করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে বাংলাদেশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন। তবে থেমে নেই মানুষের ঈদযাত্রা। আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে সড়কে নেমেছে ঘরমুখো মানুষের ঢল। পুরুষ-নারী-শিশু সঙ্গে ব্যাগপত্র নিয়ে তাদের দীর্ঘ কষ্টকর যাত্রায় মাইক্রোবাস, লেগুনা, সিএনজি বা ব্যাটারিচালিত অটোরিকশায় এমনকি ভ্যান গাড়ী চড়ে ভেঙে ভেঙে গন্তব্যে উদ্দেশ্যে মাইলের পর মাইল পাড়ি দিচ্ছেন ‘দুঃসাহসী অভিযাত্রীরা’। অবশ্য এজন্য গুণতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। আর ঝক্কি বা দুর্ভোগটা ‘বিশেষ উৎসব বোনাস’।
বঙ্গবন্ধু সেতু মহাসড়কের ট্রাফিক ইন্সপেক্টর (টিআই) ইফতেখার রোকন গণমাধ্যমকে বলেন, গণপরিবহন বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ঈদকে সামনে রেখে এ মহাসড়কে যাত্রী বেড়েছে। এ সুযোগে প্রাইভেটকার, মাইক্রোবাস আর কেউ কেউ অসুস্থতার দোহাই দিয়ে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বাড়ি ফিরছেন। সন্দেহজনক কিছু গাড়ি প্রবেশে বাধা দেয়া হলেও বেশিরভাগ গাড়িই সেতু দিয়ে পার হচ্ছে। তবে নদী পথে কীভাবে যাত্রী পারাপার হচ্ছে সে ব্যাপারে তার অজ্ঞতার কথা স্বীকার করেন।
ওদিকে, ঘূর্ণিঝড় আম্পানের কারণ দেখিয়ে মুন্সিগঞ্জের মাওয়া-শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি নৌরুট এবং মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া নৌরুটে ফেরি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু ফেরি বন্ধ থাকার পরও দক্ষিণবঙ্গগামী হাজার হাজার মানুষ আজ সকাল থেকেই ফেরি ঘাটে ভিড় করতে থাকে।
মাওয়া ট্রাফিক পুলিশের ইনচার্জ মো. হেলাল হোসেন জানান, জেলা পুলিশ, নৌ পুলিশ ও ট্রাফিক পুলিশ রাস্তায় রয়েছে। নিরাপত্তার স্বার্থে চেকপোস্টসহ ঘাটে প্রবেশের সকল রাস্তা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। তবুও বিভিন্ন দিক ঘুরে যাত্রীরা ঘাট এলাকায় ভিড় জমাচ্ছেন।
এদিকে, ফেরিঘাটে আটকেপড়া হাজার হাজার মানুষ দক্ষিণের জেলাগুলোতে আসন্ন আম্পানের বিপদ এবং পেছনে রাজধানীতে করোনার ভয়- এরকম আতঙ্ক মাথায় নিয়ে পথের মাঝে চরম দুর্বিপাকে পড়েছেন।
এ অবস্থায় পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ রাজধানী থেকে রওনা হয়ে ফেরিঘাটে আটকেপড়া ঘরমুখী মানুষদের স্ব স্ব অবস্থানে ফিরে আসার আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি ফেরিঘাটে আটকেপড়াদের অনুরোধ করে বলেন, দয়া করে যেখানে ছিলেন সেখানে ফিরে আসুন। যারা আটকে আছেন তাদের ঢাকায় ফেরার জন্য পুলিশ প্রয়োজনে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
মঙ্গলবার দুপুর ১২টায় রাজধানীর রাজারবাগে বাংলাদেশ পুলিশ অডিটোরিয়ামে আসন্ন পবিত্র ঈদুল ফিতর ও করোনা মহামারি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘মনে রাখতে হবে বেঁচে থাকলে আরও অনেকবার পরিবারের সঙ্গে ঈদ করা যাবে। কিন্তু মারা গেলে কিংবা করোনা আক্রান্ত হলে এখানেই শেষ। তাই আমরা অনুরোধ জানাচ্ছি সরকারি যে নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্যবিধি সেটা মেনে চলুন।’
তিনি বলেন, ‘দয়া করে কেউ ঝুঁকি নেবেন না। পরিবারের কাছে যাচ্ছেন ঈদ করার জন্য। করোনা নিয়ে সেখানে সংক্রমণ ছাড়ানোর শঙ্কা তৈরি করবেন না।’ পার্সটুডে থেকে