দেশের বিভিন্ন স্থানে কালবৈশাখীর তাণ্ডবঃমৃত-২

    0
    251

    আমারসিলেট24ডটকম,০৯মেঃ গত বুধবার দিবাগত রাতে কালবৈশাখীর ছোবল বজ্রপাতে এক গৃহবধূ ও গাছের নিচে চাপা পড়ে এক স্কুলছাত্রীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে বলে খবরে জানা গেছে।শতাধিক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে।এছাড়া ঝড়ের তীব্রতায় বহু এলাকায় ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বহু স্থানেগাছপালা উপড়ে ও ভেঙে গেছে। ঝড়ে সঞ্চালন লাইন ছিড়ে যাওয়ায় বিভিন্ন এলাকায়বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ রয়েছে।
    বগুড়ার ধুনটে কালবৈশাখী ঝড়ে ২০ গ্রামের দুই শতাধিকবাড়িঘর, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গাছপালা ও পাকা ধানের ক্ষতি হয়েছে। ঝড়ের সময়বজ্রপাতে সুইটি খাতুন (২৫) নামে এক গৃহবধূ মারা গেছে। তিনি উপজেলার নিমগাছিইউনিয়নের বেড়েরবাড়ি গুদারপাড়া গ্রামের মাহবুবর রহমানের স্ত্রী। গতকালবৃহস্পতিবার বিকেল ৪টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।
    জানা যায়, বৃহস্পতিবার বিকেলে আচমকা কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। এর স্থায়িত্ব ছিলমাত্র ২০ মিনিট। ঝড়ের তাণ্ডবে মুহূর্তের মধ্যে উপজেলা কালেরপাড়া ইউনিয়নেরসুরগ্রাম, ঈশ্বরঘাট, রামনগর, কান্তনগর, হাসাপোটল, হাসখালী, কালেরপড়া, আনারপুর, এলাঙ্গী ইউনিয়নের রাঙ্গামাটি, বিলচাপড়ী ও নিমগাছি ইউনিয়নের নাংলু, নিমগাছি, বেড়েরবাড়িসহ ২০টি গ্রামের দুই শতাধিক বাড়িঘর লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। এছাড়াগাছপালা, ক্ষেতে পাকা বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। আনারপুর টেকনিক্যাল এ্যান্ডবিএম কলেজের ঘর উড়ে গেছে। নিহত গৃহবধু সুইটি খাতুন বিকেলে বাড়ির উঠানেগৃহস্থালি কাজ করছিল। এ সময় আকস্মিকভাবে কালবৈশাখী ঝড় শুরু হয়। ঝড়ের সময়বজ্রপাতে ঘটনাস্থলে তিনি মৃত্যুবরণ করেন যা নিমগাছি ইউনিয়নের চেয়ারম্যানসুজাউদ্দৌলা রিপন গৃহবধুর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
    পাবনার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কাল বৈশাখী ঝড়ে তিনটিউপজেলার প্রায় ২ শতাধিক কাচা-ঘর বাড়ি বিধ্বস্ত এবং গাছের নীচে পড়ে এক স্কুলছাত্রী নিহত এবং আহত হয়েছেন প্রায় অর্ধশতজন। ঝড়ে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্তহয়েছে  চাটমোহর উপজেলা।  কালবৈশাখী ঝড়ে ১০টি  গ্রাম  লন্ডভন্ড হয়ে গেছে। এছাড়া ঝড়ে বিদ্যুৎ লাইন ক্ষতিগস্ত হওয়ায় বন্ধ রয়েছে ৩টি  ইউনিয়নের বিদ্যুৎসরবরাহ।
    গত বুধবার  রাতে পাবনার উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া  কাল বৈশাখী ঝড় ওবৃষ্টিতে  চাটমোহর উপজেলার হরিপুর ইউনিয়নের বারুরিয়া, চড়ুইকোল, পাঁচুরিয়া, ছাইকোলাসহ ১০টি  গ্রামের বিপুল সংখ্যক  গাছ ও কাঁচ ঘর ভেঙ্গে পরে। ঝড়েগাছের নীচে চাপা পরে উর্মি খাতুন নামের এক স্কুলছাত্রী মারা যায়। সেবারুরিয়া   গ্রামের উম্বর আলীর কন্যা এবং হরিপুর বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়েরষষ্ঠ শ্রেণির  ছাত্রী ছিল। এদিকে ঝড়ে বৈদুতিক খুটি ভেঙ্গে পড়ায় উপজেলারহরিপুর, নিমাইচরা ও হান্ডিয়াল ইউনিয়নের প্রায় ৪০ টির বেশী গ্রাম বিদ্যুৎসংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে।  পাবনা পলী বিদ্যুৎ সমিতি-১, চাটমোহরের জিএমপ্রকৌশলী আব্দুল মতিন বলেন, বুধবার  ঝড়ে গাছ ভেঙ্গে বিদ্যুৎ লাইন নষ্ট হয়েগেছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ হরিপুর ইউনিয়নে বিদ্যুৎ সরবরাহনিশ্চিত করা গেলেও নিমাইচরা ও হান্ডিয়াল ইউনিয়নে বিদ্যুৎ  সরবরাহস্বাভাবিক  করতে আরো সময় লাগবে । এদিকে, কাল বৈশাখী ঝড়ে চাটমোহর নিকটবর্তীভাঙ্গুড়া, ফরিদপুর উপজেলার বেশ কয়টি গ্রামের কাচা-ঘর বাড়ি এবং গাছ পালাউপড়ে গেছে। সব মিলিয়ে পাবনায় প্রায় ২ শতাধিক ঘর-বাড়ি বিধ্বস্ত হয়েছে। এরিপোর্ট রেখা পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় কোন ত্রাণ সামগ্রী পৌঁছেনি।
    ঝিনাইদহের শৈলকুপায় স্মরণকালের ভয়াবহ কালবৈশাখী ঝড়ে ৪০টিগ্রাম লণ্ডভণ্ড করেছে।ঝড়ের আঘাতে ৫ শতাধিক বাড়ি-ঘর বিধ্বস্ত, ফসল ও গাছ-পালারব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। আহত হয়েছেন অন্তত ২০ জন। ঝড়ে কয়েক কোটি টাকার ক্ষতিহয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঝড়ের কারণে বৈদুতিক খুঁটি উপড়ে পড়ায় উপজেলাজুড়েবিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। অনেকে আশ্রয়হীন হয়ে পড়েছেন। কয়েকটিগ্রামের রাস্তায় গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে।
    এলাকাবাসীর সূত্রে জানা যায়, বুধবার রাত ২টার দিকে শৈলকুপা উপজেলার উপর কালবৈশাখী ঝড় আঘাত হানে। প্রায়৩৫মিনিট ধরে চলে ঝড়ের তাণ্ডব। ঝড়ের আঘাতে শৈলকুপা পৌরসভা ত্রিবেনী, মির্জাপুর, কাঁচেরকোল, দিগনগর ও সারুটিয়া ইউনিয়নের অন্তত ৪০টি গ্রাম লণ্ডভণ্ড হয়ে যায়। ঝড়ের সাথে শিলাবৃষ্টিতে উঠতি বোরো ধানের ক্ষতি হয়েছে। অনেকস্থানে পাকা ধান ক্ষেত মাটির সাথে মিশে গেছে। কয়েকশ হেক্টর জমির কলাগাছভেঙ্গে পড়েছে। পানের বরজ ও সবজি ক্ষেতও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। হাজার হাজারগাছপালা উপড়ে পড়ে। এদিকে ঝড়ের পর ক্ষতিগ্রস্থ মানুষগুলো খোলা আকাশের নিচেবসবাস করছেন। ৫০ বছরের মধ্যে এলাকার মানুষ ঝড়ের এমন তা-ব দেখেননি। সব চেয়েবেশী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে পদমদী, শেখপাড়া, রতিডাঙ্গা, বোয়ালিয়া, আনন্দনগর, ভদ্রডাঙ্গা শ্রীরামপুর, বসন্তপুর, নিশ্চিন্তপুর, তমালতলা ও শিতলীডাঙ্গাগ্রাম।
    ল-ভ- ইবি ঃ সহ¯্রাধিক পাখির মৃত্যু
    কালবৈশাখীঝড়ে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস লণ্ডভণ্ড। বুধবার মধ্যরাতেপ্রকৃতির কালবৈশাখী ঝড়ের তান্ডবলীলায় বিশ্ববিদ্যালয়ে উপড়ে গেছে বিভিন্ন গাছ, ভেঙ্গে গেছেবৈদ্যুতিক খুটি। এতে ক্যাম্পাসের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এছাড়া প্রবল ঝড়েবিশ্ববিদ্যালয়ে শতাধিক পাখির মৃত্যু হয়েছে।
    বুধবার রাত ১টার দিকেপ্রথমে দমকা বাতাস প্রবাহ শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পরেই প্রকৃতি লিলা চালায়। শুরু হয় ধ্বংসযজ্ঞ। প্রায় ২০ মিনিট দীর্ঘস্থায়ী এ ঝড়েক্যাম্পাসের প্রায় অর্ধশতাধিক গাছ ভেঙ্গে যায়। উপড়ে যায় বেশকিছু সংখ্যকবৈদ্যুতিক খুটি। এছাড়া ক্যাম্পাসের বিভিন্ন দোকান-পাট তছনছ হয়ে যায়।কালবৈশাখী ঝড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ জিয়াউর রহমান হলের পিছনের মেহগনিবাগানের অধিকাংশ গাছের ডাল ভেঙ্গে যায়। এতে গাছগুলোতে থাকা প্রায় শতাধিক পাখির মৃত্যু হয়েছে।মেহগনি বাগানে এসব পাখির নিথর মৃত্যু দেহ পড়েথাকতে দেখা যায়।
    অপরদিকে নেত্রকোনায় কালবৈশাখী ঝড়ের ১২ দিন পেরিয়ে গেলেও বিদ্যুৎ সরবরাহব্যবস্থা স্বাভাবিক না হওয়ায় স্থবির হয়ে পড়েছে  লক্ষাধিক মানুষের জনজীবন।বিদ্যুৎ না থাকায় প্রচন্ড তাপদাহে বিশাল এ জনগোষ্ঠী রয়েছে চরম ভোগান্তিতে, ব্যবসা বানিজ্যে নেমে এসেছে অচলাবস্থা। বিদ্যুতের অভাবে শিক্ষার্থীদেরলেখাপড়া বিঘ্নিত হচ্ছে।

    গত ২৭ এপ্রিল মধ্য রাতে নেত্রকোনা সদরেরএকাংশ, কলমাকান্দা, বারহাট্টা, মোহনগঞ্জ  ও পাশ্ববর্তী সুনামগঞ্জ জেলারধর্মপাশা উপজেলার  প্রায় ৪৫টি গ্রামের উপর দিয়ে বয়ে যায় প্রচন্ড কালবৈশাখীঝড়। প্রায় আধাঘন্টা স্থায়ী এ ঝড় লন্ডভন্ড করে দেয় লক্ষাধিক মানুষেরস্বাভাবিক জীবন। কেড়ে নেয় তরতাজা ১৩টি প্রাণ। বিধ্বস্ত হয় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ প্রায় ৫ সহ¯্রাধিক কাচা পাকা ঘরবাড়ী। উপড়ে পড়ে অসংখ্যগাছপালা। ভেঙ্গে পড়ে প্রায় ২শতাধিক বৈদ্যুতিক খুঁটি। ঝড়ে খবর পেয়েহেলিকপ্টারে চড়ে দুর্গত এলাকায় ছুটে আসেন যুব ও ক্রীড়া উপ-মন্ত্রী আরিফ খানজয়। এর পরপরই ত্রাণ মন্ত্রনালয়ের সচিব, মহা পরিচালক, জনপ্রতিনিধিসহপ্রশাসনের পদস্থ কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করে দ্রুততম সময়েবিদ্যুৎ সরবরাহসহ ক্ষতিগ্রস্থদেরকে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের সাহায্যসহযোগিতা করার আশ্বাস প্রদান করেন। একই সঙ্গে ইউপি চেয়ারম্যান ওমেম্বারদেরকে ক্ষতিগ্রস্থদের সঠিক তালিকা তৈরীর নির্দেশ প্রদান করেন।ক্ষতিগ্রস্থদের অভিযোগ, এত দিন পেরিয়ে গেলেও তাদের ভাগ্যে ঝুটেছে মাত্র ৫থেকে ১০ কেজি চাল আর যত সামান্য কিছু টাকা। মন্ত্রীর আশ্বাসের ১২ দিন পরওপল্লী বিদ্যুৎ সমিতি বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থা স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়েআনতে পারেনি।

    সুনামগঞ্জের দিরাই এলাকায় পর পর কয়েকদিনে কাল বৈশাখী ঝড়ে প্রচুর ক্ষতি করেছে।শত শত বাড়িঘর ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে।