তাহিরপুরে লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন বিলুপ্তির পথে

    0
    215

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৫মার্চ,নিজস্ব প্রতিবেদক,সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়ির প্রাচীন নিদর্শন দিন দিন বিলুপ্তি হচ্ছে। অথচ বর্তমান সরকার একটু দৃষ্টি দিলে দেশের অন্যান্য প্রাচীন নিদর্শনের মত এটিও রক্ষা পেত। তেমনি এ উপজেলার টাংগুয়ার হাওর,বারেকটিলা,যাদুকাটা সহ অন্যান্য দৃষ্টিন নন্দন স্থানের মত এটিও পর্যটকদের কাছে আকর্শনীয় হত। আর যে সকল পর্যটকগন এই প্রাচীন নিদর্শনের খোঁজ জানতে পারে তারা এক পলক দেখার জন্য ছুটে আসেন এখানে। সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ প্রয়োজনীয় উদ্যোগ না নেওয়ায় ফলে অযতœ আর অবহেলায় পরে আছে লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়ির প্রাচীন নিদর্শনটুকু যেন দেখার কেউ নেই।
    স্থানীয় সূত্রে জানাযায়-উপজেলার সীমান্ত ঘের্ষা উত্তর বড়দল ও দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত এক কালের প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী যা বর্তমানে হলহলিয়া নামে পরিচিত। প্রায় ১২০০বছর পূর্বে স্থাপিত নিদর্শন রাজা বিজয় সিংহের রাজ বাড়ি টি। প্রায় ৩০একর জমির উপর প্রতিষ্টিত রাজ বাড়িটিতে ছিল বন্দীশালা,সিংহদ্বার,নাচঘর,দরবার হল,পুকুর ও সীমানা প্রাচীর এর কিছু অংশ এখনও বর্তমানে আছে।
    লাউড় রাজ্যের পশ্চিমে ব্রম্মপুত্র নদীর পূর্বে জৈন্তায়া,উত্তরে কামরুপ সীমান্ত ও দক্ষিনে বর্তমানে ব্রাম্মনবাড়িয়া পর্যন্ত ছিল লাউড় রাজ্যের সীমানা। এ রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন কেশব মিত্র নামে এক বাম্মণ। স¤্রাট আকবরের শাসনামলে লাউড় রাজ্যের পাশে খাসিয়াদের আক্রমনের শিকার হলে কিছু দিনের জন্য এর রাজধানী বর্তমান হবিগঞ্জ জেলার বানিয়াচংয়ে স্থানান্তারিত হয়েছিল। পরে লাউড় রাজ্যের গোবিন্দ সিংহ তা পুনুরুদ্ধার করে আবার রাজধানী স্ব-স্থানে পুনঃ স্থাপন করেন। ঐতিহাসিক হান্টারের মতে ১৫৫৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল অধিকারের পর লাউড় প্রথম বারের মতো তার স্বাধীনতা হারায় এবং মোগলদের বর্ষতা শিকার করে নিয়ে বসবাস করে।
    বিভিন্ন তথ্য সুত্রে জানা যায়,হলহলিয়া গ্রামে এক কালে প্রাচীন লাউড় রাজ্যের রাজধানী ছিল। বিলুপ্তপ্রায় লাউড় রাজ্যের প্রাচীন নিদর্শন হাওলি জমিদার বাড়ি। সংরক্ষনের উদ্যোগ না থাকায় রাজা বিজয় সিংহের স্থাপত্যের শেষ নিদর্শন টুকুও হারিয়ে যাচ্ছে লাউড় রাজধানীর। উপজেলার অসৎ ভূমি অফিসার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় প্রথমে নাম মাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে ভবন গুলো ভেঙ্গে বিক্রি করে দেয়। এখন দখল করে আছে স্থানীয় জনসাধারন ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। আজ থেকে প্রায় ১২’শ বছর পূর্বে রাজা বিজয় সিংহ বাড়িটি তৈরী করেন। যা আজোও হাওলি জমিদার বাড়ি নামে এলাকায় সমাদৃত। ৩০একর জমির উপর প্রতিষ্টিত রাজ বাড়িটিতে ছিল বন্ধীশালা,সিংহদ্ধার,নাচঘর,দরবার হল,পুকুর ও সীমানা প্রাচীর।

    ১২’শ বছর পরেও এর কিছু স্থাপনা এখনও দৃশ্যমান রয়েছে। পিএসসির চেয়ারম্যান ডঃ সাদিক রাজবাড়িটি রক্ষানাবেক্ষনের উদ্যোগের লক্ষ্যে একাধিকবার হাওলি রাজবাড়ি সরজমিন পরিদর্শন করেন। সেই সাথে তিনি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতœতত্ত্ব বিভাগ কে অনুরোধ করেন সরজমিন জরিপ করে বিলুপ্তপ্রায় লাউড় রাজ্যের শেষ নির্দশনটুকু সংরক্ষণ করা যায় কি না। এরই ধারাবাহিকতায় প্রতœতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা এ জমিদার বাড়ি সংরক্ষণ ও খননের লক্ষ্যে প্রাথমিক মাঠ জরিপ চালিয়েছে জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতœতত্ত্ব বিভাগ।

    সরজমিন এসে মাঠ জরিপ করেন জড়িপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন অধ্যাপাক ডঃ অসিত বরণ পাল। উপজেলার দক্ষিন বড়দল ইউনিয়নের হলহলিয়া গ্রামে গত বছরের ২০ ও ২১ নভেম্বর সরজমিন মাঠ জরিপে অংশ নেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ২য় বর্ষের ৬০শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ। তখন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতœতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপাক ডঃ অসিত বরণ পাল বলেছিন,আমরা দু’দিন বাড়িটিতে প্রাথমিক জরিপ করেছি,রাজ বাড়িটির অধিকাংশ স্থাপনা এখন আর দৃশ্যমান নেই, সামান্য কিছু স্থাপনা দৃশ্যমান রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কথা বলে সামনের দিকে অগ্রসর হবো। এটি সংরক্ষণ করা হলে কালের স্বাক্ষী প্রাচীন নিদর্শনটুকু রক্ষা হবে সেই সাথে নতুন প্রজন্ম লাউড় রাজ্যের আরও ইতিহাস জানতে পারবে।
    খেলু মিয়া,ব্যবসায়ী রফিকুল ইসলাম ও শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান ভুঁইয়া (জনমেজর)সহ উপজেলার সচেতন এলাকাবাসী ও স্থানীয়রা জানায়-উপজেলার অসৎ ভূমি অফিসার ও স্থানীয় প্রভাবশালীদের সহযোগীতায় প্রথমে নাম মাত্র মূল্যে লিজ নিয়ে ভবন গুলো ভেঙ্গে বিক্রি করে দেয়। এখন দখল করে আছে স্থানীয় জনসাধারন ও প্রভাবশালী মহলের ছত্রছায়ায়। রাজ বাড়ির প্রধান গেইটের সামনের অংশ মাটি কেটে ও রাজবাড়ির শেষ নির্দশন টুকুর বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে নিচ্ছে লোকজন। প্রধান গেইটটিও দিন দিন ভেঙ্গে ও মাটির নিচেঁ ডেবে নষ্ট হচ্ছে। প্রয়োজনীয় সংস্কার ও কার্যকর প্রদক্ষেপ নিলে ঐতিহ্যবাহী এই প্রাচীন নির্দশনটি রক্ষা পাবে। প্রশাসনের সুর্দৃষ্টি পড়লে লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়া একটি আকষর্নীয় পযটন কেন্দ্র হিসাবে।
    রাজ বাড়ি দেখতে আসা সমাজ সেবক মাসুক মিয়া বলেন,অযতœ,অবহেলা,রক্ষানাবেক্ষন ও সংস্কার না করার ফলে ঐতিহাসিক লাউড় রাজ্যের শেষ নির্দশন টুকু বিলুপ্তির পথে। রাজ বাড়ির প্রধান গেইটের সামনের অংশ মাটি কেটে ও রাজবাড়ির শেষ নির্দশন টুকুর বিভিন্ন অংশ ভেঙ্গে নিচ্ছে লোকজন। প্রধান গেইটটিও দিন দিন মাটির নিচেঁ ডেবে নষ্ট হচ্ছে। প্রশাসনের সুর্দৃষ্টি পড়লে লাউড় রাজ্যের রাজধানী হলহলিয়া একটি আকষর্নীয় পযটন কেন্দ্র হিসাবে।
    উত্তর বড়দল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আবুল কাশেম জানান,ইনকনের লোকজন আমাকে বলেছিল তারা সংস্কার করবে তাদের সহযোগীতা করার জন্য আমি বলেছিলাম সর্বতœক সহযোগীতা করব। এভাবেই এখনও আছে। সরকারী ভাবে কোন উদ্যোগ এখনও নেওয়া হয় নি। এখানে অনেক লোকজন র্দীঘ দিন ধরে পতিত থাকায় বসবাস করছে। রাজ বাড়ির শেষ নির্দশন টুকু রক্ষা করা খুবেই প্রয়োজন।
    তাহিরপুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান কামরুজ্জামান কামরুল জানান-এমনিতেই অনেক লোকজন এখানে আসে রাজ বাড়ি শেষ অংশ টুকু দেখার জন। তাহিরপুরের হলহলিয়া লাউড় রাজ্যের রাজ বাড়িটির শেষ নির্দশন টুকু সংস্কার ও রক্ষনাবেক্ষনের জন্য আমার উপজেলা পরিষদের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করা সহ এই বিষয়ে সবার সাথে কথা বলব। রাজ বাড়িটি সংস্কারকরা হলে তাহিরপুরের আরেকটি পর্যটন স্পট সৃষ্টি হবে।