ধর্ষণ গুজবে হত্যাকাণ্ডের শিকার শরিফ খানের আজ জানাজা

    0
    217

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৮মার্চঃ ধর্ষণের গুজবের পাশবিক হত্যাকাণ্ডের শিকার মুসলিম যুবক শরিফউদ্দিন খানের মরদেহ অবশেষে নাগাল্যান্ড থেকে অসমে তার বাড়িতে পৌঁছেছে। আজ (রোববার) তার জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। জানাজা পরিচালনা করবেন উত্তর-পূর্ব ভারতের আমীরে শরিয়ত মাওলানা তৈয়ীবুর রহমান বড়ভুইয়া।

    শনিবার সন্ধ্যা সাড়েপাঁচটা নাগাদ শরিফের মরদেহ নাগাল্যান্ড থেকে বায়ুসেনার হেলিকপ্টারে করে অসমের করিমগঞ্জে পৌঁছায়। সেখান থেকে রাজ্যের সাবেকমন্ত্রী ও দক্ষিণ করিমগঞ্জের বিধায়ক সিদ্দেক আহমেদ খান শববাহী গাড়িতে করে শরিফ উদ্দিনের কফিনবন্দী দেহ নিয়ে বসলায় তার বাড়িতে পৌঁছান। ব্যাপক জনজোয়ার সামলাতে স্থানীয় ঈদগাহ ময়দানে তার কফিনবন্দী মৃতদেহ রাখা হয়। রাতে সেখানে হাজার হাজার মানুষ তার মৃতদেহ দেখার জন্য ভিড় জমান।

    এভাবেই মিথ্যে অভিযোগে তাকে  হাজারও মানুষের সামনে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।
    এভাবেই মিথ্যে অভিযোগে তাকে হাজারও মানুষের সামনে নির্মম ভাবে হত্যা করা হয়।

    বিভিন্ন সংগঠনের পক্ষ থেকে আজ (রোববার) করিমগঞ্জ ও হাইলাকান্দির পাশাপাশি বরাক উপত্যাকায়ও বনধ-এর ডাক দেয়া হয়েছে।

    এদিকে, মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল-এর পক্ষ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের নিন্দা করা হয়েছে। অ্যামনেস্টির মুখপাত্র শেমির বাবু বলেছেন, ‘অভিযুক্ত ব্যক্তিদের প্রত্যেকের বিচার নিশ্চিত করতে হবে নাগাল্যান্ডকে। সে কাজে ব্যর্থ হলে যে কেউ জঘন্য কাজকর্ম করে পরে জনরোষের যুক্তি দিয়ে আত্মসমর্পণ করতে পারে।’

    অন্যদিকে, দোষীদের বিরুদ্ধে নাগাল্যান্ড সরকার ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত সেখানে ট্রাক নিয়ে যেতে অস্বীকার করেছে অসমের ট্রাক চালকদের ১৭ টি  সংগঠন।

    নাগাল্যান্ড সরকারের পুলিশ শরিফ হত্যার ঘটনায় এ পর্যন্ত ১৪ জনকে গ্রেফতার করেছে। কেন্দ্র সরকারের পক্ষ থেকে আগেই এই ঘটনায় কড়া ব্যবস্থা নিতে বলেছে নাগাল্যান্ড সরকারকে।

    শনিবার অসম বিধানসভায় শরিফউদ্দিনকে নৃশংসভাবে হত্যা প্রসঙ্গ বিরোধীরা সোচ্চার হন। রাজ্যের মন্ত্রী রকিবুল হোসেন জানান, ‘এক নাগা নারীকে ধর্ষণের অভিযোগ এনে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে শরিফউদ্দিন খানকে। মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াংকে চিঠি দিয়ে দোষীদের  গ্রেফতার করার দাবি জানিয়েছেন। এছাড়া নাগাল্যান্ডে কর্মরত অসমের বাসিন্দাদের জীবন-সম্পত্তি নিশ্চিত করার আবেদন জানিয়েছেন।’

    তরুণ গগৈকে লেখা জবাবি চিঠিতে নাগাল্যান্ডের মুখ্যমন্ত্রী টি আর জেলিয়াং শরিফ হত্যাকে জঘন্য বলে অভিহিত করেছেন। এছাড়া  ঘটনার তদন্ত ও দোষীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। নাগাল্যান্ডে বসবাসকারী অসমের বাসিন্দাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সবধরণের ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দিয়েছেন জেলিয়াং।

    অসমের মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগই বলেছেন, ‘যেভাবে জেল ভেঙে শরিফ উদ্দিনকে বের করে নিয়েছে জনতা, তার দায় কেন্দ্র এড়াতে পারে না। কারণ কারাগারে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকে কেন্দ্রীয় বাহিনী সিআরপিএফ-এর হাতে। তাই কেন্দ্র সরকারকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে হবে।’

    অসম প্রদেশ কংগ্রেস প্রেসিডেন্ট অঞ্জন দত্ত এই ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘রাজ্যসভায় মোদি সগর্বে  বলেছিলেন, ‘নাগাল্যান্ডে আমাদের সরকার রয়েছে।’ অঞ্জন দত্ত’র দাবি, তাদের সরকার থাকা সত্ত্বেও ডিমাপুরে কীভাবে এমন নারকীয় ঘটনা ঘটেছে তা স্পষ্ট করা উচিত কেন্দ্রের।

    বৃহস্পতিবার বিকেলে কয়েকশ’ উন্মত্ত মানুষ ডিমাপুর সেন্ট্রাল জেলে হামলা চালায়। সেখানে  জেলখানার লোহার দরজা ভেঙে কথিত ধর্ষণে অভিযুক্ত শরিফউদ্দিন খানকে টেনে বের করে এনে নৃশংসভাবে হত্যা করে।

    যদিও ডিমাপুরের হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, যাকে নিয়ে অভিযোগ সেই মেয়েটির আদৌ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেনি! ডাক্তারি পরীক্ষায় তার অভিযোগের যথার্থতা প্রমাণিত হয়নি।