তরুণী ঐশী নিজ হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুন করলো বাবা-মাকে

    0
    266

    ”গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ২ চামেলীবাগের চামেলী ম্যানশনের ৬ তলা, ফ্ল্যাট বি-৫’র নিজ বাসা থেকে পুলিশ ইন্সপেক্টার মাহফুজুর রহমান ও স্ত্রী স্বপ্না রহমানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়”
    পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ১৭ বছর বয়সী তরুণী ঐশী উশৃঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত, সে দীর্ঘ দিন ধরেই মাদকাসক্ত। সে নিয়মিত ইয়াবাসহ নানা ধরনের ড্রাগস সেবন করে। প্রায় প্রতিদিনই বন্ধুদের বাসায় নিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে রাত কাটায়। বেশ কয়েকজনের সঙ্গেই তার প্রেম বা যৌন সম্পর্ক ছিল বলে সে অবলীলায় স্বীকার করেছে। আর এ কারণেই তার বাবা বিভিন্ন সময় তাকে মারধোরও করেছেন। তার বখাটে-বেলাল্লাপনায় বাধা দিয়েছেন”
    ঢাকা, ১৭ আগস্ট : মাদক ও যৌনাসক্ত তরুণী ঐশীর বেলাল্লাপনায় বাধা দেয়ায় বন্ধুদের নিয়ে নিজ হাতে ধারালো অস্ত্র দিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে খুন করলো বাবা-মাকে। গত বুধবার গভীর রাতে তাদের চামেলীবাগের বাসায় নিজ বেডরুমে এ কান্ড ঘটায় সে। গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যয় পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) ইন্সপেক্টর মাহফুজুর রহমান (৪৫) ও তার স্ত্রী স্বপ্না রহমানের (৪২) রক্তাক্ত ও ক্ষতবিক্ষত লাশ উদ্ধারের পর আজ শনিবার দুপুরে আত্মসমর্পন করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে এ হত্যাকাণ্ডের লোমহর্ষক তথ্য দিয়েছে ঐশি। এ হত্যাকাণ্ডে তার পাঁচজন বন্ধু অংশ নেয় বলেও পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে সে। ঘটনার পর রহস্যজনকভাবে ঘা ঢাকা দিয়েছিল সে। আজ শনিবার দুপুর দেড়টার দিকে পল্টন থানায় এসে সে নিজের পরিচয় দিয়ে স্বেচ্ছায় পুলিশকে সব তথ্য জানায়। আজ সন্ধ্যায় গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব কথা বলেন।
    পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ১৭ বছর বয়সী তরুণী ঐশী উশৃঙ্খল জীবন-যাপনে অভ্যস্ত, সে দীর্ঘ দিন ধরেই মাদকাসক্ত। সে নিয়মিত ইয়াবাসহ নানা ধরনের ড্রাগস সেবন করে। প্রায় প্রতিদিনই বন্ধুদের বাসায় নিয়ে আসে এবং তাদের সঙ্গে রাত কাটায়। বেশ কয়েকজনের সঙ্গেই তার প্রেম বা যৌন সম্পর্ক ছিল বলে সে অবলীলায় স্বীকার করেছে। আর এ কারণেই তার বাবা বিভিন্ন সময় তাকে মারধোরও করেছেন। তার বখাটে-বেলাল্লাপনায় বাধা দিয়েছেন। স¤প্রতি বেশ কয়েকদিন ধরে তাকে বাসা থেকেও বের হতে দেয়া হয়নি। এমনকি ঈদেও বের হতে দেয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এসব কারণেই বন্ধুদের বাসায় নিয়ে এসে তার বাবা-মাকে খুন করেছে বলেও পুলিশের কাছে ঐশী স্বীকার করেছে। পুলিশকে বন্ধুদের নাম বলেছে।
    অবশ্য ওই ভবনের কর্মচারীদের বক্তব্যেও এমন ইঙ্গিত পাওয়া গেছে। তারা জানান, ঐশীকে বাসা থেকে বের হতে দেয়া হতো না। কোথাও গেলে তার বাবা-মায়ের সঙ্গেই যেতো। এমনকি বাসায় তেমন কোনো আত্মীয়স্বজনেরও আসা-যাওয়া ছিল না বলেও জানান তারা। এদিকে ভবনের ম্যানেজার সংবাদিকদের জানান, মা-বাবার অনুমতি ছাড়া ঐশীর বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল। চলতি মাসের ৪ তারিখে ভাড়া পরিশোধ করতে এসে ম্যানেজারকে এমন নির্দেশ দেন ঐশীর বাবা। বৃহস্পতিবার ঐশী বাসা থেকে বের হয়ে যাওয়ার সময় ম্যানেজার বাধা দিলে সে তার মায়ের দোহাই দিয়ে বেরিয়ে যায় বলেও উল্লেখ করেন তিনি। তবে ওই রাতে ঐশীর সঙ্গে তার কোন বন্ধু বাসায় এসেছিল কিনা তা তিনি জানাতে পারেননি।
    এদিকে ডিসি মাসুদুর রহমান বলেন, ঐশীর স্বীকারোক্তির পর তাকে নিয়ে অভিযানে বের হয় গোয়েন্দা পুলিশ। এ অভিযানে ঐশির বান্ধবী তৃষা, কাজের মেয়ে সুমিসহ ৫ জনকে আটক করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি কার্যালয়ে আনা হয়েছে। এর আগে জোড়া খুনের ঘটনায় পল্টন থানায় মামলা করেছেন নিহত পুলিশ কর্মকর্তার ভাই।
    পক্ষান্তরে আজ শনিবার দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ময়না তদন্ত শেষে ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের জানান, মাহফুজুর রহমানের গলায় এবং পেটে ছুরিকাঘাতের দুটি চিহ্ন পাওয়া গেছে। তার শ্বাসনালী এবং পাকস্থলী কেটে গেছে। এছাড়া স্বপ্নার শরীরে ১১টি ছুরির আঘাতের চিহ্ন পাওয়া গেছে। ছুরিকাঘাতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণেই তাদের মৃত্যু হয়েছে বলেও নিশ্চিত হয়েছেন তিনি।
    লাশ উদ্ধারের পর মাহফুজুর রহমানের ৭ বছর বয়সী ছেলে ঐহীর বরাত দিয়ে পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার সকাল ৮টার দিকে ঐশী তার ভাই ও কাজের মেয়েকে নিয়ে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। তখন ঐশী তার ভাইকে বলে, বাবা-মা বাসায় নেই চলো আমরা খালুর বাসায় যাই। এর পর বৃহস্পতিবার রাত ৩টার দিকে ঐশী তার মায়ের মোবাইল থেকে তার খালুকে ফোন করে বলে, আমরা বাসা থেকে বের হয়ে এসেছি। কিছুক্ষণ পর আপনার বাসায় আসছি।
    অথচ তার পর থেকে ঐশী-ঐঞার আর কোন খোঁজ পাওয়া যায়নি। ঐশীর খালু আত্মীয়স্বজনদের ফোন দেন। পরের দিন তিনি তার ভাইকে নিয়ে তাদের বাসায় চলে আসেন। এসে দেখেন ঐহী বাসার নিচে ঘোরাফেরা করছে। কিন্তু বাসা তালাবদ্ধ। এ সময় ঐহী তাদের জানায়, তার বোন তাকে একটি সিএনজিতে করে বাসায় পাঠিয়ে দিয়েছে আর বলেছে, তুমি বাসায় যাও, বাসার নিচে মামা আছে। আমরা পরে আসছি।
    প্রসঙ্গত গত শুক্রবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ২ চামেলীবাগের চামেলী ম্যানশনের ৬ তলা, ফ্ল্যাট বি-৫’র নিজ বাসা থেকে পুলিশ ইন্সপেক্টার মাহফুজুর রহমান ও স্ত্রী স্বপ্না রহমানের রক্তাক্ত লাশ উদ্ধার করা হয়। এর পর এসবির পলিটিক্যাল বিটে ডিআইজি মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া সাংবাদিকদের জানান, বুধবার রাত ১১টা পর্যন্ত মাহফুজুর রহমান অফিস করেন। বৃহস্পতিবার ছুটি থাকায় তিনি আর অফিস আসেননি।