তাহিরপুর সীমান্ত চোরাচালানীরাদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত

    0
    268

    কোটিকোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,১৭জানুয়ারীঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুর সীমান্ত দিয়ে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে ভারত থেকে ওপেন পাচাঁর করা হচ্ছে চুনাপাথর,কয়লা ও মাদকদ্রব্য। এর সাথে অবাধে আসছে মরণনেশা হেরুইন,ইয়াবা,মদ,গাঁজা,আফিমসহ ঘোড়া,কাঠ,কমলা,নাসিরউদ্দিন বিড়ি ও অস্ত্র।

    এসবের বিনিময়ে দেশীপণ্য মাছ,হাঁস,মোরগ,শাক-সবজি,ভৈজ্যতেল,সিরামিকের থালা-বাসন,জগ,গ্লাস,মোবাইল সীম ও কার্ড ভারতে পাঠাচ্ছে চোরাচালানীরা। অভিযোগ উঠেছে বিজিবি ও চোরাচালানীরা মিলেমিশে এই সীমান্ত দিয়ে ওপেন চোরাচালান করছে।

    পুলিশ মাঝে মধ্যে অভিযান চালিয়ে চোরাচালানী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করলেও বিজিবি কাউকে গ্রেফতার করেনা।

    রোববার সকাল সাড়ে ৭টায় বালিয়াঘাট বিজিবি ক্যাম্পের সামনের পাটলাই নদীতে গিয়ে দেখাযায়,চোরাচালানীরা একদিকে চুনাপাথরের নৌকা বোঝাই করছে অন্যদিকে ট্রলি দিয়ে টেকেরঘাট খনি প্রকল্প ও বুরুঙ্গাছড়া,রজনী লাইন থেকে পাথর বোঝাই করে ড্রাম্পের বাজার সংলগ্ন পাটলাই নদীর তীরেসহ টেকেরঘাট স্মৃতিসৌধের নিচে নদীরঘাটে মজুদ করছে।

    অপরদিকে চাঁনপুর বিজিবি ক্যাম্পের সামনে অবস্থিত নয়াছড়া দিয়ে ভারত থেকে চুনাপাথর পাচাঁর করে প্রথমে চাঁনপুর বাজারে ব্রিজের পাশে,পরবর্তীতে যাদুকাটা নদীতে নিয়ে মজুত করছে চোরাচালানীরা।

    এ ছাড়া লাকমা ছড়া,বিসিআইসির চুনাপাথর খনি প্রকল্প, লালঘাট,চাঁরাগাঁও ছড়া,জঙ্গলবাড়ি ও যাদুকাটা,বারেকটিলা,লাউড়গড় এলাকা দিয়ে বিজিবির উপস্থিতিতেই চোরাচালানীরা ওপেন ভারতে প্রবেশ করে ভাংগছে চুনাপাথর,আনছে মদ, গাঁজা,হেরুইন,ইয়ারা,কয়লা,কাঠ,ঘোড়া,নাসিরউদ্দিন বিড়ি ও কমলা।

    এ ব্যাপারে বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্কষ্টেশনের ব্যবসায়ীরাসহ স্থানীয়রা জানায়,প্রতিদিনের মতো গত ১১ই জানুয়ারী বিকাল ৩টায় কোম্পানী কমান্ডার মহিউদ্দিনের নেতৃত্বে চোরাচালানী জম্মত আলী,কদর আলী,নুরু মিয়া,সোনালী মিয়া ও মরা সিদ্দিক গং টেকেরঘাট বিজিবি ক্যাম্প সংলগ্ন চুনাপাথর খনি প্রকল্পে টিলা কেটে অবৈধভাবে চুনাপাথর উত্তোলনের সময় মাটি চাপা পড়ে লাল জাহান বেগম(৪৫) নামের মহিলা শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।

    এ দিন ভোর সাড়ে ৪টায় লাউড়গড় ক্যাম্প সংলগ্ন যাদুকাটা নদী দিয়ে কয়লা ও ঘোড়া পাচাঁর করার সময় সোহাগ মিয়া ও আনোয়ার হোসেন নামের দুই চোরাচালানীকে ধরে নিয়ে যায় বিএসএফ।

    এ ছাড়াও বিজিবির সোর্স জানু মিয়া ও আব্দুল আলী ভান্ডারীর নেতৃত্বে লালঘাট দিয়ে কয়লা পাচাঁর করার সময় কয়লার গুহায় চাপা পড়ে ১জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে। লাকমা গ্রামের সোর্স ইদ্রিস আলী,আব্দুল হাকিম ভান্ডারী ও শহিদ মিয়ার নেতৃত্বে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে বিএসএফের তাড়া খেয়ে লাকমার চোরাই কয়লার গুহায় চাপা পড়ে ৩জন মৃত্যু হয়েছে।

    আর চাঁরাগাঁয়ের পাহাড়ি ছড়ায় পড়ে ২জনের মৃত্যু হওয়াসহ আলোচিত সীমান্ত লাউড়গড়ের সোর্স জজ মিয়া,নবীকুল,নুরু মিয়া ও গফ্ফার মিয়ার নেতৃত্বে কয়লা পাচাঁর করতে গিয়ে যাদুকাটা নদীতে ডুবে এপর্যন্ত ৭জনের মৃত্যু হয়েছে। চাঁনপুর গ্রামের সোর্স আবু বক্কর,সম্্রাট মিয়া ও আল-আমিনের নেতৃত্বে চাঁনপুর দিয়ে চুনাপাথর ও কয়লা পাচাঁরের সময় ২জনের মৃত্যু হয়।

    এ ছাড়া বিএসএফের হাতে আটক হয়ে নির্যাতিত হওয়াসহ জেল খেটেছে শতশত নিরীহ কয়লা ও পাথর শ্রমিক। এসবের পরেও বিজিবি চিহ্নিত চোরাচালানীদেরকে গ্রেফতার না করে বরং তাদেরকে সোর্স নিয়োগ করে এই সীমান্তকে চোরাচালানের স্বর্গরাজ্যে পরিণত করেছে।

    ভারত থেকে প্রতিবস্তা কয়লা পাচাঁরের জন্য ৮০টাকা,প্রতিট্রলি চুনাপাথর ১০০টাকা,নুড়ি পাথর ও মরাপাথর প্রতিট্রলি ৫০টাকা,১টি ঘোড়া ৩হাজার টাকা,ভারতীয় কাঠ ১টি থেকে ৬০টাকা, মদ,গাঁজা,হেরুইন,ইয়াবা ও নাসির উদ্দিন বিড়ির জন্য সাপ্তাহিক ২০হাজার হারে প্রতিটি বিজিবি ক্যাম্পের নামে চাঁদা উত্তোলন করছে।

    আর এই চাঁদা উত্তোলনের জন্য সোর্স হিসেবে মৌখিকভাবে টেকেরঘাট ক্যাম্পের জন্য নিয়োগ করা হয়েছে-রজনী লাইন গ্রামের মরা সিদ্দিক,বড়ছড়া গ্রামের সোনালী মিয়া,লাকমা গ্রামের দিলোয়ার হোসেন ও চোরাচালান মামলার জেলখাটা আসামী শহিদ মিয়া। বালিয়াঘাট ক্যাম্পের জন্য লালঘাট গ্রামের চাঁদাবাজি মামলার জেলখাটা আসামী আবুল কালাম,জানু মিয়া,লাকমা গ্রামের ইদ্রিস আলী,আব্দুল হাকিম ভান্ডারী ও দুধের আউটা গ্রামের চাঁদাবাজি মামলার জেলখাটা আসামী জিয়াউর রহমান জিয়াকে। এছাড়া চাঁনপুর ক্যাম্পের জন্য চাঁনপুর গ্রামের মদ পাচাঁর মামলার জেলখাটা আসামী আবু বক্কর,আলমগীর ও আলামিন।

    লাউড়গড় ক্যাম্পের জন্য বারেকটিলা গ্রামের মাদক ও চোরাচালান মামলার জেলখাটা আসামী নুরু মিয়া,আব্দুল গফ্ফার ও লাউড়গড় গ্রামের জজ মিয়া,নবীকুল। চাঁরাগাঁও ক্যাম্পের জন্য লালঘাট গ্রামের আব্দুল আলী ভান্ডারী,চাঁরাগাঁও এলসি পয়েন্টের মাতাল জলিল মিয়া,জঙ্গলবাড়ি গ্রামের লেংড়া জামাল ও কলাগাঁও গ্রামের তোতা মিয়াকে।

    এব্যাপারে শ্রমিক রিপন মিয়া,সবুজ মিয়া,রফিক মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন,সোর্সদের মাধ্যমে বিজিবির কোম্পানী কমান্ডার স্যারের অনুমতি নিয়ে আমরা ভারতে গিয়ে পাথর ভাঙ্গাসহ কয়লা পাচাঁরের কাজ করি। টেকেরঘাট ক্যাম্পের সোর্স সোনালী মিয়া বলেন,কোম্পানী কমান্ডার সারের নির্দেশে আমরা মিলেমিশে সব কাজ করছি,এসব নিয়ে পত্রিকায় লেখালেখি করলে কিছুই হবেনা।

    যাদুকাটা নদীর কয়লা শ্রমিক জুবায়ের মিয়া,কালা মিয়া,মতিন মিয়াসহ আরো অনেকেই বলেন,কোম্পানী কমান্ডার মহিউদ্দিন স্যার এই সীমান্ত এলাকায় আসার পর থেকে সব কিছু ওপেন হয়েগেছে। এব্যাপারে জানতে টেকেরেঘাট কোম্পানী কমান্ডার মহিউদ্দিনের সরকারী ফোন নাম্বারে বারবার ফোন করলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি।

    বড়ছড়া ও চাঁরাগাঁও শুল্কষ্টেশনের কয়লা ব্যবসায়ী রশিদ মিয়া,জুবায়ের হোসেন,আলী আমজাদ ও নবী হোসেন বলেন,দেশের অর্থনৈতিক মেরুদন্ড ভেঙ্গে দিয়ে নিজেদের পকেট ভারী করার জন্য এই সীমান্তের রক্ষকরা হয়েছে ভক্ষক,যার ফলে কোটিকোটি টাকার রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

    তাহিরপুর থানার ওসি মোহাম্মদ শহিদুল্লাহ বলেন,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধের দায়িত্ব মূলত বিজিবির কিন্তু তাদের অবহেলার কারণে এলাকার আইন শৃংঙ্খলা রক্ষার জন্য আমরা চিহ্নিত চোরাচালানী ও মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করছি।

    এব্যাপারে সুনামগঞ্জ ২৮ব্যাটালিয়নের বিজিবি অধিনায়ক গোলাম মহিউদ্দিন বলেন,আমি বর্তমানে ছুটিতে আছি,সীমান্ত চোরাচালান প্রতিরোধ করার জন্য আমি আমার সাধ্যমত চেষ্টা করছি।