শোলাকিয়া ও গোড়-এ শহীদ দেশের বড় জামাত অনুষ্ঠিত

    0
    221

    কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঐতিহাসিক ঈদগাহে ১৯২তম জামাত এবং দিনাজ পুরের  গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানে ৬ষ্ঠ বারের মত শান্তিপূর্ণভাবে ঈদুল আযহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে।

    সোমবার সকাল সাড়ে ৮টায় অনুষ্ঠিত দেশের বৃহত্তম এই জামাতে ইমামতি করেন শহরের মারকাস মসজিদের খতিব হাফেজ মাওলানা হিফজুর রহমান খান।

    এবারের জামাতে লক্ষাধিক মুসল্লি অংশগ্রহণ করছে বলে জানিয়েছেন শোলাকিয়া মাঠ কমিটির সদস্য সচিব ও কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবদুল কাদের।

    অন্যদিকে ঈদ জামাতকে কেন্দ্র করে নেওয়া হয়েছিল চারস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বিপুল সংখ্যক পুলিশ এবং এপিবিএন সদস্য ছাড়াও দুই প্লাটুন বিজিবি ও র‌্যাব মোতায়েন ছিল। পুরো মাঠ নজরদারির জন্য দু’টি ড্রোন উড়ে বেড়িয়েছে শোলাকিয়ায়। বসানো হয়েছিল আর্চওয়ে, ওয়াচ টাওয়ার ও তল্লাশি চৌকি। মেটাল ডিটেক্টর দিয়ে মুসল্লিদের তল্লাশি করে ঈদগাহে ঢুকতে দেওয়া হয়।

    জামাত শুরুর আগে ঈদগাহ কমিটির সভাপতি জেলা প্রশাসক মো. সারওয়ার মুর্শেদ চৌধুরী সমাগত মুসল্লিদের উদ্দেশ্যে শান্তিপূর্ণ ঈদ জামাত আয়োজনে সহযোগিতা করার জন্য ধন্যবাদ জানান। সেই সঙ্গে তিনি মাঠে আসা লাখো মুসল্লিকে ঈদের শুভেচ্ছা জানান। এছাড়াও জেলা পুলিশ সুপার মো. মাশরুকুর রহমান খালেদ মুসল্লিদের ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে বক্তব্য রাখেন। জামাত শেষে মোনাজাতে ইমাম মাওলানা হিফজুর রহমান খান বিশ্ব মুসলিম উম্মার শান্তি ও সমৃদ্ধির পাশাপাশি বাংলাদেশের নিরাপত্তা, শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। জীবিত মৃত সকলের নাজাত ও হেদায়েত কামনা করেন। পাশাপাশি পশু কোরবানি কবুল করার জন্যও সৃষ্টিকর্তার প্রতি প্রার্থনা জানান।

    তিনি রাষ্ট্রপতি ও বর্তমান সরকারের প্রধানমন্ত্রী দেশ ও জাতির উন্নয়নে যেভাবে কাজ করছেন তা যেন অব্যাহত থাকে সেজন্য মহান আল্লার কাছে ফরিয়াদ জানান।

    এই ঈদগাহ ময়দানে ঈদুল ফিতরের জামাতে লাখ লাখ মুসল্লি অংশ নেন। তবে কোরবানির আনুষ্ঠানিকতার কারণে ঈদুল আজহার জামাতে ঈদুল ফিতরের তুলনায় মুসল্লির সংখ্যা কম হয়।

    জামাত উপলক্ষে ‘শোলাকিয়া স্পেশাল’ নামে দু’টি বিশেষ ট্রেন চলাচল করে। ট্রেন দু’টির একটি ভৈরব থেকে এবং অপরটি ময়মনসিংহ থেকে ছেড়ে কিশোরগঞ্জ আসে এবং নামাজ শেষে মুসল্লিদের নিয়ে ভৈরব ও ময়মনসিংহের উদ্দেশে ছেড়ে যায়।

    অপরদিকে  দিনাজপুরের গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানে সুষ্ঠুভাবে ঈদুল আজহার জামাত অনুষ্ঠিত হয়েছে। এবার   আয়োজিত এই ঈদের জামাতে ৪ লক্ষাধিক মুসল্লির সমাগম হয়েছে বলে দাবি করেছেন আয়োজকরা।

    সোমবার সকাল সাড়ে ৮ টায় অনুষ্ঠিত ঈদের জামাতে ইমামতি করেন মাওলানা শামসুল ইসলাম কাশেমী। জামাতে সুপ্রিম কোর্ট বিভাগের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম, জাতীয় সংসদের হুইপ ইকবালুর রহিম, জেলা প্রশাসক মাহমুদুল আলম, পৌরসভার মেয়র সৈয়দ জাহাঙ্গীর আলমসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত মুসল্লিরা অংশগ্রহণ করেন।

    ঈদ জামাত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও আয়োজনে কোন কমতি ছিল না। পুলিশ, বিজিবি, র‌্যাব, অস্ত্রধারী আনসার, ওয়াচ টাওয়ার, সিসি ক্যামেরা এবং সাদা পোশাকে পুলিশের নিরাপত্তার বলয় ছিল মাঠজুড়ে। সবমিলিয়ে সুষ্ঠুভাবে ঈদের নামাজ আদায় করতে পেরে খুশি ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা।

    জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, গোড়-এ শহীদ বড় ময়দানের আয়তন প্রায় ২২ একর। ৫২ গম্বুজের ঈদগাহ মিনার তৈরিতে খরচ হয়েছে ৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা।  ঈদগাহ মাঠের মিনারের প্রথম গম্বুজ অর্থাৎ মেহরাব (যেখানে ইমাম দাড়াবেন) তার উচ্চতা ৪৭ ফিট। এর সঙ্গে রয়েছে আরও ৪৯টি গম্বুজ। এছাড়া ৫১৬ ফিট লম্বায় ৩২টি আর্চ নির্মাণ করা হয়েছে। পুরো মিনার সিরামিক্স দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে। ঈদগাহ মাঠের দু’ধারে করা হয়েছে ওজুর ব্যবস্থা। প্রতিটি গম্বুজ ও মিনারে রয়েছে বৈদ্যুতিক লাইটিং। রাত হলে ঈদগাহ মিনার আলোকিত হয়ে ওঠে।