ডা.সারমিন সুলতানার ভুল চিকিৎসায় গর্ভের শিশু কবরেঃমৃত্যুর দোয়ার থেকে ফেরা “মা”

    1
    207

    আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,২৬আগস্ট,সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি : একজন লোভি চিকিৎসকের কারণে প্রায় সাড়ে ৩ বছরের আমার সকল ত্যাগ, তীতিক্ষা, সাধনা, আর্থিক ইনভেস্টমেন্ট, কয়েকটি মানুষের বহুদিনের লালিত সুখস্বপ্ন, আশা, ভরসা, স্নেহ, মমতা, ভালবাসার কবর হলো। নারায়ণগঞ্জের চাষাড়ায় মেডিনোভা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিয়মিত বসেন ডা. সারমিন সুলতানা (গাইনি বিশেষজ্ঞ) যার তত্বাবধানে গত সাড়ে ৩টি বছর আমি ছিলাম। যার চিকিৎসা চলাকালীন আড়াই বছর আগে এভাবেই একটি সন্তানের মা হতে যেয়েও তাকে হারাতে হয়েছে। এর পর থেকে সেই চিকিৎসকেরই নিয়মিত ট্রিটমেন্টে আজ দীর্ঘ আড়াই বছরের সাধনায় আমি ফের মা হতে চলেছিলাম। কিন্তু আবারো সেই একই ঘটনা! তবে এবারের ঘটনাটা একেবারে মারাত্মক। একটি ৫ মাসের পরিপূর্ণ শিশুর কবরে যাওয়া এবং মায়ের মৃত্যু দোয়ার থেকে ফেরার কাহিনী। আমি নিজে যদি চিকিৎসা বিজ্ঞানের সবকিছু জানতাম তাহলে তার কাছে কেনো যেতাম? সে জানত- আমার কেসহিস্ট্রি।

    তাছাড়া, ওই ব্যাথাটা নিয়ে সময় থাকতেই আমি তার কাছে গিয়েছিলাম (১৬ আগস্ট)। কিন্তু তিনি বরাবরের মতই অনেকগুলো টাকার একগাদা টেস্ট (যা তারই ল্যাব থেকে করতে হবে) দেন, আর রিপোর্ট হাতে পেয়ে বলেন- আপনারতো কোনো প্রবলেম নেই। বললাম- তাহলে এই মরণ কামড়ের মতো ব্যাথাটা হচ্ছে কোত্থেকে আপা? সে ফের আরো একগাদা ওষুধ দিলেন। এভাবে ………….দুই দিন…তিন দিন……………..এরপর (২০ আগস্ট) শেষ অবস্থা। নিজের চিকিৎসককে ফোন করেও কাছে না পেয়ে গেলাম খানপুর আমিনা খান এর ক্লিনিক(যেখানে এমনিতেই অসম্ভব রকমের বিশৃঙ্খল অবস্থা থাকে বলে সেখানে ভাল চিকিৎসা জেনেও যাইনা কখনো) কিন্তু কোথাও কোনো ডাক্তার না পেয়ে ওখানেই গেলাম। জানতে পারলাম- আমার শেষ অবস্থা সম্পর্কে। তবে ডাক্তার আমিনা খান জানালেন আমার প্রতি ডাক্তার সারমিন সুলতানার ভুল চিকিৎসার কথা। তিনি জানালেন- এই ধরনের রোগিদের জন্য আমরা শুরু থেকেই বিশেষ ধরনের ট্রিটমেন্ট দিয়ে থাকি। তাছাড়া প্লাসেন্টা (গর্ভফুল)টি ৯/১০ দিন আগেই খারাপ হওয়া শুরু হয়েছিল। অথচ- ডা. সারমিন মাত্র ৪দিন আগে টেস্ট করেও আমার প্লাসেন্টা থেকে শুরু করে সমস্ত কিছু ঠিকঠাক আছে, গর্ভের সন্তানটিও সুস্থ আছে বলে জানালেন। যার সকল রিপোর্ট আমার কাছে রয়েছে। এদিকে ক্লিনিকটি ঘুরে কয়েকজনের সাথে কোনোমতে কথা বলে দেখলামও এখানে তাদের চিকিৎসার সুব্যবস্থার কথা। বুঝলাম- কিন্তু ডা. সারমিন নিজে রোগির থেকে অর্থ হাতিয়ে নেয়ার জন্য আমার জন্য প্রযোজ্য যে চিকিৎসা ও চিকিৎসক তার বা তাদের কাছে না পাঠিয়ে দিনের পর দিন শুধু কারি কারি টাকার টেস্ট আর ভিজিটের টাকা রেখেছেন আর ভুল চিকিৎসা দিয়েছেন। দেখলাম- আমার মতো কত রোগি ওই ক্লিনিক থেকে সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সন্তানের মা হচ্ছেন। অথচ আমি? আমার কি দোষ ছিল? আমার কেসহিস্ট্রিতো ডা. সারমিন সুলতানা জানতেন। তাহলে কেনো আমার এত বড় সর্বনাশ তিনি করলেন? না জানি আমার মতো এমন আরো ক্ষতি কত জনের করেছেন তিনি। তার উচিত ছিল- সে যে চিকিৎসা না জানেন তার জন্য প্রযোজ্য চিকিৎকের কাছে তার রোগিকে ট্রান্সফার করা। তাই নয় কি?

    যাই হোক, এরপর সেখানে একটা জীবন-মরণ যুদ্ধ চলল কয়েক ঘন্টা ধরে…এরপর সমস্ত কিছু শেষ। কোনো মতে আল্লাহ সহায় ছিলেন বলে এবং তাদের চেস্টায় বেঁচে উঠলাম। হারালাম অনাগত সোঁনার টুকরা ছেলে সন্তানটাকে। কিন্তু শেষ হলোনা ওই চিকিৎসালয়ের সেই বহুবছরের সুনামধন্য অভিজ্ঞ ডাক্তার আমেনা খানের পোষা কিছু এসিসটেন্ট নামধারী আন্ডার মেট্রিক কিছু পিয়ন ক্যাটাগড়ির মেয়ের একের পর এক বিরক্তিকর আচরন। রোগির প্রতি কোনো ধরনের সেবা না করেও চাহিদা অনুযায়ী টিপস এর জন্য ওদের নোংরা আচরন ও বাক্য বিনিময়। শুধু আমার মতো রোগিই না, সাধারন নিয়মিত চেকআপ এর জন্য আসা রোগিদের সাথেও ওদের নোংরা ভাষা ও আচরন সত্যিই চোখে পড়ার মতো। যতদিন গেলাম, একই অবস্থা দেখলাম। ওদের এই ধরনের আচরন দেখে চিকিৎসা যতই ভাল হোকনা কেনো একজন রোগি কতটা সুস্থ অবস্থায় ওখান থেকে বেরোতে পারে আমি নিজে তার সাক্ষি। এদিকে ডাক্তার সাহেবার এক্ষেত্রে কোনো ভূমিকাই নেই লক্ষ করলাম। তাছাড়া- অন্য কোনো চিকিৎসালয়ের মতো সিরিয়াল মেইনটেইন করেও তারা রোগি দেখছেন না। একেবারে হযবরল অবস্থা যাকে বলে। জানিনা- এ দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসালয়গুলো কবে রোগিদের উপযোগি করে গড়ে উঠবে। কবে একজন রোগি সত্যিই সঠিক চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরতে পারবেন। তবে এ কথা অনস্বীকার্য যে- প্রথমত আল্লাহর অশেষ রহমত এবং ডা. আমেনা খান এর ক্লিনিকে চিকিৎসা না নিলে আজ আমি আর এ কথাগুলো লিখতে পারতাম না। নিজের ছেলেটার মতো নিজেও কবরে গভীর ঘুমে ঘুমিয়ে থাকতাম। আল্লাহ সকলের ভাল করুন। তবে এই ধরনের চিকিৎসক ও চিকিৎসালয়ের কঠোর থেকে কঠোর বিচার হোক। যারা টাকার জন্য মানুষ মারতেও দ্বীধাবোধ করেন না।লেখক : সোনিয়া দেওয়ান প্রীতি, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ভুক্তভোগি