তাহিরপুরে হাওরে বাঁধ নির্মাণে অনিয়মের অভিযোগ

    0
    378

    “২শ কোটি টাকার ফসল নিয়ে লক্ষলক্ষ তাহিরপুর উপজেলার হাওরগুলোর কৃষকগন  উদ্বিগ্ন”

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫মার্চ,জাহাঙ্গীর আলম ভুঁইয়া,সুনামগঞ্জঃ সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে উপজেলার হাওরগুলোতে ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। গত ২৮শে ফেব্রুয়ারীর মধ্যে এই উপজেলার সব কয়েকটি হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার সরকারি নির্দেশ থাকলেও এখনও পর্যন্ত ৪০ভাগ কাজই শেষ হয় নি। ফলে তাহিরপুর উপজেলার ছোট-বড় মোট ২৩টি হাওরের উৎপাদিত ২শ কোটি টাকার অধিক ফসল নিয়ে উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে লক্ষ লক্ষ কৃষক। উপজেলার উল্লেখ যোগ্য বৃহৎ হাওরগুলো হলো-শনির হাওর,মাতিয়ান হাওর,লোভার হাওর,বলদার হাওর,টাঙ্গুয়ার হাওর সহ মোট ছোট-বড় ২৩টি।

    এসব হাওরের বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়ম হলেও দেখার কেউ নেই। তাহিরপুর উপজেলার সামসার হাওরের বৈঠাখালি বাঁধ ভেঙ্গে সামন্য বৃষ্টির পানি প্রবেশ করেছে। হাওরে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বাঁধ নির্মান করার নামে পিআইসির মাধ্যমে পাউবো পুকুর চুরির পায়তারা করায় টাংগুয়ার হাওর পাড়ের সন্যানী,এরালিয়া কোনা ও গনিয়াকুড়া ফসল রক্ষা বাঁেধ কোন কাজ না হওয়ায় ৩টি হাওরের প্রায় ৭শত একের জমির ধান গাছ পানিতে তলিয়ে গেছে। ফলে জেলার অন্যান্য হাওরের লক্ষ লক্ষ কৃষক আগাম বন্যায় কোটি কোটি টাকার এক ফসলী বোরো ধান পানিতে তলিয়ে যাবার আশংকায় উৎবেগ আর উৎকণ্ঠার মধ্যে আছে।

    তাহিরপুর উপজেলার কৃষি অফিস সূত্র জানায়,এ উপজেলায় আবাদী জমির পরিমান মোট ২৪হাজার ৯শত ৯৫হেক্টর। তার মধ্যে ১৮হাজার ২শত হেক্টরের অধিক জমিতে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বিভিন্ন প্রকার ধান চাষ করা হয়েছে। আর বাকি জমিতে অন্যান্য ফসল। উৎপাদিত ধানের মধ্যে রয়েছে-হাইবিট ৮শ হেক্টর,স্থানীয় ২২শ হেক্টর ও বাকি জমিতে অকশি জাতীয় ধান চাষ করা হয়েছে।

    এসব জমিতে প্রতি বছর উৎপাদিত ধান থেকে ৬৪হাজার মেঃটনের অধিক চাল হয়। যার মূল্য ২শত কোটির বেশি টাকা। কিন্তু প্রতি বছরই হাওর গুলোতে ব্যাপক অনিয়ম ও দূর্নীতির মধ্য দিয়ে ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণ করার ফলে পাহাড়ি ঢল ও বন্যার পানিতে ক্ষতিগ্রস্থ হয় ১৪হাজার ৯হেক্টর জমির অধিক ধান। উপজেলার কৃষকরা তাদের কষ্ঠার্জিত ফসল হারিয়ে হয়ে যায় নিঃস্ব।

    হাওরের কৃষকরা জানায়,প্রতি বছরের ন্যায় এবারও উপজেলার ছোট-বড় ২৩টি হাওর অরক্ষিত হয়ে পড়েছে। কারণ প্রতিটি ফসল রক্ষা বেরী বাঁধ নির্মাণে ব্যাপক অনিয়মের কারণে দূর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। হাওরে নির্মিত বেরী বাঁধ কৃষকদের ফসল রক্ষার্থে কোন উপকারে না আসলেও বাঁধ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিদের পকেট ভারী হচ্ছে। পাউবোর ঠিকাদার ও পিআইসিরা বাঁধের উপর থাকা গাছ-পালা কেটে পরিস্কার না করেই,বাঁধের দুই পাশ থেকে মাটি উত্তোলন করে কোন রকম দায় সারা ভাবে ফসল রক্ষা বাঁধের ওপর মাটি দিয়ে বেরী বাঁধ নির্মান করছেন।

    আবার অনেকেই এখনও পর্যন্ত বাঁধের কাজ শুরু না করে স্থানীয় প্রভাবশালী ও রাজনৈতিক নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে বুক ফুলিয়ে এলাকায় চলা ফেরা করছেন। আর যে সকল বাঁধের কাজ চলছে সেগুলো ব্যাপার অনিয়ম আর দূর্নীতির মধ্য দিয়ে কচ্ছব গতিতে চলছে।

    পানি উন্নয়ন বোর্ড এডিপি প্রকল্পের অধীনে তাহিরপর উপজেলার ২৩টি হাওরের মধ্যে ১৬টি হাওরের বাঁধ নিমার্ন ও মাটি ভড়াটের কাজ পায়। নিদির্ষ্ট দূরত্ব থেকে মাটি এনে বেরী বাঁধ তৈরি করার পর,বস্তায় মাটি ভড়ে,বাঁশ দিয়ে প্রতিরক্ষা বাঁধ দেওয়া নিয়ম থাকলেও এখানে তা কেউ মানছে।

    উপজেলার শনি ও মাতিয়ান হাওরের কৃষক খেলু মিয়া,শফিকুল ইসলাম,সাদেক আলী,রফিকুল ইসলাম,উত্তম রায় সালাম মিয়া,কাদির মিয়া,আলী আহমদ,জামাল উদ্দিন সহ আরো অনেকেই বলেন,নিজেদের আখের গোছানোর জন্যেই সময় মত বাঁধ নির্মাণ না করে অনিয়ম করছে। তাছাড়া দূর্নীতির কারণে প্রতি বছরই ৪০ভাগ কাজ হয় না। ফলে সামান্য পাহাড়ী ঢলের পানিতে বাঁধগুলো ভেঙ্গে হাওর গুলো ডুবে যায়। এখন পর্যন্ত হাওরের বাঁধ নির্মান হয় নি। আমরা আবারও পাহাড়ী ডলে হাওর ডুবে যাওয়ার আতœংকে আছি।

    তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন-আমি এবং মাননীয় এমপি মহোদয় মঙ্গল বার সকাল থেকে বাঁধ নির্মাণ পরিদর্শন করেছি কোন বাঁধ কি পরিমান হয়েছে তা দেখার জন্য। বাঁধ নির্মানের কাজ সঠিক ভাবে দ্রুত শেষ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের বলেছি।

    তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল বলেন-আমি সরেজমিন বিভিন্ন হাওরে গিয়ে দেখেছি,সঠিক ভাবে ও সময় মত বাঁধ নির্মাণ না করায় হাওর বাসী আতœংকের মধ্যে আছে পাহাড়ী ডলের আশংকায়। এবার হাওরের বাঁধ ভেঙ্গে ফসলের ক্ষতি হলে এর দায় পাউবো কেই নিতে হবে কোন ছাড় দেওয়া হবে না। এক সাপ্তাহের মধ্যে কাজ সম্পূর্ন না হলে তাদের বিরোদ্ধে মামলা করা হবে এবং আমরা হাওরবাসী নিজেরাই হাওর রক্ষায় কাজে নেমে যাব। সুনামগঞ্জ ১আসনের এমপি ইঞ্জিনিয়ার মোয়াজ্জেম হোসেন রতন হাওর পরিদর্শন করে ক্ষোবের সাথে জানান,পাউবোর গাফিলতির কারনেই বাঁধ নির্মানের কাজ ধীর গতি। বাঁধ নির্মান কাজের সঙ্গে জড়িত পাউবোর কর্মকর্তা ও প্রকৌশলীদের এখন হাওর এলাকায় থাকতে হবে। এবার হাওরের বাঁধের কারনে বোরো ফসলের কিছু হলে হাওরবাসী কাউকেই ছাড়বে না।

    এব্যাপারে সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আফসার উদ্দিন বলেন,হাওর থেকে দেড়িতে পানি নামা ও বাঁধ নির্মান কমিটি গঠনে পদ নিয়ে জঠিলতায় সময় লেগেছে। সম্প্রতি হঠাৎ করে বৃষ্টির পানি নদীতে বাড়ায় পানি বাধেঁ উপর দিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। উল্লেখ্য,গত বছর জেলার ছোট বড় ৪৬টি হাওরে সময় মত ও সঠিক ভাবে বাঁধ মেরামত না করায় ১৫টি বাঁধ ভেঙ্গে ২৫টি হাওরের ৬০-৭০ভাগ পাকা,আধা কাচাঁ বোরো ধান সম্পূর্ন পানিতে তলিয়ে যায়।