ধর্মঘটের অবসানঃভাড়া বেড়েছে বাস ও লঞ্চের,বাড়েনি সিএনজিচালিত গাড়ির

0
440
ধর্মঘটের অবসানঃভাড়া বেড়েছে বাস ও লঞ্চের,বাড়েনি সিএনজিচালিত গাড়ির

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ ডিজেলের দাম বাড়ায় বাস ভাড়াও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। দূরপাল্লার বাস ভাড়া প্রতি কিলোমিটারে ১ টাকা ৪২ পয়সার পরিবর্তে এখন ১ টাকা ৮০ পয়সা এবং ঢাকা ও চট্টগ্রাম মহানগরে ১ টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে এখন ২ টাকা ১৫ পয়সা বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ)।
অপরদিকে ডিজেলের দাম বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে বাসের পরে এবার বাড়লো লঞ্চভাড়াও। কম দূরত্বে লঞ্চের ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ ও বেশি দূরত্বের ক্ষেত্রে ৪২ শতাংশ ভাড়া বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে চলমান লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করা হয়েছে।
ভাড়া বাড়ানোর দাবিতে সারা দেশে তিন দিন ধরে চলা ধর্মঘটের মধ্যেই রোববার সাড়ে ১১টার দিকে ঢাকার বনানীতে বিআরটিএ দপ্তরে পরিবহণ মালিকদের সঙ্গে সাড়ে পাঁচ ঘণ্টার বৈঠক শেষে এ সিদ্ধান্ত হয়।
বৈঠক শেষে প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ডিজেলের দাম বাড়ানোয় বাস ভাড়াও বাড়ানো হয়েছে। দূরপাল্লার প্রতি কিলোতে ১ টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। আর মহানগরে প্রতি কিলোতে ২ টাকা ১৫ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার ৮ নভেম্বর থেকে নতুন এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
বৈঠকে সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, মহানগরে বাস ভাড়া সর্বনিম্ন ৮ এবং ১০ টাকা করা হয়েছে। তবে সিএনজিচালিত কোনো গাড়ির ভাড়া বাড়বে না। বিআরটিএ চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ মজুমদারের সভাপতিত্বে বৈঠকে অংশ নেন-বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ, বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহসাধারণ সম্পাদক রাকেশ ঘোষ, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক ফেডারেশনসহ সরকারি-বেসরকারি সংগঠনের প্রতিনিধিরা।
সর্বশেষ ২০১৫ সালে নগর পরিবহণে বাসের ভাড়া প্রতি কিলেমিটারে ১ টাকা ৭০ পয়সা এবং মিনিবাসের জন্য ১ টাকা ৬০ পয়সা নির্ধারণ করে দেয় সরকার।
আর ২০১৬ সালে দূরপাল্লায় ডিজেলচালিত বাস ও মিনিবাসের ভাড়া নির্ধারণ করা হয় ১ টাকা ৪২ পয়সা।
গত ৩ নভেম্বর ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়িয়ে ৬৫ থেকে ৮০ টাকা করে প্রজ্ঞাপন জারি করে সরকার। ওইদিন রাত ১২টা থেকেই কার্যকরের নির্দেশনা দেওয়া হয় প্রজ্ঞাপনে। পরদিন থেকেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন দেশের মানুষ। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ থেকে শুরু করে শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দলসহ সামাজিক সংগঠনগুলোও ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখাতে শুরু করেছে।
ডিজেলের দাম বৃদ্ধি প্রতিবাদে শুক্রবার (৫ নভেম্বর) সকাল থেকে সারা দেশে ধর্মঘট শুরু পরিবহণ মালিক-শ্রমিকরা। এই পরিবহণ ধর্মঘটে সারা দেশ অচল হয়ে পড়েছে। তিন দিন ধরে পরিবহণে ধর্মঘটে জিম্মি রয়েছেন সাধারণ মানুষ।
এদিকে ভাড়া ৩৫ দশমিক ২৯ শতাংশ বাড়িয়ে লঞ্চ ধর্মঘট প্রত্যাহার করলো লঞ্চ মালিকরা। লঞ্চে প্রতি কিলোমিটার ৬০ পয়সা বেড়েছে ভাড়া।
রোববার রাজধানীর মতিঝিলের বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) কার্যালয়ে সরকারের সঙ্গে লঞ্চ মালিকদের বৈঠকে ভাড়া বাড়ানো ও ধর্মঘট প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত হয়।

বর্তমানে লঞ্চভাড়া ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত ১ টাকা ৭০ পয়সা। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২ টাকা ৩০ পয়সা ও ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে ১ টাকা ৪০ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ২ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। জনপ্রতি সর্বনিম্ন ভাড়া ১৮ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৩০ টাকা করা হয়েছে।
বিকেল ৩টা ৫০ মিনিটে বিআইডব্লিউটিএ’র চেয়ারম্যান কমোডর গোলাম সাদেকের সভাপতিত্বে বৈঠক শুরু হয়। বৈঠক চলে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত।
বৈঠকে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ চলাচল (যাপ) সংস্থার সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুব উদ্দিন আহমদ বীর বিক্রম ও সিনিয়র ভাইস-প্রেসিডেন্ট বদিউজ্জামান বাদল, বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতির মহাসচিব শহিদুল ইসলাম ভূঁইয়া, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের উপসচিব আমিনুর রহমান, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তা এবং লঞ্চ মালিকরা উপস্থিত ছিলেন।
তবে জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন ট্রাক–কাভার্ড ভ্যানের মালিকেরা।
পণ্য পরিবহনের যানবাহনের ভাড়া সরকার ঠিক করে দেয় না। ফলে বনানীতে বিআরটিএ কার্যালয়ের ওই বৈঠকে ট্রাক–কাভার্ড ভ্যান মালিক সমিতির নেতারা ছিলেন না।
ওই বৈঠক চলার মধ্যে বিকেলে এ খাতসংশ্লিষ্ট মালিক সংগঠনগুলো জ্বালানি তেলের বর্ধিত মূল্য প্রত্যাহারের দাবিতে ধর্মঘট চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।