“তালাক বিল” দিয়ে মুসলিম পরিবার ধবংশ করতে চায় সরকার

    0
    243

    ভারতীয় সংসদে তাৎক্ষণিক তালাক বিল পাসকে ‘ভারতীয় গণতন্ত্রের একটি কালো দিন’ বলে অভিহিত করল মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড। গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বোর্ডের পক্ষ থেকে ওই মন্তব্য করা হয়েছে।

    সংসদের উভয়কক্ষে (লোকসভা ও রাজ্যসভা) ট্রিপল তালাক বিল পাসের ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে মুসলিম পার্সোনাল ল’ বোর্ড বলেছে, অবশ্যই এটা ভারতীয় মুসলিম নারীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও মোদি সরকার সংসদের নিম্ন ও উচ্চকক্ষে ট্রিপল তালাক বিল পাস করেছে। আমরা লাখো নারীর পক্ষ থেকে ওই পদক্ষেপের নিন্দা জানাচ্ছি।

    মুহাম্মাদ নুরুদ্দিন

    এ ব্যাপারে জামায়াতে ইসলামী হিন্দের পশ্চিমবঙ্গের সভাপতি মুহাম্মাদ নুরুদ্দিন আজ (বুধবার) রেডিও তেহরানকে বলেন, ‘অবশেষে ট্রিপল তালাক বিল সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভা ও উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় পাস হয়ে গেল। এই বিলের মধ্যে যথেষ্ট অসঙ্গতি, অসম্পূর্ণতা রয়েছে। বিল পাসের মধ্য দিয়ে অগণতান্ত্রিক ও স্বৈরাচারি মানসিকতা ফুটে উঠেছে। কেন্দ্রীয় সরকার বার বার করে মুসলিম নারীদের সুরক্ষার কথা বলে ট্রিপল তালাক বিল নিয়ে আসার জন্য সাফাই দিয়েছে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এটা মুসলিম নারীদের সুরক্ষা নয়, বরং মুসলিম পরিবারগুলোকে ধ্বংস করার একটা ষড়যন্ত্র। কেননা এই বিলে বলা হয়েছে তাৎক্ষণিক ট্রিপল তালাক দিলে সেই তালাক গ্রহণযোগ্য হবে না। অথচ স্ত্রী যদি আদালতে অভিযোগ করে তাহলে স্বামীকে তিন বছরের কারাদণ্ড দেয়া হবে। প্রশ্ন হচ্ছে এই যে, তালাক যখন সংগঠিত হল না, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক যখন থাকবে তখন স্বামীকে তিন বছর যদি কারাদণ্ডের সাজা ভোগ করতে হয় তাহলে তিন বছর পরে সেই পরিবার আবার কীভাবে সুখের পরিবার থাকবে ও সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে তারা সংসার করতে পারবে?’

    তিনি বলেন, ‘দ্বিতীয়ত, মুসলিম নারীদের সুরক্ষার জন্য মুসলিম যে ধর্মীয় বিধান বা কুরআনের যে শরীয়া ল’ সেই শরীয়া ল’তে তালাকের যে অপশন দেয়া হয়েছে, তালাকের বৈধ-অবৈধ দিকের কথা বলা হয়েছে, কোন তালাক হবে, কোন তালাক হবে না তার উল্লেখ রয়েছে। মুসলিম পার্সোনাল ল’বোর্ড ও মুসলিম পার্সোনাল ল’ ভারতীয় ল’য়ের মধ্যে সংযুক্ত করা আছে। এবং সেই বিধান মুসলিম পরিবারগুলোকে যথেষ্ট শান্তি দিতে সক্ষম হয়েছে এবং হিন্দু ও অন্যান্য সমাজের থেকে মুসলিম সমাজের মধ্যে পারিবারিক শৃঙ্খলা, পারিবারিকা আইন অত্যন্ত সুশৃঙ্খল ও শান্তিপূর্ণ রয়েছে। অথচ আমরা প্রতিবেশি বিশেষ করে হিন্দু বোনদের ও হিন্দু ভায়েদের দেখছি তাদের পারিবারিক জীবনে চরম অশান্তি, নারীদের উপরে চরম অত্যাচার, দৈহিক নির্যাতন, নারীদেরকে পুড়িয়ে মারার ঘটনা, বধূ নির্যাতন অহরহ ঘটছে। কিন্তু তাদের ব্যাপারে সরকার কোনও ভূমিকা গ্রহণ করেনি। সরকার শুধু মুসলিম নারীদের সুরক্ষার জন্য এধরণের বিধান পাস করতে চলেছে। এটা আসলেই একটা ছলনা। ভারতে তারা (বিজেপি) যেহেতু সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেছে সুতরাং তারা তাদের যে লক্ষ্য, সেই লক্ষ্যে তারা পৌঁছে যেতে চায়। মুসলিম নারী সুরক্ষার  নামে মুসলিম পরিবারগুলোতে ধ্বংস ডেকে আনা এবং মুসলিম সমাজের মধ্যে একটা অশান্তি তৈরি করাই তাদের লক্ষ্য।’

    মুহাম্মাদ নুরুদ্দিন বলেন, ‘আমি ভারতীয় মুসলিম সমাজের কাছে আবেদন জানাতে চাই যে, সরকার যে বিধান নিয়ে এসেছে আমরা সর্বোতভাবে এর নিন্দা করি। কিন্তু আমরা যেন কোনোভাবেই সরকারের ওই প্ররোচনায় পা না দিই। আমরা আমাদের পারিবারিক জীবন যদি শরীয়া মোতাবেক চালাই, আমরা আমাদের স্ত্রীদের অধিকার দিই, তাদের সঙ্গে সুষ্ঠু সুসম্পর্ক রক্ষা করি এবং আমাদের পারিবারিক বিবাদগুলো শরয়ী ল’য়ের মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে মীমাংসা করে নেয়ার চেষ্টা করি তাহলে সরকারের ওই ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হবে, তারা মুসলিম পরিবার গুলোতে কোনও অশান্তি সৃষ্টি করতে পারবে না। সেজন্য আমি ওই বিলের বিরোধিতা করার পাশপাশি মুসলিম সমাজের কাছে আবেদন জানাবো তারা যেন নিজেদের ধর্মীয় বিধানে আনুগত্যের মধ্য দিয়ে ওই বিলের প্রতিবাদ করে এবং ওই বিল যেন অকেজো হয়ে যায়।’

    সংসদের নিম্নকক্ষ লোকসভায় গত ২৫ জুলাই ট্রিপল তালাক বিল পাস হয়। অন্যদিকে, গতকাল ৩০ জুলাই (মঙ্গলবার) সংসদের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বিরোধীদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও সরকারপক্ষে সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় বিতর্কিত ওই বিল পাস হয়ে যায়।পার্সটুডে