তাইজুলের বোলিংয়ে দেড় বছর পর টেস্ট জয় পেলো বাংলাদেশ

    0
    249

    আমারসিলেট24ডটকম,অক্টোবরঃ অবশেষে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে প্রথম ম্যাচে জিম্বাবুয়েকে তিন উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচের দ্বিতীয় ইনিংসে আক্রমণাত্মক বোলিংয়ে জিম্বাবুয়েকে ধরাশায়ী করলেও জয়টা খুব সহজে আসেনি বাংলাদেশের। জয়ের জন্য ১০১ রানের টার্গেটে খেলতে গিয়ে হারাতে হয়েছে সাত উইকেট। এ যেন সহজ টেস্টের কঠিন জয়।

     তাইজুল ইসলামের অসাধারণ বোলিংয়ে দেড় বছর পর টেস্ট জয় পেলো বাংলাদেশ। সেই সঙ্গে ম্যান অব দ্য ম্যাচের পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি।জয়ের জন্য কম রানের লক্ষ্য হলেও ব্যাটিং ব্যর্থতায় সহজ ম্যাচ কঠিন করে জিতে বাংলাদেশ| ৩ নভেম্বর খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে শুরু হবে দ্বিতীয় টেস্ট।

    এর আগে তাইজুলের দুর্দান্ত বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারেননি জিম্বাবুয়ের ব্যাটসম্যানরা। বাঁহাতি এই স্পিনারের ঘূর্ণিতে বিভ্রান্ত হয়ে মাত্র ১১৪ রানে অলআউট হয়ে যায় অতিথিরা।

    প্রথম ইনিংসে ১৪ রানের লিড নেয়ায় প্রথম টেস্ট জিততে বাংলাদেশের লক্ষ্য দাঁড়ায় ১০১ রান।

    শূন্য রানে প্রথম তিন ব্যাটসম্যানের বিদায়ে শুরুটা মোটেও ভালো হয়নি বাংলাদেশের। এল্টন চিগুম্বুরার লাফিয়ে উঠা বলে স্লিপে ব্রেন্ডন টেইলের হাতে ধরা পড়েন তামিম ইকবাল।

    টিনাশে পানিয়াঙ্গারার বলে বোল্ড হয়ে যান শামসুর রহমান। বল ছেড়ে দিলেও সময় মতো ব্যাট সরাতে পারেননি তিনি। ব্যাটের কানায় লেগে স্ট্যাম্প ভেঙে গেলে দ্বিতীয় উইকেট হারায় স্বাগতিকরা। ব্যর্থ হয়েছেন মুমিনুল হকও। চিগুম্বুরার বলে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন প্রথম ইনিংসে অর্ধশতক পাওয়া এই ব্যাটসম্যান।

    চতুর্থ উইকেটে মাহমুদুল্লাহর সঙ্গে ৪৬ রানের জুটি গড়ে প্রতিরোধ গড়েন সাকিব আল হাসান। শুরুতেই একবার জীবন পেলেও অতিথিদের বাউন্সারে শট খেলতে থাকেন তিনি। উইকেটে থিতু হয়ে টেন্ডাই চাটারার শিকারে পরিণত হন তিনি।

    চা-বিরতি পর জোড়া আঘাতে মাহমুদুল্লাহ ও শুভাগত হোম চৌধুরীকে ফিরিয়ে দেন চিগুম্বুরা। দেখে শুনেই খেলছিলেন শাহাদাত হোসেন। তবে ছক্কা হাঁকিয়ে পরের বলেই তার বিদায়ে আবার চাপে পড়ে স্বাগতিকরা।

    বাকি কাজটুকু তাইজুলকে নিয়ে সহজেই সারেন মুশফিক। বাংলাদেশের অধিনায়ক ২৩ ও তাইজুল ১৫ রানে অপরাজিত থাকেন।

    দিনের প্রথম সেশনেই পাঁচ উইকেট নেয়া তাইজুল শেষ পর্যন্ত ফেরান জিম্বাবুয়ের আট ব্যাটসম্যানকে। মাত্র ৩৯ রানের খরচায় আট উইকেট নিয়ে গড়ে ফেললেন রেকর্ডও। বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে এক ইনিংসে ৮ উইকেট নিলেন তিনি।

    সোমবার বিনা উইকেট ৫ রান নিয়ে খেলা শুরু করা জিম্বাবুয়ে দিনের শুরুতেই হারায় ভুসি সিবান্দা ও হ্যামিল্টন মাসাকাদজাকে।

    তাইজুল ইসলামের বলে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের হাতে ধরা পড়েন সিবান্দা। পেসার শাহাদাত হোসেনের বল ছেড়ে দিয়ে বোল্ড হয়ে যান হ্যামিল্টন মাসাকাদজা।

    প্রথম ঘণ্টা শেষে জিম্বাবুয়ের স্কোর ছিল ৪০/২। তখনো বোঝা যায়নি পরের ঘণ্টায় কী অপেক্ষা করছে অতিথিদের সামনে।

    এসেই আক্রমণাত্মক ব্যাটিং শুরু করেন সিকান্দার রাজা। সাকিব আল হাসানের এক ওভারে দুটি চার আদায় করে নেন তিনি। তাইজুলের পরের ওভারে টানা দুই বলে লংঅফের ওপর দিয়ে ছক্কা হাঁকান তিনি।

    পরের বলেও একই চেষ্টা করেছিলেন তিনি। কিন্তু পারেননি, ব্যাটের উপরের কানায় লেগে পয়েন্টে আসা সহজ ক্যাচটি তালুবন্দি করেন সাকিব।

    রাজার বিদায়ের মধ্য দিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংসের ধসের সূচনা হয়। নিজের পরের ওভারে জোড়া আঘাতে রেগিস চাকাবভা ও এল্টন চিগুম্বুরাকে বিদায় করেন তাইজুল।

    চাকাবভা স্লিপে শামসুর রহমান ও চিগুম্বুরা দ্বিতীয় স্লিপে শুভাগত হোম চৌধুরীর ক্যাচে পরিণত হন। চিগুম্বুরার বিদায়ে জিম্বাবুয়ের স্কোর দাঁড়ায় ৫৮/৫।

    ক্রেইগ আরভিনের সঙ্গে অধিনায়ক ব্রেন্ডন টেইলরের জুটিতে প্রতিরোধ গড়ে জিম্বাবুয়ে। আরভিনকে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নিজের পঞ্চম উইকেট নেয়ার পাশাপাশি ৩৪ রানের জুটি ভাঙেন তাইজুল।

    এরপর উইকেট উৎসবে যোগ দেন সাকিবও। জন নিউম্বুকে মুশফিকের ক্যাচে পরিণত করেন তিনি। সেই ওভারে টিনাশে পানিয়াঙ্গারাকে আম্পায়ার আউট দেন। তবে রিভিউয়ে তৃতীয় আম্পায়ার সিদ্ধান্ত বদলানোয় বেঁচে যান পানিয়াঙ্গারা।

    ৭ উইকেটে ৯৪ রান নিয়ে মধ্যাহ্ন-বিরতিতে যায় জিম্বাবুয়ে। লড়াই করার মতো পুঁজি গড়ার পর অধিনায়ক টেইলরের দিকে তাকিয়ে ছিল অতিথিরা। তিনি এক প্রান্তে অবিচল থাকলেও অন্য তিন ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে লক্ষ্যটা ছোটই রাখেন তাইজুল।

    পানিয়াঙ্গারাকে স্লিপে শামসুরের ক্যাচে পরিণত করে নিজের ষষ্ঠ উইকেট নেন তাইজুল। নিজের পরের ওভারে পরপর দুই বলে টেন্ডাই চাটারা ও টাফাজওয়া কামুনগোজিকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়ের ইনিংস গুটিয়ে দেন তিনি।

    বাংলাদেশের বিপক্ষে এটাই টেস্টে সর্বনিম্ন রান। এর আগে ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে ১৫৪ রানে অলআউটই ছিল সর্বনিম্ন। সেই ম্যাচে অতিথিদের হারিয়ে টেস্টে প্রথম জয়টি তুলে নেয় বাংলাদেশ।

    দেশের মাটিতে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় টেস্ট জয়। আগের টেস্ট জয়টি ছিল চট্টগ্রামে। ২০০৫ সালে চট্টগ্রামে জিম্বাবুয়েকে হারিয়ে টেস্টে নিজেদের ইতিহাসের প্রথম জয়টি পেয়েছিল বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এটি বাংলাদেশের তৃতীয় জয় আর সব মিলিয়ে ৫ম।