ত্রিপুরা জনগোষ্ঠীর কৃষিজমিতে আশ্রয়ন প্রকল্প না করার দাবিতে মানববন্ধন

    0
    346

    কে এস এম আরিফুল ইসলাম, বিশেষ প্রতিনিধি: মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল শহরের চৌমুহনা চত্তরে ত্রিপুরা জনগোষ্টিকে শতবছরের কৃষি জমি থেকে উচ্ছেদের সিদ্ধান্ত বাতিল ও লাউয়াছড়া বনের জন্য ক্ষতিকর আশ্রয়ন প্রকল্প অন্যত্র স্থানান্তরের দাবীতে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্টিত হয়েছে।

    রোববার (৮ই নভেম্বর) দুপুরে শ্রীমঙ্গল চৌমুহনা চত্তরে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র রক্ষা আন্দোলন কমিটির আয়োজনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

    এতে লাউয়াছড়া বন ও জীববৈচিত্র রক্ষা আন্দোলনের আহবায়ক জলি পালের সভাপতিত্বে ও প্রিতম দাশের সঞ্চালনায় আয়োজিত মানববন্ধন ও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, বাসদ নেতা এডভোকেট আবুল হাসান, জাবেদ ভুইয়া, এসকে দাশ সুমন, কাজী সামছুল হক, আরপি নিউজ সম্পাদক সৈয়দ আমিরুজ্জামান, এছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন, অপি চন্দ, বৃষ্টি চন্দ, অনন্ত দূর্বা, সোহেল শ্যাম, ছায়েদ আহমেদ প্রমূখ।

    এ মানববন্ধন থেকে শ্রীমঙ্গল উপজেলা প্রশাসন ও সরকারকে উদ্দেশ্য করে বাসদ নেতা আ্যডভোকেট আবুল হাসান বলেন, সরকারের এ উদ্যোগ প্রশংসার দাবীদার, তবে আপনাদের জায়গা নির্বাচন করা ভূল। আপনারা শ্রীমঙ্গলে উন্নয়ন বাস্তবায়ন করতে গিয়ে আদিবাসী মানুষ ও প্রকৃতিকে বিপন্ন করতে পারেন না, ডলুবাড়িতে ১২০ টি ত্রিপুরা আদিবাসী পরিবার রয়েছে, ৩৮২ একর জমির ব্যাপারে ১৯৭৮ সালে মহামান্য হাইকোর্টের একটি রায় রয়েছে এবং সরকারকারের প্রতি আদালতের নির্দেশনা রয়েছে ত্রিপুরাদের জমির মালিকানা যেনো দেওয়া হয় কিন্তু আজও আদালতের রায় বাস্তবায়ন হয়নি।

    বক্তারা বলেন, স্থানীয় সংসদ সদস্য থেকে প্রশাসনিক আমলা যারাই এই সিদ্ধান্তের সাথে জড়িত তারা নিশ্চয়ই আমাদের যৌক্তিক দাবী পর্যালোচনা করে ইতিমধ্যে নেওয়া সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসবেন এবং অনত্র জায়গা নির্ধারণ করবেন। তারা আরো বলেন,নৌকা মার্কার সরকার ক্ষমতায়, আপনারাই ‘নৌকা মার্কার ভোটারদের উচ্ছেদ করার চেষ্টা করছেন, ওরা তো, বিএনপি – জামাত, বাসদ, কমিউনিস্টকে ভোট দেয় না, তাহলে আপনারা সেটা করার চেষ্টা করছেন কার ইশারায়?

    ত্রিপুরা জনগোষ্টি নেতা জনক দেববর্মা বলেন, শান্তিপুর্ণভাবে আমরা এখানে বসবাস করছি, আমরাও চাই ভূমিহীন মানুষরা জমি ও গৃহ পাক, বাংলাদেশ এগিয়ে যাক, তবে তা হতে হবে পরিকল্পিত এবং পরিবেশ, প্রকৃতি এবং বিভিন্ন জাতি -গোষ্টির জীবন ও জীবিকা টিকিয়ে রেখে। কিন্তু আমরা লক্ষ করছি, সরকারের পদক্ষেপ একপ্রকার স্ববিরোধি হয়ে যাচ্ছে, একদিকে ঘর দেওয়ার পদক্ষেপ অন্যদিকে আমাদের কৃষিজমি বেহাত হওয়ার আশঙ্কা। এটা অনস্বীকার্য যে, শ্রীমঙ্গলের ইউএনও অত্যন্ত চমৎকার মানুষ, তিনি আদিবাসীদের জন্য ব্যাপক কাজ করেছেন যা আগে কখনো আমরা পাইনি। আমরা তাঁর কাছে অনুরোধ করব, আমাদের জীবন ও জীবিকা যাতে হুমকীর সম্মুখীন না হয় সেটি লক্ষ রেখে, আপনি কতিপয় তথাকথিত প্রভাবশালীদের নিকট থেকে সরকারী খাস জমি উদ্ধার করেন, শ্রীমঙ্গলবাসী আপনার পাশে থাকবে।

    এ ব্যাপারে শ্রীমঙ্গল উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. নেছার উদ্দিন এর সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে আমাদের জানান, আমরা আন্দোলনকারীদের একটি স্মারকলিপি পেয়েছি, এখন আমরা সেটি বিশদভাবে পর্যালোচনা ও আলাপ আলোচনা করে দেখব। খাস জমি উদ্ধারের ব্যাপারে তিনি বলেন, উপজেলার সমস্ত সরকারী খাস জমি এবং কি অবস্থায় রয়েছে সেরকম এটা তালিকা আমরা করে ফেলেছি। বন্দোবস্ত দেওয়ার জন্য যোগ্য জমির শ্রেণী আমরা খুঁজে খুঁজে সমস্ত ভূমিহীনদের দেওয়ার প্রক্রিয়া গ্রহণ করছি। অবৈধ দখলদারদের কাছে কি পরিমান সরকারী জায়গা অপদখলে আছে সেটিরও তালিকা করা হচ্ছে এবং সেগুলো উদ্ধারকাজ চলমান প্রক্রিয়া এবং ভবিষ্যতে আরও জোরদার করা হবে।