তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নানা সংকট

    0
    160

    সাড়ে তিন লক্ষাধিক জনসাধারণের জন্য রয়েছে মাত্র ৫ জন চিকিৎসক !

    সুনামগঞ্জ প্রতিনিধিঃ জনবল ও প্রয়োজনীয় পরীক্ষার যন্ত্রপাতি সংকটে দিন দিন রোগাক্রান্ত হচ্ছে সাড়ে তিন লক্ষাধিক জনসাধারণের চিকিৎসার আশ্রয়স্থল তাহিরপুর উপজেলার একমাত্র স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি। শুরু থেকেই ৩০শয্যা বিশিষ্ট স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থাকলেও গত ২৫জানুয়ারী ২০১৯ তারিখ হতে এস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি ৫০শয্যায় উন্নীত করার পর ঘটা করে উদ্ভোধন করেন পরিকল্পনা মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্য।

    কিন্তু উন্নত চিকিৎসা ও যুগোপযোগী আধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে পরীক্ষা রেশ নেই এখানে। উন্নীত হওয়ার পূর্বে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কখনো ২জন,কখনো ৩জন চিকিৎসকের উপস্থিতি ছিল। উন্নীত হওয়ার পর ৩৯তম বিসিএসএ ৬জন চিকিৎসক একসাথে নিয়োগ দেয়া হয়। নিয়োগ দেয়ার পর পর্যায়ক্রমে ৩জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যান এবং ৩জন এখনো স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছেন।

    বর্তমানে নতুন নিয়োগকৃত ৩ জন,পূর্বের ১ জন ও ডিজির আদেশক্রমে ১ জনসহ মোট ৫ জন চিকিৎসক উপস্থিত থেকে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসা রোগীদের সেবা দিয়ে যাচ্ছেন সরজমিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স গেলে এমনি তথ্যই পাওয়া যায় তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসকবৃন্দের কাছ থেকে।
    জানাযায়,উপজেলা ৭ টি ইউনিয়নের ৩ লক্ষাধিক জনগোষ্ঠীর সেবা দেওয়ায় জন্য উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ১৩ টি চিকিৎসকের পদ রয়েছে। তার মধ্যে বর্তমানে ৮ টি পদই শুন্য রয়েছে। শুন্য পদগুলো হলো আবাসিক মেডিকেল অফিসার ১ জন,ডেন্টাল ১ জন,কনসালট্যান্ট ৪ জন (সার্জারী,মেডিসিন,গাইনী) ও এনেস্থেসিয়া ইউনিয়ন মেডিকেল অফিসার ২ জনের পদ শুন্য রয়েছে। শুধু ডাক্তার সংকট নয় র্দীঘ ১৫ বছর ধরে নেই ল্যাব টেকনিশিয়ান,একেই অবস্থা রেডিওগ্রাফার,ফার্মাসিষ্ট পদের। এক্সরে মেশিন ৫ বছরের বেশি সময় ধরে একটি রুমো তালা বদ্ধ আছে আর হাসপাতালের শুরুতেই উন্নত মানের তিনটি জেনারেটর চালু হলেও কয়েক বছর ব্যবহারের পর অকেজো হয়ে পরে আছে অধ্যবদি পর্যন্ত। ফলে আগত রোগীরা কোন ধরনের পরীক্ষা নিরীক্ষা করতে হলে বাহিরে
    পরীক্ষা নিরীক্ষা কাজটি সারতে হচ্ছে। সম্প্রতি একটি এ্যাম্বোল্যান্স দিলেও ব্যবহার করতে পারছেন না জরুরী প্রয়োজনে রোগীগন।
    ৩৯তম বিসিএসএ তাহিরপুরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে যোগদানকৃত ডাক্তার নিলুফার ইয়াসমিন জানান,৬ জন ডাক্তার একসাথে যোগদান করেছিলাম। ৩ জন অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন। আমি আর যায় নি। থেকে গেলাম হাওর পাড়ের মানুষ পাশে থেকে চিকিৎসা সেবা দিতে। সব জায়গাতেই তো চিকিৎসা সেবা দিতে হবে,তাহিরপুর থাকি বা অন্যত্র যাই। বর্তমানে যারা উপস্থিত রয়েছি সবাই চেষ্ঠা করছি সঠিকভাবে আগত রোগীদে স্বাস্থ্য সেবা দিতে।

    উপজেলার দক্ষিন শ্রীপুর ইউনিয়নের মানিকখিলা গ্রাম থেকে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা ঝর্ণা মনি জানান,হাসপাতালে নতুন মহিলা ডাক্তার আসছে শুনে আসলাম চিকিৎসা করানোর জন্য। তিনি ছিলেন না তখন আমার মত অনেকেই মন খোলে রোগের কথা বলতে পারছিলাম না এখন সুবিধা হয়েছে। তিনি আরও জানান প্রতিটি হাসপাতালে দু’একজন মহিলা ডাক্তার থাকা খুবই দরকার।

    সদর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান বোরহান উদ্দিন জানান,উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকতা থাকলেও তিনি মাসের অধিকাংশ সময় অফিসয়িাল কাজকর্ম,মিটিং,সেমিনার নিয়ে ব্যাস্থ থাকছেন। ৩ জন চিকিৎসক অন্যত্র বদলি হয়ে যাওয়ায় চিকিৎসা সেবা দিতে হিশশিম খাচ্ছেন অবশিষ্ঠ চিকিৎসক গণ।

    উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) সুমন বর্মন বলেন,১৩ জন চিকিৎসকের স্থলে ৫ জন চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন ফলে প্রতিদিনেই আগত রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে হিমসিম খাচ্ছি।

    তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার ইকবাল হোসেন বলেন,উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ডাক্তার থাকতে চাননা। নতুন নিয়োগ দিলেও তারা যোগদানের দিন থেকে অন্যত্র বদলি নিয়ে চলে যাওয়ার চেষ্ঠা করে। আমরা যারা এখানে আছি প্রত্যেকেই চেষ্ঠা করছি আমাদের সেবাটুকু দেয়ার।

    এবিষয়ে সুনামগঞ্জের সিভিল সার্জন মোঃ শামস উদ্দিন জানান,তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক সংকট আর ৬জন চিকিৎসক যোগদান করে আবার কি করে ৩ জন অন্যত্র বদলি হয়ে চলে গেছেন এ বিষয়টি আমি উর্ধ্বতন কতৃপক্ষকে অবহিত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করার জন্য শীঘ্রই চিঠি লিখব।