নবীগঞ্জে নারীদের সমস্যা সমাধানে ‘তথ্য আপা’

    0
    227
    সানিউর রহমান তালুকদার, নবীগঞ্জ (হবিগঞ্জ) থেকে: সুবিধা বঞ্চিত নারীদের সমস্যায় পাশে দাঁড়ান ‘তথ্য আপা’। এমনকি প্রয়োজনে বাড়ি বাড়ি গিয়েও সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করেন। সাড়া দেশের ন্যায় হবিগঞ্জের নবীগঞ্জ উপজেলায় ‘তথ্য আপা’ দিন দিন ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে উঠেছেন। বিশেষ করে স্কুল-কলেজ ও মাদরাসার ছাত্রীদের কাছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে সরকারের নতুন সেবা ‘তথ্য আপা’। তথ্য আপার কাজ হলো তৃণমূলের নারীদের দোরগোড়ায় তথ্য সেবা পৌঁছে দিতে যেমন, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, কৃষি, ব্যবসা, জেন্ডার, আইনসহ এই ছয়টি বিষয়ে তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করা। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির মাধ্যমে নারীদের ক্ষমতায়নের উদ্দেশ্যে এ প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে জাতীয় মহিলা সংস্থা। নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য কেন্দ্র থেকে জানা যায়, এ উপজেলায় গত চার মাস ধরে কার্যক্রম শুরু করেন ‘তথ্য আপা’।
    এ পর্যন্ত অন্তত দেড় হাজার নারী তথ্য আপার কাছ থেকে তথ্য সেবা নিয়েছেন। নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য কেন্দ্র কার্যালয়ে তথ্য সেবা কর্মকর্তা (তথ্য আপা) নাহিদা আক্তার, দুই তথ্য সেবা সহকারী শারমিন আক্তার পলি ও লিমা আক্তার এবং এছাড়াও একজন অফিস সহায়ক কর্মরত আছেন। তারা জানান, গত কয়েক মাসে অনেক বাল্যবিয়ে বন্ধ, স্বামী ও দেবর কর্তৃক নারী নির্যাতন সমাধান, যৌতুক নিরোধ ও প্রতি মাসে তৃণমূল নারীদের নিয়ে উঠান বৈঠক করে তাদেরকে সচেতন করছেন।
    সরজমিনে তথ্য কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, বেশ কয়েকজন ছাত্রী তথ্য আপার কাছ থেকে সেবা নিচ্ছেন। এসময় শিক্ষার্থী জনি আক্তার ও মরিয়ম আক্তার জানান, ‘এইচএসসি পরীক্ষা পাস করে আমরা বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি, চাকরি খোঁজার চেষ্টা করছি। তথ্য কেন্দ্রে তথ্য আপার কাছে এসে অনলাইনে বিনামূল্যে প্রতিষ্ঠানে আবেদন করেছি।
    গৃহবধূ ফারজানা আক্তার নামের একজন জানান, ‘আমার শারীরিক অসুস্থতার কারনে খুব সমস্যায় পড়েছিলাম। এ বিষয়ে তথ্য আপাকে জানানোর পর তারা চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগের ব্যবস্থা করে দেন। আমি তখন ঘরে বসেই চিকিৎসা সেবা পেয়েছি।’ নাদিয়া আক্তার নামের আরেকজন জানান, ‘তথ্য আপারা গ্রামে এসে ইন্টারনেট, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং কৃষি বিষয়ক উঠান বৈঠকের মাধ্যমে আলোচনা করে থাকেন। তাঁরা আমাদের বিভিন্ন তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করেন। আমরা এখন নতুন নতুন অনেক কিছু শিখেছি।’
    সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এ প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ে সারা দেশে ৪৯০টি উপজেলায় তথ্য আপা সেবা চালু করা হয়। এর আগে প্রথম পর্যায়ে ১৩টি উপজেলায় এ সেবা চালু করা হয়েছিল। নবীগঞ্জ উপজেলা তথ্য সেবা কর্মকর্তা (তথ্য আপা) নাদিয়া আক্তার বলেন, ‘আমরা নারীদের সব ধরনের তথ্য দিয়ে সহযোগীতা করি, অফিসের পাশাপাশি বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে উঠান বৈঠক করে ডিজিটাল সেবা কী, কীভাবে সেবা পাওয়া যাবে, এসব বিষয়ে আলোচনা করে থাকি।’ তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে সেবার মান আরো বাড়ানো হবে এবং এ কার্যালয়ে নারীদের সকল ধরনের সেবা বিনামূল্যে দেয়া হচ্ছে। সরকারের এমন মহতী উদ্যোগের কারনে সমাজে পিছিয়ে পড়া নির্যাযিত নারীরা এ সেবার মাধ্যমে নতুন করে স্বপ্ন দেখছে।’ তিনি উপজেলার সকল তৃণমূল পর্যায়ে নারীদের সমস্যা সমাধানে এ কার্যালয়ে সেবা নেয়ার জন্য অফিসে আসার অনুরোধ জানিয়েছেন।
    নবীগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) তৌহিদ-বিন-হাসান বলেন, ‘সরকারের মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে নারীদের ক্ষমতায়নের (প্রকল্প-২) জন্য দেশের ৪৯০টি উপজেলায় এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এরই প্রেক্ষিতে নবীগঞ্জের তৃণমূলের নারীদের দোরগোড়ায় তথ্য সেবা পৌঁছে দেয়া হচ্ছে।
    বিশেষ করে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে মা-বোনদের সচেতন করা হয়। পাশাপাশি সরকার মেয়েদের জন্য যে বিনামূল্যে লেখাপড়া সহ সুবিধা দিচ্ছে তা জানান ‘তথ্য আপা’। এছাড়াও উঠান বৈঠকে আমার বাড়ি আমার খামাড় সহ সরকারের সব সুযোগ সুবিধার কথা জানানো হয়।’ এ প্রকল্পের মাধ্যমে নারীরা অনেক সচেতন হবে এবং নিজের ক্ষমতায়ন সম্পর্কে জানবে বলে মনে করে নবীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান নাজমা বেগম বলেন, ‘তথ্য আপার উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারী বিভিন্ন ধরণের সেবা পাচ্ছে।
    যেমন নারীদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা সর্ম্পকে জানতে পারে। তাদের অধিকার আদায়ের জন্য কী করতে হবে, এ বিষয়টা অনেকেই জানতো না। তৃণমূলের মেয়েরা অনেকেই লজ্জাবোধ করে কী বলতে বা কীভাবে জানবে।
    ‘তথ্য আপা’ প্রকল্পটি নারীদ্বারা পরিচালিত হওয়ায় তথ্য আপার সাথে সরাসরি কথা বলে যে কোন সমস্যার সমাধান করতে পারে। বিশেষ করে গ্রামে গ্রামে উঠান বৈঠকের মাধ্যমে নারীরা অনেক এগিয়ে যাবে বলে মনে করেন তিনি।