ধর্ষণ মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ডের বিধান রেখে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের যে খসড়া মন্ত্রিসভায় চূড়ান্ত অনুমোদন পেয়েছে, তা আজ মঙ্গলবার রাষ্ট্রপতির অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। বর্তমানে সংসদের অধিবেশন না থাকায় আজ মঙ্গলবার এ বিষয়ে রাষ্ট্রপতি অধ্যাদেশ জারি করবেন বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।
সোমবার গুলশানের নিজ কার্যালয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক সাংবাদিকদের বলেন, ধর্ষণের সর্বোচ্চ সাজা যাবজ্জীবন থেকে মৃত্যুদ করায় এই অপরাধটি অবশ্যই কমে আসবে। তিনি বলেন, সাজা বাড়ানোর ব্যাপারটা এসেছে পরিস্থিতির কারণে। বিশ্বে মৃত্যুদণ্ডের ব্যাপারে অনেক বিতর্ক আছে। তারপরও আমাদের দেশে এই ঘৃণ্য অপরাধটির যে চিত্র দেখা যাচ্ছে, তাতে এটা বাড়ানো উচিত বলেই আমরা মনে করেছি। আইনের ধারা ৯ এর (১) ধারায় যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ডের পরিবর্তে সশ্রম কারাদণ্ড বা মৃত্যুদণ্ড প্রতিস্থাপিত হবে। এটা অনুমোদন করা হয়েছে।
একের পর এক যৌন নিপীড়নের ঘটনায় দেশজুড়ে প্রতিবাদ আর বিক্ষোভের মধ্যে সোমবার ধর্ষণের শাস্তি বাড়িয়ে মৃত্যুদণ্ড করা হয়। ২০০০ সালের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন অনুযায়ী, বাংলাদেশে ধর্ষণের সর্বোচ্চ শাস্তি এতদিন ছিল যাবজ্জীবন কারাদণ্ড। আর ধর্ষণের শিকার নারী বা শিশুর মৃত্যু হলে বা দলবেঁধে ধর্ষণের ঘটনায় সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। পাশাপাশি দুই ক্ষেত্রেই অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে।
মন্ত্রিসভায় অনুমোদনের পর সরকারের এই সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছে ব্যক্তি, সামাজিক, রাজনৈতিক দল এবং নারীবাদী সংগঠনগুলো।
সরকারি তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ বছরে ধর্ষণের ঘটনায় ওয়ানস্টপ ক্রাইসিস সেন্টার থেকে মামলা হয়েছে চার হাজার ৫৪১টি। এর মধ্যে আসামির শাস্তি হয়েছে ৬০টি ঘটনায়। এসব কারণে ধর্ষণের অপরাধে শাস্তির মাত্রা বাড়ানোর দাবি যেমন আছে, তেমনি শাস্তি বাড়ালেই এ ধরনের অপরাধ কমবে কিনা- সেই প্রশ্নও আছে অনেকের মধ্যে। তাদের ভাষ্য, সাক্ষ্য আইনের জটিলতা দূর করে বিচার পাওয়ার পথ সহজ করতে হবে। সেই সঙ্গে সামাজিকভাবে বিষয়টি মোকাবিলা করতে হবে।
সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন স্থানে নারী নির্যাতন ও ধর্ষণের ঘটনা হঠাৎ করেই বেড়ে যায়। এর মধ্যে সিলেট এমসি কলেজ হোস্টেলে বর্বরোচিত সংঘবদ্ধ ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। এরপর গত ৪ অক্টোবর নোয়াখালীতে গৃহবধূকে বিবস্ত্র করে নির্যাতনের এক ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়। ওই ঘটনা জানাজানির পর ধর্ষণ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে রাজধানীসহ সারাদেশে প্রতিবাদের ঝড় ওঠে। অধিকাংশ মহল থেকেই ধর্ষণকারীদের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদে র বিধান রাখার দাবি জানানো হয়।