে আত্মগোপনে চলে যান রুজী বেগম। গত সোমবার দিবাগত গভীর রাতে অভিযান চালিয়ে কুর্শি ইউনিয়নে রুজির মামার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে রুজি বেগমকে আটক করে পুলিশ। পরে পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে হত্যাকাণ্ডের দায় স্বীকার করে জুনাইদ ও রুজি। গত (৩ নভেম্বর) শিশু হামজার পিতা আব্দুর রশীদ বাদী হয়ে মামলা দায়ের করেন। পরে রুজি ও জুনাইদকে শিশু আমীর হামজা হত্যা মামলায় গ্রেফতার দেখায় নবীগঞ্জ থানা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে হবিগঞ্জের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য পাঠানো হয়। ঘাতকদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির মাধ্যমে আজ পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক ভাবে প্রেস ব্রিফিং করা হবে বলে জানা গেছে। নবীগঞ্জ-বাহুবল সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার পারভেজ আলম চৌধুরী বলেন, রাতভর পুলিশের ব্যাপক তৎপরতার কারণে অতিদ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা হত্যাকাণ্ডে মোটিভ উদঘাটন করতে পেরেছি। এ ঘটনায় জড়িতদের স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দির জন্য আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিস্তারিত প্রেস ব্রিফিং করে পরে জানানো হবে।