নববর্ষের শুভেচ্ছা ও কিছু কথা

    0
    279

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৪এপ্রিল,গোলাম দস্তগীর লিসানীঃ বৈশাখি শুভেচ্ছা। নববর্ষের শুভেচ্ছা। এটা আমাদের নাগরিকত্বগত, ণৃতাত্ত্বিক, ভাষাগত ও ভৌগোলিক- এই চার দিক দিয়েই জাতীয় বিষয়।

    বাংলাদেশ বিরোধীরা, যারা একাত্তরে বাংলাদেশের বিরোধীতা করেছিল এবং আজো করে, যারা দেশ-সত্ত্বায় বিশ্বাস করে না, যারা বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে শত্রুতা পোষণ করে, তাদের দেখবেন নানা ছুতায়-

    বাংলাদেশের অস্তিত্বের সাথে,
    বাঙালি ণৃতাত্ত্বিক জাতিসত্ত্বার সাথে,
    বাঙালি ভাষাগত জাতিসত্ত্বার সাথে,
    বাংলাদেশের ভৌগোলিক সত্ত্বার সাথে,
    বাংলাদেশের স্থানীয় পোশাকের সাথে,
    বাংলাদেশের স্থানীয় খাবারের সাথে,
    ভাষার সাথে,
    ভাষার শব্দগুলোর সাথে,
    ভাষার উচ্চারণরীতি-

    স-ম-স্ত বিষয়ের সাথে জড়িয়ে কিছু না কিছু নোংরা কথা বলবেই।

    একুশে ফেব্রুয়ারি বলবে, শহীদ মিনার পূজা করে। অথবা বলবে, আটই ফাগুন বাদ দিয়ে একুশে ফেব্রুয়ারি কেন?
    ষোলই ডিসেম্বর বলবে, বাংলাদেশের প্রকৃত স্বাধীনতা কি আজো অর্জিত হয়েছে? পাকিস্তানি বাহিনী তো বাংলাদেশের কাছে আত্মসমর্পণ করে নাই, করেছে ইন্ডিয়ার কাছে।
    সাতই মার্চ বলবে, মুজিব তো জিয়ে পাকিস্তান বলেছিল। তাদের কান দিয়ে জিয়ে পাকিস্তান হান্দায়, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম- হান্দায় না।
    পঁচিশে মার্চ বলবে, এই রাত্রে আগুন জ্বালিয়ে রাস্তায় রাস্তায় পূজা করা কেন?
    ছাব্বিশে মার্চ বলবে, এইটা বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস হল কীভাবে? এইদিন কি বাংলাদেশ স্বাধীন হয়ে গেছে? তাতো হয়নাই। তাহলে স্বাধীনতা দিবস কীভাবে? এইটা আবার জাতীয় দিবস! পৃথিবীর কোন দেশে স্বাধীনতা আর বিজয় দিবস দুইটা নাই, বাংলাদেশে দুইটা হল কী করে!

    এইযে সাড়ে তিনশো দিন মিলিয়ে একটা বছর! এই একটা বছরে মাত্র একটা দিন বাংলা তারিখ দেখে আমরা স্মরণ করি, পালন করি, আমাদের নিজস্ব কৃষ্টি-কালচার। সেটা হল মাত্র একদিন, পয়লা বৈশাখ। কারণ কী? এইদিন সবাই একটু সুন্দর খাবার খাবে। পাহাড়িরা বৈসাবি পালন করবে। সনাতনরা তাদের মত করে পূজা অর্চণা করবে। মুসলিমরা এদিন ঘরে ঘরে মিলাদ ফাতেহা পাঠ করতো। দোকানে দোকানে প্রতি দোকানে মিলাদ পড়া হত। পাওনাদার-দেনাদার পাশাপাশি সব চুকিয়ে নিত। মানুষ একটু পোশাক পরে আরেকজনের বাড়ি বেড়াতে যেত। বাংলার পোশাকগুলোই পরত। এদিন মানুষ বাংলার পুরনো খাবারগুলোই খেতো। এই মাস যেহেতু বাংলার প্রথম মাস, তাই এ মাসে একটু মেলা হত। প্রয়োজনীয় পণ্য সেখানে পাওয়া যেত। আগের দিনে খেলনার দোকান ছিল না। শুধু মেলাতেই খেলনার দোকান থাকতো। বাচ্চারা কিনতো বাহারি জিনিস। মেলা হতো বড় পরিসরে, গিন্নিরা গিয়ে একটু নিজের মত কিছু কিনে ফেরত আসতে পারতো। এদিন মানুষ আশা করতো, পুরনো বছরের গ্লানি-জরা বাদ দিয়ে নতুন করে সময় শুরু হোক। কত সুন্দর প্রত্যাশা! এইতো! এইতো! এর বেশি কী?

    এটা অদ্ভুত এক কালচার ছিল!
    এই কালচার বাঙালি হিন্দুর যেমন ধর্মীয় কালচার ছিল,
    তেমনি বাংলাদেশি পাহাড়িদেরও ধর্মীয় কালচার,
    সেইসাথে অর্থনৈতিকতার কারণে ও ধর্মীয় উদারতার কারণে বাঙালি মুসলিমরা এদিনের বিষয়গুলোর সাথে ফাতেহাখানি যুক্ত করে নিজের মত করে পালন করতো।

    বাংলা বছর মনে রাখার মাত্র একটা দিন! এইদিনটাকে এভাবে শিরিষ কাগজ দিয়ে ঘষটে ঘষটে বাংলাদেশের মুসলিমের মন থেকে তুলে ফেলার কী এমন দরকার তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারি না! এরা ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র চেয়ে বড় ভাষাতত্ত্ববিদ হয়ে গেছে! ডক্টর শহীদুল্লাহ্’র চেয়ে বেশি বড় কালচার বিশারদ হয়ে গেছে, তাঁরচে বড় ধার্মিক হয়ে গেছে???

    আরে ডক্টর শহীদুল্লাহ্ ছিলেন একজন পীর সাহেব এবং একজন অনেক বড় মাপের সাদা মনের মানুষ, সাঙ্ঘাতিক ধার্মিক ও ধর্মভীরু মানুষ! তিনি এই দিবস নিয়ে রীতিমত গবেষণা করেছেন এবং বছরের ১৪ এপ্রিলের সাথে তা যুক্ত করেছেন।

    যারা আজকে বৈশাখকে মিটিয়ে দিতে চান, বাঙালিত্বর দোষে দুষ্ট করে, তাদের মূল সমস্যা যে বৈশাখ না, তাদের মূল সমস্যা যে বাংলা-বাংলাদেশ-বাঙালিত্ব, তারা যে বাঙালির আলাদা সত্ত্বার কথা- আলাদা জাতির কথা কিছুতেই মানতে পারে না, এবং তারা যে এটাই মিটাতে চায়, সে সত্য আমাদের চোখে পড়ছে না।

    এত্ত ধর্ম জানে! এত্ত ধর্ম জানে! এইটা জানে না, যে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল দ.’র কাছে আলাদা আলাদা গোত্র-গোষ্ঠীর ভিন্নমাত্রিক মর্যাদা রয়েছে? তারা জানে, কিন্তু তা জানতে ও মানতে দিতে চায় না। এর পিছনে রয়েছে বিভক্তি, ঘৃণা ছড়ানোর চেষ্টা, ধর্ম-সম্প্রদায়-বিদ্বেষ এবং সবচে বড় কথা, বাংলার প্রতি পরাজয়জনিত পরম বিদ্বেষ।