নবীগঞ্জের কৃতি সন্তান মাহবুবুর রব সাদীর মৃত্যুতে শুকের ছায়া

    0
    258

    আমার সিলেট টুয়েন্টি ফোর ডটকম,১৭অক্টোবর,সানিউর রহমান তালুকদারঃ নবীগঞ্জ উপজেলার দিনারপুর এলাকার কৃতি সন্তান মুক্তিযুদ্ধের সাব সেক্টর কমান্ডার ও সাবেক এমপি মাহবুবুর রব সাদী বীর প্রতীক (৭৫) আর নেই। গত রোববার দিবাগত রাত আড়াইটায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি ইন্তেকাল করেন। (ইন্নালিল্লহি………রাজিউন)।

    অসুস্থতা নিয়ে এ হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর রোববার হৃদরোগে আক্রান্ত হলে তাকে আইসিইউতে নেয়া হয়। রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। পরে তার লাশ নিয়ে আসা হয় জন্মস্থান নবীগঞ্জে। বেলা ৩টায় নবীগঞ্জ জে কে স্কুল মাঠে প্রথম জানাযা অনুষ্ঠিত হয়েছে এবং বিকাল ৪ টায় দিনারপুর সাতাইহাল ফুটবল মাঠে দ্বিতীয় জানাযা অনুষ্ঠিত হয়। তারপর লাশ নিয়ে ঢাকায় যাওয়া হয়।

    মঙ্গলবার জাতীয় সংসদের দক্ষিণ প্লাজায় জানাজা শেষে তাকে দাফন করা হবে বলে জানা গেছে। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে মিরপুর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাকে দাফনের ইচ্ছা থাকলেও রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত তা নিশ্চিত হয়নি। শারিরিক সমস্যা নিয়ে তিন দিন আগে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন মাহবুবুর রব সাদী। রোববার চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার হার্ট অ্যাটাক হয়। এরপর চিকিৎসকরা তাকে আইসিইউতে নেয়ার পরামর্শ দেন। মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবুর রব সাদীর মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে নবীগঞ্জ-বাহুবলে। এই এলাকার সাবেক সংসদ সদস্য সাদী ব্যাপক জনপ্রিয় ছিলেন সাধারণ মানুষের কাছে।

    তিনি ১৯৪৫ সালের ১০ মে উপজেলার গজনাইপুর ইউনিয়নের বনগাঁও গ্রামে জন্মগ্রহন করেন। তার মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন সাংসদ, উপজেলা পরিষদ ও প্রশাসনসহ বিভিন্ন মহল। সংবাদ পত্রে প্রেরিত এক বিবৃতিতে গভীর শোক প্রকাশ ও নিহতের শোক সন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা প্রকাশ করেন স্থানীয় সাংসদ এম এ মুনিম চৌধুরী বাবু, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এডভোকেট আলমগীর চৌধুরী, উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাজিনা সারোয়ার, উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) জীতেন্দ্র কুমার নাথ, উপজেলা জাসদের সভাপতি আব্দুর রউপ, পৌরসভার সাবেক মেয়র ও নবীগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের অধ্যাপক তোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ইমদাদুর রহমান মুকুল, সাধারন সম্পাদক সাইফুল জাহান চৌধুরী, পৌরসভার প্যানেল মেয়র এটিএম সালাম, নবীগঞ্জ নিউজ ডটকমের বার্তা সম্পাদক মতিউর রহমান মুন্না, সাংবাদিক সানিউর রহমান তালুকদার।

    এছাড়াও বিভিন্ন মহলের লোকজন শোক প্রকাশ করেন। উল্লেখ্য, মাহবুবুর রব সাদী ১৯৭১ সালে শিক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার পাশাপাশি ছাত্ররাজনীতির সঙ্গেও যুক্ত ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে যান। মুক্তিযুদ্ধ আনুষ্ঠানিক রূপ পেলে তিনি ৪ নম্বর সেক্টরের জালালপুর সাব-সেক্টরের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। তাঁর আওতাধীন এলাকা ছিল আটগ্রাম, জকিগঞ্জ ও লুবাছড়া। উল্লেখিত এলাকা ছাড়াও কানাইঘাট এলাকায়ও অপারেশন করেন। তাঁর নেতৃত্বে বা পরিচালনায় অনেক যুদ্ধ সংঘটিত হয়। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বের জন্য মাহবুবুর রব সাদীকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ নম্বর ৩৫১। কানাইঘাট থানা আক্রমণে কৃতিত্ব প্রদর্শনের জন্য তিনি এ খেতাব পান।

    ১৯৯২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ সরকার খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের আনুষ্ঠানিকভাবে সংবর্ধনা ও পদক প্রদান করে। তখন তাঁকেও আমন্ত্রণ জানানো হয়। মাহবুবুর রব সাদী স্বাধীনতার পর ব্যবসার পাশাপাশি সক্রিয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। একবার হবিগঞ্জ এলাকা থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।