থানায় ৫পুলিশের কিশোরী গণধর্ষণ ঘটনায়:ওসি বদলি

    0
    258

    আমারসিলেট 24ডটকম,১১অক্টোবর :গাইবান্ধাজেলার  গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মো.  দেলোয়ার হোসেনকে অবশেষে বদলি করা হয়েছে। গোবিন্দগঞ্জ থানায় গত ২৮ সেপ্টেম্বর থেকে ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত পথহারা এক কিশোরিকে (১৫) আটকে রেখে ৫ পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। এব্যাপারে গত কয়েকদিন ধরে আন্দোলন করেন গাইবান্ধার বিভিন্ন নারী ও সামাজিক সংগঠনের বিক্ষুব্ধ নেতাকর্মীরা। বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় এ সম্পর্কিত খবর প্রকাশিত হয়। এর পরপরই ঊর্ধতন কর্তৃপক্ষের আদেশে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে দেলোয়ারকে বদলির আদেশ দেয়া হলো। পুলিশ সুপার মো. সাজিদ হোসেন বদলির আদেশের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
    ঘটনার বিবরনে জানা যায়, গত ২৮ সেপ্টেম্বর শনিবার সন্ধ্যায় ঢাকা-রংপুর মহাসড়কের গোবিন্দগঞ্জের ফাঁসিতলার রাস্তায় কিশোরীটি  দাঁড়িয়ে কাঁদছিল। এসময় পথচারীরা তাকে উদ্ধার করে  স্থানীয় বাজারে নিয়ে যায়। পরে রাস্তায় টহলরত পুলিশের কাছে তাকে তুলে দেয়া হয়। পরদিন সকালে এ বিষয়ে একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করা হয়। অন্যদিকে মেয়েটিকে তিন দিন যাবৎ থানায় আটকে রেখে পাঁচ পুলিশ সদস্য পর্যায়ক্রমে ধর্ষণ করে। পুলিশের নানা হুমকির মুখে প্রথমে মুখ না খুললেও এক সময় কারা হেফাজতে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় কিশোরী পুলিশ কর্তৃক অমানবিক, বর্বর নির্যাতনের কথা প্রকাশ করে। প্রাপ্ত  সূত্রে জানা গেছে, জেল সুপার শহীদুল ইসলাম কারাগারে গেলে তার কাছেই প্রথম ধর্ষিত হওয়ার কথা জানায় ওই কিশোরী। তবে ধর্ষণকারী পাঁচ পুলিশের নাম জানাতে পারেনি সে।
    কারাগারের জেল সুপার শহীদুল ইসলাম জানান, মেয়েটি তাকে ধর্ষিত হওয়ার বিষয়টি জানানোর পর গত ২ অক্টোবর গোবিন্দগঞ্জ সিনিয়র বিচারিক হাকিম আদালতে হাজির করে তার জবানবন্দি গ্রহণ করা হয়। এ জবানবন্দি এজাহার হিসেবে গণ্য করে ডাক্তারি পরীক্ষাসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ৩ অক্টোবর পুলিশকে নির্দেশ দেন সিনিয়র বিচারিক হাকিম মো. তারিক হাসান। পরে আদালতের নির্দেশে গত ৪ অক্টোবর রাতে মেয়েটিকে বাদি করে গোবিন্দগঞ্জ থানায় একটি মামলা রেকর্ড করা হয়। গোবিন্দগঞ্জ থানার ওসি শেখ দেলোয়ার হোসেন বলেন, গোবিন্দগঞ্জের সিনিয়র বিচারিক হাকিম আদালতের আদেশে এ মামলা করা হয়েছে। মামলাটি তদন্তের ভার দেয়া হয়েছে জেলা গোয়েন্দা পুলিশের ওসি আহসান হাবিবকে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ওসি আহসান হাবিব বলেন, ৬ অক্টোবর তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছি। তদন্ত কাজ শুরু করা হয়েছে।
    এদিকে ডাক্তারি পরীক্ষার ব্যাপারে গাইবান্ধা সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) হানিফ বলেন, আদালতের নির্দেশ পাওয়ার পর ৬ অক্টোবর কিশোরীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করা হয়েছে। দ্রুত প্রতিবেদন দেয়া হবে। তবে পরীক্ষায় কী পাওয়া গেছে তা বলতে রাজি হননি তিনি।
    এদিকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও প্রকৃত দোষীদের শাস্তির দাবিতে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, নারী মুক্তি কেন্দ্র, ও সমাজতান্ত্রিক মহিলা ফোরাম মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল করে। মহিলা পরিষদ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করে। এতে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠন, রাজশাহীর ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেন্টারে শিশুটির শরীরিক পরীক্ষা ও থানায় নয় স্থানীয় সেফ হোম রোকেয়া সদনে শিশুটিকে রাখার দাবি জানান তারা। ওই শিশুটিকে বর্তমানে গাইবান্ধা জেলা কারাগারে নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছে। শিশুটির বাড়ি ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা উপজেলায়।