দেড় বছর আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও জুড়ীতে এক সেতুর কাজ এখনো বাকী ৭০ শতাংশ!

0
180

এম এম সামছুল ইসলাম, জুড়ী (মৌলভীবাজার) : মৌলভীবাজারের জুড়ী উপজেলার সাগরনাল ইউনিয়নের কাপনাপাহাড় চা-বাগান ও কাশিনগর গ্রামের মঝখানে জুড়ী নদীর ওপর ‘বৃন্দারঘাট সেতুর’ কাজ  দেড় বছর আগে শেষ হওয়ার কথা থাকলেও এখনও ৭০ শতাংশ কাজ বাকী রয়েছে। মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ শেষে ঠিকাদারের লোকজন কাজ বন্ধ করে চলে যান। এর পর থেকে প্রায় দেড় বছর হয়ে গেল কাজ বন্ধের। একাজটি দ্রুত সম্পন্ন করতে পরিবেশমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের (এলজিইডি) কর্মকর্তারা ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেন। তাতেও কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এতে স্থানীয় লোকজন দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। 
এ দিকে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ঠিকাদারকে বাতিলের প্রস্তুতি নিচ্ছে। ওই সেতুর কাজের ঠিকাদার হচ্ছেন, ভোলা পৌরসভার মেয়র ভোলা জেলা যুবলীগের সভাপতি মো. মনিরুজ্জামান। 
এলজিইডি’র সূত্রে জানা গেছে, এলাকাবাসীর দীর্ঘ দিনের দাবির পরিপ্রক্ষিতে ২০২০ সালের ২৬ অক্টোবর  ৬০ মিটার দীর্ঘ আরসিসি গার্ডার ‘বৃন্দারঘাট সেতুর’ নির্মাণকাজ শুরু হয়। ৪ কোটি ৩০ লাখ টাকা ব্যায়ে ‘মেসার্স মনির ট্রেডার্স’ নামের ভোলার একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ পায়। প্রতিষ্ঠানটির মালিক ভোলা পৌরসভার মেয়র মনিরুজ্জামান। কার্যাদেশ অনুযায়ী, ২০২১ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর কাজ সম্পন্নের কথা ছিল। ২০২২ সালের মার্চ মাসে হঠাৎ করে কাজ বন্ধ হয়ে যায়। পরে আর শুরু হয়নি। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাজ বাতিলের সুপারিশ করে এলজিইডি’র উপজেলা প্রকৌশলী ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে একটি চিঠি পাঠান।
সরেজমিনে গিয়ে বুধবার (২৪ মে) দেখা যায়, বৃন্দারঘাটে লোকজন নৌকায় করে নদীর এপার-ওপারে চলাচল করছেন। নৌকা ভাড়া মাথাপিছু ১০ টাকা। কাপনাপাহাড় বাগানে সাপ্তাহিক হাট বসেছে। নদীর বিপরীত পাশের বিভিন্ন এলাকার লোকজন হাটে কেনাকাটা করতে এসেছেন। কেনাকাটার পর তাঁরা আবারও নৌকায় করে বাড়ি ফিরছেন। নদীর দুই পাশে সেতুর শুধু দুটি ‘অ্যাবাটমেন্ট (পাকার ভিত)’ নির্মাণ করে রাখা। আর কোনো কাজ চোখে পড়েনি।
এলাকাবাসীর অনেকেই বলেন, নদীর এপারে কাপনাপাহাড় চা-বাগান। আর ওপারে কাশিনগর, বটনিঘাট, পাতিলাসাঙ্গন, ছুটিয়াবাড়ি ও নয়াগ্রাম এলাকা পড়েছে। এসব এলাকার পাঁচ-ছয় হাজার লোক প্রতি দিন নানা কাজে এপার-ওপারে নৌকায় করে চলাচল করেন।
এ ছাড়া কাপনাপাহাড় বাগান এলাকার ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী নদীর ওপারে অবস্থিত পাতিলাসাঙ্গন উচ্চবিদ্যালয়ে গিয়ে লেখাপড়া করে। অন্তত ২০০ বছর ধরে লোকজন বৃন্দারঘাট দিয়ে নৌকায় করে চলাচল করছেন।
নির্মাণাধীন সেতুর কাছে দেখা মিলে কাপনাপাহাড় বাগান এলাকার বাসিন্দা স্থাস্থ্যকর্মী দেবাশীষ যাদবের।
তিনি বলেন, বৃন্দারঘাটে নৌকায় করে নদী পারাপারের সময় প্রতি বছরই চার-পাঁচটি দুর্ঘটনা ঘটে। সম্প্রতি প্রবল স্রোতে দুই বার স্কুলশিক্ষার্থীদের নৌকা উল্টে যায়। এতে তাদের বই, খাতা ও কাপড়চোপড় ভিজে নষ্ট হয়। তবে, বড় ধরনের কোনো দুর্ঘটনা ঘটেনি। সেতুর কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে তাদের আর এ রকম ঝুঁকিতে পড়তে হতো না।
এলাকাবাসী আরো বলেন, বৃন্দারঘাট ও পাশের কয়লারঘাট সেতুর কাজ একই সময়ে শুরু হয়েছিল। ২০২২ সালের ২৮ অক্টোবর পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনবিষয়ক মন্ত্রী স্থানীয় মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনের সংসদ সদস্য মো. শাহাব উদ্দিন কয়লারঘাট সেতুর উদ্বোধন করেন কিছু দিন আগে। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভুক্তভোগী লোকজন ‘বৃন্দারঘাট সেতুর’ কাজ ফেলে রাখায় তাঁদের দুর্ভোগের কথা তুলে ধরেন। এর জবাবে মন্ত্রী দ্রুত সেতুটির কাজ শেষ করতে ঠিকাদারকে তাগিদ দিয়েছেন বলে জানান।
গত ১ এপ্রিল মন্ত্রী উপজেলা পরিষদের অডিটোরিয়ামে উপজেলা প্রশাসন আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে গেলে সেখানেও এলাকাবাসীর পক্ষ থেকে দ্রুত সেতুটির কাজ সম্পন্নের জন্য তাঁর কাছে দাবি জানানো হয়। 
এলজিইডি’র উপজেলা কার্যালয়ের প্রকৌশলী ননী গোপাল দাস বলেন, ‘বৃন্দারঘাট সেতুর’ কাজ সম্পন্নের জন্য তাঁদের পক্ষ থেকে ঠিকাদারকে একাধিকবার তাগিদ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু, নানা অজুহাতে কাজ শুরু করছেন না ঠিকাদার। সেতুটির মাত্র ৩০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখনো ৭০ শতাংশ কাজ বাকি।
এলজিইডি’র মৌলভীবাজার জেলা কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ আবদুল্লাহ বলেন, ঠিকাদার দ্রুত কাজ শুরু করবেন বলে সম্প্রতি তাঁকে জানান। ঠিকাদার বাতিলের প্রস্তুতি চলছে।
তবে, এ প্রক্রিয়ায় একটু সময় লাগবে।
বুধবার মুঠোফোনে ঠিকাদার মনিরুজ্জামানের সঙ্গে কথা হলে  তিনি বলেন, কিছু দিনের মধ্যে কাজ শুরু করাবেন। নির্ধারিত সময়ে কাজ সম্পন্ন না করার বিষয়ে জানতে চাইলে বলেন, মালামালের দাম অনেক বেড়ে গেছে। তাই সরকারের সিডিউল মোতাবেক কাজ শেষ করতে পারিনি।