জৈন্তাপুরে মাতৃত্বকালীন ভাতার অর্ধেক ইউপি সদস্যাদের পেটে

    0
    215

    আমার সিলেট টুয়েন্টিফোর ডটকম,০৫জুন,রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর (সিলেট) প্রতিনিধিঃ  জৈন্তাপুরে মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রাপ্তিতে মহিলা ইউপি সদস্যরা জোর পূর্বক উপজেলা মহিলা কর্মকর্তার ও ইউপির নামে চাঁদা আদায় করে নিচ্ছে। প্রতিবাদ করলে অন্যসকল ভাতা বন্ধের হুমকী প্রদান করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

    আজ ৫ জুন দুপর ১২টায় জৈন্তাপুর উপজেলার ৫নং ফতেহপুর ও ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের ৯৮জনের মধ্যে মাতৃত্বকালীন সুবিধাভোগী মহিলারা ভাতার টাকা উত্তোলন করতে আসে জৈন্তাপুর উপজেলা সদরস্থ বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক জৈন্তাপুর শাখায়।

    গোপন সংবাদের ভিত্তিত্বে জানা যায় ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়ন পরিষদের ৪-৫-৬নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সুভাসিনী রানী নাথ এবং ৭-৮-৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সাদিকা বেগম ব্যাংকের সম্মুখে উপস্থিত হয়ে মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী মহিলাদের নিকট হতে জোরপূর্বক ভাবে ইউনিয়ন এবং উপজেলা অফিসারের খরচের নামে ১হাজার ২শত ৫০টাকা করে চাঁদা উত্তোলন করছে।

    ঘটনাস্থলে সংবাদকর্মীর উপস্থিতি টের পেয়ে ৭-৮-৯নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সাদিকা বেগম কেটে পড়ে। কিন্তু কোন কিছু বুঝে উঠার আগেই ৪-৫-৬নং ওয়ার্ডের মহিলা সদস্য সুভাসিনী রানী নাথ চাঁদা আদায়ের সময় ক্যামেরা বন্ধি হন।

    প্রতিবেদকের কাছে মাতৃত্বকালীন ভাতাভোগী জৈন্তাপুর উপজেলার ৬নং চিকনাগুল ইউনিয়নের ৪নং ওয়ার্ডের কহাইগড় ২য় খন্ডের আমির উদ্দিনের স্ত্রী জাকিয়া বেগম তার ২মাসের কন্যা শিশু রোহামাকে নিয়ে ভাতা উত্তোলন করতে আসে, একই এলাকার বাদশা মিয়ার স্ত্রী তাহমিনা বেগম তার ৮মাসেন শিশু কন্যা রুমাকে নিয়ে ভাতা উত্তোলন করতে আসে, এমনি ভাবে ভাতা উত্তোলন করতে আসেন ময়নুউদ্দিনের স্ত্রী রহিমা বেগম ১০মাসের শিশু লোকমান কে নিয়ে, হেলাল আহমদের স্ত্রী সালমা বেগম তার ২মাসের শিশু সাফিয়াকে নিয়ে।

    আলাপকালে তারা প্রতিবেদককে জানান- মাতৃত্ব ভাতা পাওয়ার জন্য প্রথমে আবেদন বাবত আমাদের নিকট হতে ইউপি সদস্যারা ৫শত টাকা করে অগ্রিম নিয়েছে যা উপজেলায় দিতে হবে বলে জানান। পরবর্তী আজ ভাতা উত্তোলন করে ব্যাংক হতে বাহির হওয়ার পথে ৪নং ওয়ার্ডের ইউপি চৌকিদার আব্দুর রহিমের মাধ্যমে আমাদের গতিপথ রোধ করে মহিলা সদস্যা জন প্রতি ৫শত টাকা এবং চৌকিদার ২৫০টাকা করে দিতে হয়েছে। ২দফায় আমরা তাদেরকে মোট ১হাজার ২শত ৫০টাকা করে চাঁদা দিয়েছি। আমরা চাঁদা না দিলে পরবর্তীতে আর কোন ভাতাদীর সুযোগ-সুবিধা দেওয়া হবে না এবং পরিবারের অন্য যারা সুবিধা পাচ্ছেন তাদের সুবিধা বন্দ করে দেওয়া হবে বলে চৌকীদারের মাধ্যমে হুমকী দেন ইউপি সদস্যারা। আমরা একান্ত বাধ্য হয়ে তাদের দাবী অনুযায়ী চাঁদা দিয়েছি।

    চাঁদা আদায়কালে ইউপি সদস্যা সুভাসীনী রানী নাথকে ছবি তুলার একপর্যায় প্রতিবেদকের পরিচয় তিনি জানার পর বলেন টাকা গুলো ভাতা ভোগীরা উপহার হিসাবে আমাদেরকে দিয়েছে কোন চাঁদা নেই নাই। ভাতাভোগীদের বক্তব্যের কথা বললে তিনি বলেন- তাদের টাকা ফেরত দিয়ে দিবেন।

    বিষয়টি জানতে উপজেলা জৈন্তাপুর উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা তাহমিনা বেগমের সাথে মোবাইল ফোনে আলাপকালে তিনি বলেন- আমরা বিনা খরছে তাদের যাবতীয় কাজ করে দিয়েছি। শুধুমাত্র ১০টাকা মূল্যে তাদেরকে কৃষি ব্যাংকে একাউন্টের করে দেওয়া হয়েছে। কারো নামে চাঁদা আদায়ের বিষয় আমাদের জানা নেই। বিষয়টি খোঁজ খবর নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

    চিকনাগুল ইউপি চেয়ারম্যান আমিনুর রশিদ সিলেটে থাকায় মোবাইল ফোনে প্রতিবেদককে জানান- আমার পরিষদ হতে এসকল কাজে কোনরুপ অর্থ লেনদেন করার উপর নিষেদাজ্ঞা রয়েছে। কেউ এই বিষয় কিছু করে থাকলে ইউনিয়ন পরিষদ বিষয়টি খতিয়ে দেখবে। ঘটনা সঠিক থাকলে সংবাদ প্রকাশে আমার কোন আপত্তি নেই।

    এবিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী অফিসার মৌরীন করিম প্রতিবেদককে বলেন- কিভাবে একজন ইউপি সদস্যা মহিলা হয়েও একজন মায়ের কাছ হতে চাঁদা আদায় করছে ভাবতেও অবাক লাগে। মাতৃত্বকালীন মহিলাদের কাছ হতে চাঁদা নেওয়া হয় এর চেয়ে লজ্বার বিষয় কিছুই নেই। আমি বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেছি।