ঢাকায় আনজুমানে রজভীয়ার যৌতুক-মাদকবিরোধী সেমিনার

    0
    243

    “যৌতুক ও মাদকের অভিশাপ থেকে বাঁচতে সারা দেশে গণজাগরণ গড়ে তুলতে হবে যৌতুক দেয়া-নেয়া বন্ধে বিদ্যমান আইনকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করুন: আল্লামা নূরী”

     

    আনজুমানে রজভীয়া নূরীয়া বাংলাদেশ ঢাকা মহানগর এর উদ্যোগে রাজধানীর বিএমএ অডিটোরিয়ামে যৌতুক ও মাদকবিরোধী সেমিনার আজ ২০ অক্টোবর শনিবার বিকেলে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন আনজুমানে রজভীয়া নূরীয়া বাংলাদেশ ঢাকা মহানগরের আহ্বায়ক এডভোকেট সৈয়দ মোখতার আহমদ সিদ্দীকি।

    এতে প্রধান অতিথি ছিলেন আওয়ামীলীগের উপদেষ্ঠা মন্ডলীর সদস্য ও বাংলাদেশ বার কাউন্সিল এর ভাইস চেয়ারম্যান এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমাযুন। উদ্বোধক ছিলেন নারিন্দা মশুরীখোলা দরবার শরীফের পীর সাহেব আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ আহ্ছানুজ্জামান। যৌতুক ও মাদকবিরোধী সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, দেশে গরিবের সংসারে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছে। যৌতুক দিতে না পারায় দেশে প্রতিদিনই শত শত বিয়ে ভাঙছে।

    কন্যাদায়গ্রস্ত পিতা-মাতার আর্তনাদ ও আহাজারি থামাতে কেউ সত্যিকার অর্থে এগিয়ে আসছে না। মাদকের সহজলভ্যতা যুব তরুণদের বিপথে ঠেলে দিচ্ছে। হাত বাড়ালেই মিলছে ইয়াবাসহ সর্বনাশা মাদক। যুব সমাজ ফেসবুক মোবাইল আসক্তিতে আকণ্ঠ নিমজ্জিত থেকে নিজেদের সম্ভাবনাময়ী জীবনকে অর্থহীন করে তুলছে। বক্তারা বলেন, যৌতুক ও মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন ও অভিশাপ থেকে বাঁচতে সারা দেশে গণজাগরণ গড়ে তুলতে হবে। নিজ নিজ অবস্থান থেকে এব্যাপারে সবাইকে সচেতন করে তোলার দায়িত্ব পালন করতে হবে।

    আলেম-ইমাম-খতিবদের পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিসহ সর্বস্তরের পেশাজীবীদেরকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। নির্দিষ্ট বিষয়ে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গবেষক-শিক্ষাবিদ অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল। সেমিনারে পঠিত প্রবন্ধের ওপর বিশেষ অতিথি হিসেবে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট এর মহাসচিব মাওলানা এম এ মতিন, ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল, দিনাজপুর ইসলামিক রিসার্চ সেন্টারের মহাপরিচালক ড. আল্লামা সৈয়দ এরশাদ আহমদ আল বোখারী, ঢাকা কাদেরীয়া তৈয়বীয়া আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যাক্ষ আবুল কাশেম মুহাম্মদ ফজলুল হক, বিশিষ্ট লেখক ও গবেষক ড. মোহাম্মদ মাসুম চৌধুরী, সুপ্রীম কোর্টের আইনজীবী এডভোকেট কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, মুফতী মোঃ গিয়াস উদ্দিন তাহেরী, মুফতী মোঃ এহসানুল হক মেজাদ্দেদী।

    এতে প্রধান অতিথি এডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমাযুন বলেন, যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকার জিরো টলারেন্স ভূমিকা পালন করছে। এই দুই অভিশাপ থেকে দেশবাসী ও বিশাল তারুণ্য শক্তিকে বাঁচাতে ঘরে ঘরে প্রতিরোধের বলয় তৈরি করতে হবে। যৌতুক ও মাদকবিরোধী আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ায় তিনি বরেণ্য আলেমে দ্বীন আল্লামা নূরীর প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান। উদ্বোধক আল্লামা শাহ্ মুহাম্মদ আহ্ছানুজ্জামান বলেন, যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধে আইন আছে। মাঝে মধ্যে আইনের প্রয়োগও আমরা দেখি।

    কিন্তু সমস্যা কতোটা গভীর ও আশংকাজনক হয়ে উঠেছে তা আমরা ভেবে দেখছিনা। সেমিনারে মুখ্য আলোচক ছিলেন আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া বাংলাদেশ এর চেয়ারম্যান আন্তর্জাতিক মুফাস্সিরে কুরআন পীরে তরিকত আল্লামা মুহাম্মদ আবুল কাশেম নূরী (মজিআ)। তিনি বলেন, যৌতুকের আগ্রাসন ও অশুভ হাতছানি থেকে গরিব পরিবারগুলোকে মুক্তি দিতে আমি এক যুগ ধরে সোচ্চার রয়েছি।

    চট্টগ্রাম-ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় সভা-সম্মেলন-সেমিনার করে আসছি। আমাদের আন্দোলনে ব্যাপক সাড়া লক্ষ্য করছি। এখন যৌতুকমুক্ত বিয়ের প্রচলন জোরদার হচ্ছে। যুব সমাজ যৌতুক দেয়া-নেয়াকে অসম্মানজনক ও অপরাধ বলে বুঝতে শিখেছে। এতেই মূলত আমাদের আন্দোলনের সাফল্য।

    আল্লামা নূরী যৌতুক দেয়া-নেয়া বন্ধে আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করার এবং প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনকে সংশোধন ও বাস্তবানুগ করার দাবি জানান। তিনি যৌতুকমুক্ত বিয়ের প্রণোদনা হিসেবে যুবক-যুবতীদের সরকারি চাকরি অথবা সহজ শর্তে বিনা সুদে আর্থিক অনুদান দিতে সরকারের সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। আল্লামা নূরী বলেন, ইমানি ও সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকেই আমি যৌতুক ও মাদক বিরোধী আন্দোলন শুরু করেছি। এতে যারা আমার সাথে সম্পৃক্ত আছেন সবাইকে জানাচ্ছি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা।

    বিশেষ অতিথি এম এ মতিন বলেন, যৌতুক ও মাদকের আগ্রাসন থামাতে হলে বিদ্যমান আইনের কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে বিদ্যমান আইনকে যুগোপযোগী, কার্যকর ও বাস্তবায়নযোগ্য করতে হবে। বিশেষ অতিথি মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সচিব মোহাম্মদ জামাল উদ্দিন বলেন, যৌতুক দেয়া নেয়া বন্ধে গণঘৃণাবোধের বিকল্প নেই। যৌতুক দেয়া-নেয়া দুটোই সমান অপরাধ গণ্য করলে এই সমস্যা থেকে নিষ্কৃতি মিলতে পারে।

    বিশেষ অতিথি ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক সামীম মোহাম্মদ আফজাল বলেন, যৌতুক ও মাদকের ছোবল থেকে সত্যিকার অর্থে মুক্তি পেতে হলে পরিবার ও সমাজ থেকেই আন্দোলনের সূচনা করতে হবে। আমরা সবাই নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ বলেই যৌতুকের অভিশাপে দেশে গরিবদের আহাজারি থামাতে পারছি না।

    মাদক নির্মূলেও আমরা যথেষ্ট সোচ্চার নই। যৌতুক ও মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর ভূমিকার পাশাপাশি আলেম ও ইমাম সমাজকেও অগ্রণী ভূমিকা রাখার তাগিদ দেন তিনি। মূল প্রবন্ধে অধ্যক্ষ আবু তালেব বেলাল যৌতুক ও মাদকের নানা ক্ষতির দিক, এ ব্যাপারে কী করণীয়, মাদকের উৎস বন্ধ করা, মিয়ানমার টেকনাফ সীমান্তে ইয়াবা আসা থামাতে সেনাবাহিনীকে দায়িত্ব দেয়াসহ নানা প্রস্তাবনা তুলে ধরেন।

    বিশেষ অতিথি তিনি বলেন, মাদকের উৎসে হাত না দিলে এর থেকে নিস্তার মিলবে না। আর যৌতুকের ভয়াবহতা থেকে লক্ষ লক্ষ গরিব পরিবার থেকে বাঁচতে সরকারের পাশাপাশি সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে জোরালো ভূমিকা পালন করে যেতে হবে। সেমিনার প্রস্তুতি কমিটির সদস্য সচিব মাওলানা আবদুল হাকিম এবং আবু নাছের মুসা এর যৌথ স ালনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সংগঠনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব মাষ্টার মোহাম্মদ আবুল হোসেন।

    সেমিনারে উপস্থিত ছিলেন আন্জুমানে রজভীয়া নূরীয়া ট্রাস্ট এর সেক্রেটারি এডভোকেট আবদুর রশিদ দৌলতি, সংগঠনের কাতার সভাপতি কাজী মুহাম্মদ ফোরকান রেজা, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল গণি, এডভোকেট ইসলাম উদ্দিন দুলাল, অধ্যক্ষ জাফর আলম হেলাল, অধ্যক্ষ মোস্তাক আল কাদেরী, বাংলাদেশ ইসলামী যুবসেনা সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোঃ আবু আজম, মদিনা স্টার গ্রুপ এর চেয়ারম্যান গোলাম মাহমুদ ভূইয়া মানিক।

    আরও উপস্থিত ছিলেন,বিশিষ্ট আইনজীবি এডভোকেট ইকবাল হাসান, বাংলাদেশ ইসলামী ছাত্রসেনা সভাপতি এইচ এম শহীদ উল্লাহ, হাজী সৈয়দ মুহাম্মদ সেলিম, মুহাম্মদ আবুল হাসান, সৈয়দ মুহাম্মদ আবু আজম, অধ্যাপক এমরানুল ইসলাম, নুরুল্লাহ রায়হান খান, মুহাম্মদ ইমরান হোসেন তুষার, মোঃ মিয়া জোনাইদ, মাওলানা মুহাম্মদ আবদুল কাদের রজভী, মোঃ জাহিদুল হাসান রুবাইত, মোঃ তারেক আজিজ, মোঃ ফরিদুল আলম, রজভীয়া নূরীয়া ইসলামি সাংস্কৃতিক ফোরাম এর সভাপতি শায়ের মুহাম্মদ মাছুমুর রশিদ কাদেরী, এস এম ইকবাল বাহার চৌধুরী, মোঃ সাইফুলসহ সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।