তামাবিল স্থলবন্দর পরিদর্শনে দিল্লীর বাংলাদেশের হাই কমিশনার

    0
    507

    “ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য আসামসহ সেভেন সিস্টার্স ভূক্ত রাজ্যগুলোতে ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে দু-দেশের সরকার কাজ করছে”

    রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর সিলেট প্রতিনিধি: ভারতের দিল্লীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার এইচ-ই-মোহাম্মদ ইমরান বলেছেন, শেখ হাসিনার সরকার বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসার পর বিদেশে বাংলাদেশের ভাবমুর্তি ব্যাপক ভাবে উজ্জ্বল হয়েছে। বিগত ১০ বছরে ভারতের সাথে আমাদের বন্ধুত্বপূর্ণ সর্ম্পক অনেকটা গভীর থেকে গভীরতর বৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরতে আমাদের বিদেশ মিশন গুলোর কর্মকর্তাগণ আন্তরিক ভাবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ-ভারতের সাথে ব্যবসা বাণিজ্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ভারতের আসামসহ সেভেন সিস্টার‘স ভূক্তরাজ্য গুলোর সাথে বাংলাদেশের ব্যবসা বাণিজ্যের পাশাপাশি পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন ও বিকাশে দু-দেশের সরকার কাজ করে যাচ্ছে। জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করতে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ অনেক এগিয়ে গেছে।

    ২৫ ফেব্রুয়ারী বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে ১২ টায় তিনি তামাবিল শুল্ক স্থলবন্দর ইমিগ্রেশন কেন্দ্র এবং মেঘালয়ের ডাউকী ইমিগ্রেশন কেন্দ্র পরির্দশন করেন। তিনি তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানীকারুক গ্রুপ এবং তাবামিল ইমিগ্রেশন ও কাস্টাম‘স কর্মকর্তাগন সহ স্থানীয় প্রশাসনের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। তিনি আরও বলেন, ভারত হতে পাথর ও কয়লা আমদানী কমানো উচিত। দেশীয় শিল্পের প্রতি আমাদের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দকে নজর দেওয়া প্রয়োজন। ভারতে বাংলাদেশের অনেক পন্যের চাহিদা রয়েছে, শাক-সবজি তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে আসামসহ সেভেন সিস্টার‘স রাজ্য গুলোতে চাহিদা অনুযায়ী পন্য রপ্তানি করার বিষয়ে তিনি ব্যবসায়ীগণকে এগিয়ে আসার আহবান জানান। সীমান্ত সুরক্ষায় বিজিবি-বিএসএফ আন্তরিক ভাবে কাজ করছে। অবৈধ ব্যবসা বাণিজ্য রোধ করতে উভয় দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী সর্তক রয়েছে। সরকার তামাবিল স্থলবন্দর উন্নয়ন ও অবকাঠামোগত সুধিবা তৈরী করে দিয়েছে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতে এসব স্থল বন্দরের স্থাপনা গুলো স্থানীয় ব্যবসায়ীদের কাজে লাগাতে হবে। তামাবিল ইমিগ্রেশন কেন্দ্র ও কাস্টামের অবকাঠামো উন্নয়ন ও আধুনিকায়নের ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে। মেঘালয়ের ডাউকী ইমিগ্রেশন কেন্দ্র সংস্কার ও  বাংলাদেশী ভ্রমনকারীদের ইমিগ্রেশন সংক্রান্ত কাজে বিলম্বের হওয়ার বিষয়ে তিনি মেঘালয় সরকারের সাথে আলোচনা করবেন বলে জানান। গোয়াইনঘাট উপজেলার পাদুয়া সীমান্ত এলাকায় নতুন শুল্কস্থল বন্দর স্থাপনের  প্রস্তাব প্রেরণ করা হয়েছে। দু-দেশের সরকার ইতিবাচক দিকে গুলো বিবেচনা করে ব্যবসায়ীদের সুবিধা হলে পাদুয়ায় নতুন শুল্কস্থল বন্দর স্থাপন করা হতে পারে। মেঘালয় হতে বাংলাদেশে কয়লা আমদানী সংক্রান্ত বিষয়ে যে জঠিলতা রয়েছে তা নিরসনে মেঘালয় সরকারের সাথে আলোচনা করার আশ্বাসদেন।

    সিলেটের সাথে মেঘালয়-আসামের সর্ম্পক উন্নয়নে মেঘালয়-জৈন্তা-সাংস্কৃতিক উৎসব আয়োজনে গুয়াহাটি মিশন সকলরকম সহযোগিতা করা হবে। সিলেট এবং ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্য গুলোর সঙ্গে ব্যবসা-বানিজ্য বাড়াতে আসামের গুয়াহাটিতে আমাদের সহকারী হাই কমিশনা মিশন চালু করা হয়েছে। বাংলাদেশে রেল যোগাযোগ ব্যবস্থায় ভারত সরকার বিভিন্ন ভাবে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। ভারতের সেভেন সিস্টার‘স রাজ্যের মানুষের সাথে সু-সর্ম্পক ও পর্যটকদের সুবিধায় ভারতের বেসরকারী বিমান পরিবহন সংস্থা স্পাইসজেট আসামের গুয়াহাটি-ঢাকা সরাসরি বিমান ফ্লাইট চালু রয়েছে। তামাবিল স্থল বন্দর দিয়ে ভারতে ব্যাপক পর্যটক ভ্রমন করায় সিলেট-গুয়াহাটি-শিলং সরাসরি বিমান ফ্লাইট চালুর বিষয়ে দুদেশের উচ্চ পর্যায়ের আলোচনা করে সপ্তাহে অন্তত দু‘টি ফ্লাইট চালুর বিষয়ে সরকারের চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। বাংলাদেশী নাগরিকদের ভারতীয় ভিসা আরও সহজ করার বিষয়ে আলোচনা করা হচ্ছে। ভারতীয় নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশে ভ্রমনে ভিসা সহজ করা হয়েছে। মতবিনিময় সভায় তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের পক্ষে ব্যবসা-বানিজ্য সংক্রান্ত বিষয়ে বিভিন্ন প্রস্তাবনা লিখিত ভাবে প্রদান করা হয়েছে। দিল্লীতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাই কমিশনার এইচ-ই-মোহাম্মদ ইমরান তামাবিল ইমিগ্রেশন কেন্দ্র ও কাস্টম‘স অফিসের বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করার বিষয়ে সরকারের সাথে আলোচনা করার আশ্বাস দেন।

    দুপুর ১টায় তামাবিল স্থলবন্দরে এসে পৌছিলে হাই কমিশনার ও মিশন কর্মকর্তাগণকে ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান, ৪৮ বিজিবি‘র অধিনায়ক লে: কর্ণেল ইউসুফ জামিল, গোয়াইনঘাট উপজেলা নির্বাহী অফিসার তাহমিলুর রহমান, তামাবিল কাস্টম‘স ও তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানীকারুক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ। পরে তিনি বাংলাদেশ-ভারত সীমান্ত সংলগ্ন বধ্যভুমি পরির্দশন করেন ও মহান স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান। তামাবিল স্থলবন্দর পরিদর্শন কালে দিল্লীতে নিযুক্ত হাই কমিশনার এইচি-ই-মোহাম্মদ ইমরানকে জৈন্তাপুর প্রেসক্লাব সাবেক সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম জৈন্তিয়ার ইতিহাস-ঐতিহ্য গ্রন্থের একটি কপি উপহার দেন।

    উপস্থিত ছিলেন গুয়াহাটিস্থ বাংলাদেশের সহকারী হাই কমিশনের ড. শাহ মহম্মদ তানভীর মনসুর, সিলেট ৪৮ বিজিবির অধিনায়ক লে: কর্নেল ইউসুফ জামিল, দিল্লীস্থ হাই কমিশন অফিসের প্রথম সচিব জাকির হোসেন, গোয়াইনঘাট উপজেলা নিবার্হী অফিসার তাহমিলুর রহমান, কাস্টম‘স,এক্সচেঞ্জ ও ভ্যাট কমিশনারেট সিলেটের অতিরিক্ত কমিশনার রাশেদুল হাসান, তামাবিল স্থলশুল্ক ষ্টেশনের সহকারী কমিশনার প্রভাত কুমার সিংহ, সহকারী পুলিশ সুপার গোয়াইনঘাট-কোম্পানীগঞ্জ সার্কেল প্রবাস কুমার সিংহ, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সিলেট সদর মো: লুৎফুর রহমান, তামাবিল স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষের এডি রুহল আমিন, গোয়াইনঘাট থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আহাদ, তামাবিল চুনা পাথর, পাথর ও কয়লা আমদানীকারক গ্রুপের নেতৃবৃন্দ।