ঢাকা উত্তরের মেয়র সকলের প্রিয় আনিস ভাই আর নেই

    0
    247

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০১ডিসেম্বর,ডেস্ক নিউজঃ  ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক আর নেই। বৃহস্পতিবার লন্ডনের ইউস্টনের ইউনিভার্সিটি কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) বাংলাদেশ সময় রাত ১০টা ২৩ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন সফল উদ্যোক্তা, ব্যবসায়ী ও মোহাম্মদী গ্রুপের চেয়ারম্যান। অমায়িক ভালবাসা, ব্যবহার ও কথার যাদুতে সকলকে খুব সহজেই আপন করে নিতে পারতেন। তাই তিনি ছিলেন সকলের ‘প্রিয় আনিস ভাই’। আজ বাদ জুমা লন্ডনের রিজেন্ট পার্ক মসজিদে তার প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল শনিবার সকাল ১১টা ২০ মিনিটে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে তার মরদেহ হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর পৌঁছার কথা। সেখান থেকে তার মরদেহ বাসায় নেওয়া হবে। ওইদিনই বাদ আসর আর্মি স্টেডিয়ামে জানাজা শেষে তাকে বনানী কবরস্থানে দাফন করা হবে।
    পারিবারিক সূত্র জানায়, বাংলাদেশ সময় বৃহস্পতিবার রাতে চিকিৎসকরা তার কৃত্রিম শ্বাস-প্রশ্বাসযন্ত্র (ভেনটিলেশন যন্ত্র) খুলে নেন। এরপর তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।

    মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। আনিসুল হকের পারিবারিক বন্ধু ও নাগরিক টেলিভিশনের প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা ডা. আবদূর নূর তুষার গতকাল এক ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেছেন, ‘আমি গভীর দুঃখের সাথে সকলকে পরিবারের পক্ষ থেকে জানাচ্ছি যে, ঢাকা নর্থ সিটি করপোরেশনের মেয়র আনিসুল হক লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরলোক গমন করেছেন। তার পাশে সেই সময় উপস্থিত ছিলেন তার স্ত্রী, পুত্র ও কন্যাদ্বয়। ঢাকাসহ সারা দেশে তার সকল শুভান্যুধায়ী, গুণগ্রাহী, যারা তার জন্য দোয়া করেছেন, সকল গণমাধ্যমকর্মী ও তার স্বজনদের আমরা তার পরিবারের পক্ষ থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই। আপনারা দোয়া করবেন যাতে তিনি জান্নাতবাসী হন।’
    গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবারে যুক্তরাজ্যে যান আনিসুল হক। সেখানে অসুস্থ হয়ে পড়লে ১৩ আগস্ট তাকে লন্ডনের ন্যাশনাল নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তার মস্তিস্কের প্রদাহজনিত রোগ ‘সেরিব্রাল ভাস্কুলাইটিস’ শনাক্ত করেন চিকিৎসকরা। এরপর তাকে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছিল। ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি ঘটলে তাকে গত ৩১ অক্টোবর আইসিইউ থেকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টারে স্থানান্তর করা হয়। গত মঙ্গলবার অবস্থার অবনতি হলে তাকে রিহ্যাবিলিটেশন সেন্টার থেকে পুনরায় আইসিইউতে স্থানান্তর করা হয়। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় তাকে লাইফ সাপোর্টে নেয়া হয়েছিল।
    নব্বুইয়ের দশকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার মাধ্যমে বিপুল জনপ্রিয়তা পান আনিসুল হক। এরপর তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ী হিসেবে সুনাম অর্জনের পর এ খাতের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি। পরে তিনি এফবিসিসিআই’র সভাপতিও ছিলেন। ২০১৫ সালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন।
    মেয়র নির্বাচিত হয়ে রাজধানীর তেজগাঁওয়ের সাত রাস্তার মোড় থেকে ট্রাকস্ট্যান্ড উচ্ছেদ করে সকলের জন্য রাস্তা নির্মাণ করে সবার কাছে প্রিয় ও আলোচিত হয়ে উঠেন। এছাড়া গাবতলীতে ট্রাকস্ট্যান্ড সরিয়ে রাস্তা সংস্কার, হলি আর্টিজানের ঘটনার পর কূটনৈতিক অঞ্চল হিসেবে গুলশান-বারিধারার নিরাপত্তা জোরদার, গুলশান-বনানী এলাকা থেকে পুরনো বাস সরিয়ে ‘ঢাকা চাকা’ নামের নতুন এসি বাস সার্ভিস চালু, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনভুক্ত বিভিন্ন এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ, ‘সবুজ ঢাকা’ নামের বিশেষ সবুজায়ন কর্মসূচি গ্রহণ করে নাগরিক মহলে বিশেষ প্রশংসিত হন তিনি। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের বিভিন্ন সমস্যায় দিনে-রাতে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়েই নগরবাসীর আস্থাভাজন হয়ে উঠছিলেন তিনি।