নিরুপায় আধিবাসী, প্রশাসন নিরব
আমারসিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,৮আগস্ট,রেজওয়ান করিম সাব্বির: সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার আধিবাসী সম্প্রদায়ের শ্বশান ঘাট কেটে বালু উত্তেলান করছে প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ী চক্র। বাঁধা দেওয়ায় প্রাণনাশ সহ দেশত্যাগের হুমকিদেয় চক্রটি। উপজেলা প্রশাসনের কাছে আবেদন করেও প্রতিকার পাচ্ছে না আধিবাসী সম্প্রদায়ের ৩৫টি পরিবার।
সরে জমিনে আধিবাসি সম্প্রদায়ের লোকজনদের সাথে আলাপকালে এবং এলাকাঘুরে দেখাযায়- জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গোয়াবাড়ী গ্রামের সংখ্যালঘু আধিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজান বৃটিশ শাসনামল থেকে বড়গাং নদীর পার্শ্ববতী শ্বশানঘাটে তাদের পরিবারের মৃত স্বজনদের সৎকার করে আসছে। সম্প্রতি নদী ভাঙ্গনের ফলে নদীর তীরবর্তী শ্বসানঘাট এলাকায় বালুবের হয়। আর বালুর প্রতি ফেরীঘাট এলাকার প্রভাবশালী বালু ব্যবসায়ীদের লোলুপদৃষ্টি পড়ে বালু উপর। তারা দল বদ্ধ হয়ে প্রতিদিন প্রায় ২শতাধিক নৌকা যোগে দিন-রাত সমান ভাবে আধিবাসী সম্প্রদায়ের শ্বসানঘাট কেটে বালু উত্তোলন করছে।
সংখ্যালঘু আধিবাসী সম্প্রদায়ের লোক তাদের বাপ দাদার ও আত্মীয় স্বজনের স্মৃতি বিজাড়িত শ্বসানঘাটটি রক্ষার জন্য বালু সংগ্রহকারীদের বাঁধা দিয়ে বাঁশ পুতেও রক্ষা করতে পারছেনা। শ্বশানঘাট রক্ষার জন্য শ্রমিকদের বাঁধা দিতে গেলে উল্টা আধিবাসীদের বিতাড়িত করে দিচ্ছে ব্যবসায়ীরা। বালু উত্তোলনে বাঁধা দিতে গেলে তাদেরকে প্রাণনাশের হুমকীসহ দেশে ত্যাগের হুমকী প্রতিনিয়ত দিয়ে যাচ্ছে প্রভাবশালী ব্যাবসায়ীরা।
এদিকে ব্যবসায়ীদের অত্যাচারে অতিষ্ট হয়ে আধিবাসী সম্প্রদায়ের কুমেন বুনার্জি, বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেন্দ্র বুনার্জি, বিরেন্দ্র বুনার্জি, জতিশ বুনার্জি, সমরাট বুনার্জি, বিপন বুনার্জি, সরিন্দ্র বুনার্জি, যমুলা মহালী, শান্তি বুনার্জি, মেঘনাথ বুনার্জি বাদী হয়ে গত ১৪ জুলাই ২০১৪ইং তারিখে জৈন্তাপুর উপজেলা নির্বাহী বরাবরে আবেদন করেও কোন প্রতিকার পাচ্ছেন না। আধিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজনের সাথে আলাপকালে তারা বলে- গুয়াবাড়ী এলাকায় আমরা পূর্ব পুরুষ থেকে প্রায় ৩৫টি পরিবার বসবাস করে আসছি। সম্প্রতি ২০১০সন থেকে ভুমি খেকু চক্রে আমাদের পূর্বপুরুষের জমি দখলে নিতে মরিয়া হয়ে উঠে। আর বর্ষা মৌসুম হলেই জোর পূর্বক আমাদের শ্বশান ঘাটে কেটে বালু উত্তোলন করে আসছে ব্যবসায়ীরা। এভাবে চলতে থাকেলে অচিরেই আমরা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাব।
এবিষয়ে স্থাণীয় আধিবাসীর জনগোষ্ঠির উন্নয়ন নিয়ে কাজ করে আসা বেসরকারী উন্নয়ন সংস্থা একডো’র নির্বাহী পরিচালক ল´িকান্ত সিংহ জানান- অধিক মুনাফা লাভের আশায় প্রভাবশালী ব্যবসায়ীরা নিরিহ আধিবাসী জনগোষ্টিকে বিলুপ্ত করে তাদের সম্পত্তি দখল করতে এরকম অপকর্ম চালাচ্ছে। এছাড়া স্থানীয় প্রশাসনের সদ্দিচ্ছা না থাকার ফলে বার বার আধিবাসীরা নির্যাতনের শিকার হতে হচ্ছে। আমি আশাকরি স্থানীয় উপজেলা প্রশাসন জোরালো প্রদক্ষেপ না নিলে এরকম ঘটনা অহরহ ঘটবে। তিনি আধিবাসী সম্প্রদায়কে টিকিয়ে রাখতে স্থানীয় প্রশাসনের সহযোগীতার কামনা করেন।
এবিষয়ে নিজপাট ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ইন্তাজ আলী বলেন- আমি অনেকবার ব্যবসায়ীদের জানিয়েছি আধিবাসী সম্প্রদায়ের শ্বশানঘাট হতে বালু উত্তেলন না করার জন্য। কিন্তু তারপরেও ব্যবসায়ীরা বালু উত্তোলন করছে। তিনি শ্বশানঘাট রক্ষার্থে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে দ্রুত আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
এবিষেয় উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ খালেদুর রহমানের সম্মুখে ভিডিও চিত্র উপস্থাপন করা হলে তিনি বলেন- আমি আধিবাসীদের পক্ষে থেকে অভিযোগ পাওয়ার পর পর ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সহকারী কমিশনার(ভূমি) শেখ মোঃ শহিদুল ইসলামকে নির্দেশ প্রদান করেছি। তিনি সরেজমিন পরিদর্শন করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করবেন।
এবিষয়ে উপজেলা সহকারী কমিশনার(ভূমি) শেখ মোঃ শহিদুল ইসলামের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি জানান- আধিবাসী সম্প্রদায়ের লোকজন আমাদের ঐতিহ্য। তাদের রক্ষার্থে শিঘ্রই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।